ব্রিটেনের বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাষ্টির বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটার্রাস এসোসিয়েশন ( বিসিএ) বর্ণাঢ্য আয়োজনে তাদের ১৪তম বিসিএ এওয়ার্ড প্রদান করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাষ্ট্রির নানা সাফল্য বিশেষ করে রেষ্টুরেন্ট এবং শেফদের আলোকিত যোগ্যতার স্বীকৃতি স্বরপ বিসিএ ধারাবাহিকভাবে এই সম্মাননা এওয়ার্ড প্রদান করে আসছে।
আগামী ২৭ অক্টোবর, রবিবার বিসিএ’র ১৪তম এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তিনটি ক্যাটাগরীতে বিসিএ এওয়ার্ড ২০১৯ প্রদান করবে। এওয়ার্ড তিনটি হলো-বিসিএ রেষ্টুরেন্ট অফ দ্যা ইয়ার, বিসিএ শেফ অফ দ্যা ইয়ার এবং বিসিএ অনার অফ দ্যা ইয়ার। এছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের কারী ইন্ড্রাষ্টির নানা কাজে সহযোগিতার জন্য স্বীকৃতি স্বরপ বিশেষ সম্মাননা এওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
এ উপলক্ষে ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ২টায় লন্ডনের তারকা হোটেল -ম্যারিয়েট হোটেল এ এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ তম বিসিএর এওয়ার্ড ২০১৯ কে সামনে রেখে বিসিএর নানা আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
বিসিএ এওয়ার্ড এর অংশ হিসাবে বিসিএ ব্রিটেনের বিভিন্ন রেষ্টুরেণ্ট এবং শেফদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই সর্ট লিষ্ট করে সেরাদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
সেরাদের বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য বিসিএর ১৪তম এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে কারী ইন্ড্রাষ্ট্রির বিভিন্ন শাখার বিশিষ্টজন এবং ব্রিটেনের সেলিব্রেটি পারসনালিটিসদের উপস্থিতিতে প্রদান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, এই বছরের পুরষ্কারের শিরোনাম হচ্ছে- ‘বিসিএ: দ্য হোম অফ গ্রেট ব্রিটিশ কারি’। এওয়ার্ড অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে বিসিএ কারী ইন্ড্রাষ্টির বিবদমান নানা সমস্যা এবং সম্ভাবনার একটি মৌলিক বার্তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে চায়। ১২,০০০ এরও অধিক ব্রিটিশ বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট এবং ক্যাটারার্সদের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তিশালী সংগঠন বিসিএ মনে করে দীর্ঘদিন থেকে চলমান ‘ব্রেক্সিট ইস্যু’ কারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পগুলোকে প্রায় পঙ্গু করে দিয়েছে । অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, ব্রিটেনের রাজনীতিবিদগণ এই একটি বিষয়ে মনোনিবেশ স্থির করে রেখেছেন, অন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। এই অনিশ্চয়তা ব্রিটেনের কারি শিল্পকে প্রায় ধংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসছে।
বিসিএ দীর্ঘদিন থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহে কারীশিল্পের ষ্টাফ সংকট সমস্যা নিরসনের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। যাতে করে কারী ইন্ড্রাষ্টি বিবদমান সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠে ব্রিটেনের ‘কারী লাভারস‘দের কাছে এর স্বাদ পৌছি দিতে এবং সর্বপরি জাতীয় অর্থনীতিতে আরও জোরালো অবদান রাখতে পারে।
কারী ইন্ড্রাষ্টির সমস্যা, দাবী দাওয়া বাস্তবায়নে বিসিএ‘র বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়- বিসিএ ২০১৮ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে ‘সেইভ দ্যা কারী’ শিরোনামে একটি বিশাল বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং স্থানীয় এমপিদের কাছে স্বারকলিপি প্রদান করে। বিক্ষোভে কারীশিল্প সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল।
হোম সেক্রেটারীর ‘বিন্দালু ভিসা‘র পরিকল্পনা– বিসিএ‘র আন্দোলনের আরেক বিজয়
গত ৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার সেক্রেটারী প্রীতি প্যাটেল ঘোষণা করেছেন যে, তিনি দক্ষ শেফদের উপর ইমিগ্রেশন বিধি নিষেধ প্রত্যাহারের পরিকল্পনা প্রকাশ করবেন। তিনি ব্রিটেনের রেষ্টুরেন্টগুলোকে বাচাঁতে ’বিন্দালু ভিসা’ নামে অভিহিত করেছেন।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রসচিব প্রীতি প্যাটেল নতুন পয়েন্ট ভিত্তিক ইমিগ্রেশন সিস্টেম প্রবর্তন করবেন। এবং রেষ্টুরেন্টগুলো যাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ শেফ আনতে পারে সেদিক বিবেচনায় রেখে ইমিগ্রেশনের নিয়মগুলোতে পরিবর্তন করছেন। বিসিএ মনে করে প্রীতি প্যাটেল এর ঘোষনা সংগঠনটির দীর্ঘ লবিং ও আন্দোলনের আরও একটি বিজয় ।
এছাড়াও বিসিএ কারীশিল্পের সমস্যা থেকে উত্তোরণে সরকারের কাছে সুনিদৃষ্ট প্রস্তাবনা রেখে আসছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয় , বিসিএ চায় সরকার নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জরুরীভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধান করুক:
১.বিসিএ মনে করে সর্ট ওক্যুপেশন লিষ্ট এ লিপিবদ্ধ তালিকাতে স্কিলড স্টাফ এর বার্ষিক বেতন ২৯,৫৭০ পাউন্ড থেকে অবিলম্বে বেতনের উপর আরোপিত ‘থ্রেশহোল্ড’টি হ্রাস করা জরুরী। একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি একটি অবাস্তব সিদ্ধান্ত। বিসিএ মনে করে বার্ষিক আয় ২০,০০০ পাউন্ড এর মধ্যে ‘থ্রেশহোল্ড’ নির্ধারণ জরুরী।
২. বিসিএ ‘ডকুমেন্টহীন‘ কর্মীদের ‘ওয়ার্ক রিপ্লেইমেন্ট’ এর আওতায় এনে তাদেরকে কারী ইন্ড্রাষ্টিতে কাজ করার সুযোগ দেবার জোর দাবী জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশি কারী শিল্পের সংকট সময়ে এই উদ্যোগ গ্রহন করলে কারীশিল্পের বিদবমান ষ্টাফ সংকট হ্রাস পাবে বলে বিসিএ মনে করছে।
৩. বিসিএ কারী শিল্পের দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জরুরী ভিত্তিতে একটি ন্যাশনাল এপেন্ট্রিশীপ স্কিম গ্রহনের আহবান জানাচ্ছে। যেখানে বিভিন্ন দেশের জাতিগত খাবার তৈরী , সরবরাহে বিনিয়োগ এবং সুনিদৃষ্ট কাজের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এটি স্থানীয় মানুষের জন্য ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানও তৈরি করবে। এ বিষয়ে বিসিএ সরকারের সাথে আন্তরিক ভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
সংগঠনের সভাপতি এম এ মুনিম বলেছেন, ‘এই বছর বিসিএ‘র এওয়ার্ড এর শিরোনাম হলো- ‘বিসিএ: দ্যা হোম অফ গ্রেট ব্রিটিশ কারি’। আমরা বিশ্বাস করি কারী শিল্পের মাধ্যমে আমরা ব্রিটেনের খাবার সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছি। এবং এই শিল্পের আলোকিত দিকগুলো মূলধারায় তুলে আনতে এটি হচ্ছে ধারাবাহিক কাজের অন্যতম অংশ।
বিসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল মিটু চৌধুরী বলেছেন: ব্রিটেনে অর্থনীতিতে বাংলাদেশী কারী শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা একটি স্বীকৃত বিষয়। এই শিল্প এখন ব্রিটেনের মূলধারার খারার সংস্কৃতিতে আলোকিত ভাবেই বিবেচিত হচ্ছে। এই অর্জনের পিছনে রেষ্টুরেন্ট ব্যাবসায়ী এবং ষ্টাফদের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা তাদের অর্জন এবং নতুন নতুন উদ্ভাবিত কারী ডিসগুলোও মূলধারায় প্রকাশ করতে নিরন্তর প্রয়াস চালাচ্ছি।
বিসিএ’র প্রধান কোষাধ্যক্ষ, সাইদুর রহমান বিপুল বলেছেন, দীর্ঘদিন থেকে চলমান ‘ব্রেক্সিট ইস্যু’ কারণে বর্তমানে অন্যান্য ব্যাবসার মতো ব্রিটিশ কারীশিল্প কঠিন সময় পার করছে। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসাবে বিবেচিত কারীশিল্পের সংকট সময়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। আসন্ন বিসিএ ১৪তম এওয়ার্ড বাংলাদেশী কারীশিল্পের আলোকিত দিকটিই তুলে ধরতে অগ্রনী ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এই শিল্পে জড়িতদের মধ্যে মৌলিক প্রতিযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে নতুন নতুন ম্যানু এবং দক্ষ শেফ এবং বিভিন্ন শাখার দক্ষ স্টাফ তৈরী হবে।
সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন বিসিএ এর সেক্রেটারী জেনারেল মিটু চৌধুরী, শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি এম এ মুনিম, লিখিত বক্তব্য পাঠ ও প্রশ্ন উত্তরপর্ব পরিচালনা করেন প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চিফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুল, সাবেক প্রেসিডেন্ট এম কামাল ইয়াকুব, পাশা খন্দকার এমবিই, বিসিএ এওয়ার্ড কমিটির জয়েন্ট কনভেনার হেলাল মালিক, শেফ বাচাই কমিটির প্রধান আতিক রহমান. লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব এর সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, বিসিএ’র অর্গানাইজিং সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম, কোবরা বিয়ারের সিনিয়র ডাইরেক্টর স্যামসন সুহেল, লোলো ইট এর ল্যে জোন্স, কিং ফিশার এর সিনিয়র ডাইরেক্টার মিষ্টার পাটেল
এই বছরের বিসিএ পুরষ্কারগুলোর স্পন্সরা হলেন – কোবরা বিয়ার, কিংফিশার বিয়ার, সুপার পোলো, শেফ অনলাইন, লোলো ইট, স্কোয়ার মাইল, কানসারা. গান্ধি ওরিয়েন্টাল, ব্র্যান্ডপ্যাক্স, জাইরো ফুডস লিমিটেড, ঢাকা রিজেন্সি, রাধুঁনি, পেইটাপ, অ্যারোমা আইস ক্রীম,বাংলা টাউন ক্যাশ এন্ড কারী, হ্যাপোসা ও মধুস।
আরও পড়ুন:
বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিসিএ‘র ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত