ব্রিটেনে কারী ইন্ড্রাষ্ট্রির বৃহৎতম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির আনুষ্ঠানিক দায়িত্বগ্রহন অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর সোমবার লন্ডনের অভিজাত মে ফেয়ার ভ্যানুতে ব্রিটেনের কারী ইন্ড্রাষ্ট্রি সহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজন ,রাজনৈতিক, সামাজিক এবং কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আয়োজনটি এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
বিকাল ৬টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল- অতিথিদের সাথে বিসিএ নেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা বিনিময়, সংগঠনের নানাবিদ কার্যক্রমের উপর নির্মিত ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শন, আলোচনা ,সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নানা পদের খাবারে রাতের খাবার পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে বিসিএ‘র ব্রিটেন জুড়ে ১৫টি রিজনের নেতৃস্থানীয় সহ বিসিএ এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তব্য রাখেন, বিসিএর প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম , সেক্রেটারী জেনারেল মিটু চৌধুরী, চিফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুল, বিসিএর সাবেক সভাপতি এম কামাল ইয়াকুব, বজলুর রশীদ এমবিই, পাশা খন্দকার এমবিই, সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ওলি খান, বিসিএ প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহমুদ হাসান এমবিই, বাংলাদেশ হাই কমিশনের কমার্শিয়াল কনস্যুলার এস এম জাকারিয়া হক, বিসিএ‘র অর্গানাইজিং সেক্রেটারী সাইফুল আলম, কোবরা বিয়ার এর সেলস ডাইরেক্টর সামসন সোহেইল, কিংফিশার বিয়ার এর হেড অফ সেলস এডরিন ডেবলিন,লোলো ইট এর সিইও লেন জোনস, সেফ অনলাইনের আক্তার হোসাইন, স্কয়ার মাইল ইন্সুরেন্স এর ডেভিডে র্যো সটন,কানসারা চকলেট এর নীল কানসারা,ঢাকা রিজেন্সির মুসলেহ আহমেদ, এনটিভি ইউরোপ এর সাবরিনা হোসেইন প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ব্রিটেনে বাংলাদেশী কারী শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের ধারাবাহিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রসংশা করে বলেন- যে কোন কাজে মেধা, একাগ্রতা এবং দায়িত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ধারাবাহিক কাজ করলে যে সাফল্য অনিবার্য- বিসিএ তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বিসিএ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ব্রিটেনে বাঙালি কমিউনিটিতে কারী শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রসরমান কাজে ভূমিকা রেখে আসছে। কারী শিল্পের বর্তমান স্টাফ সংকটসহ নানা সমস্যায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে লর্বিং এবং সংকট উত্তোরণে কাজগুলো প্রসংসনীয়।
চলতি বছরের মাইগ্রেশন এডভাইজরি বোর্ড (ম্যাক) ঘোষিত অইউরোপিয়ান দেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ ষ্টাফ আনার সুযোগ সৃষ্টির হচ্ছে সেবিষয়ে বিসিএ আন্দোলন, সংগ্রাম ও লবিংএ অগ্রনী ভুমিকায় ছিল।
জনপ্রিয় উপস্থাপিকা নাদিয়া আলীর প্রাণজ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে নবনির্বাচিত কমিটির পক্ষ থেকে ভূমিকা বক্তব্য রাখেন বিসিএ‘র সভাপতি এম এ মোনিম। তিনি বিসিএ‘র প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিসিএ’র সকল কর্মকর্তাবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ক্যাটারার্সদের বৃহৎ সংগঠনে সুনাম এবং সাফল্য ও সমৃদ্ধিতে সকলের অবদান রয়েছে।
এম এ মোনিম বলেন- কারী ইন্ড্রাষ্টি বর্তমানে স্টাফ সংকটসহ বহুবিদ সমস্যায় জর্জরিত। তারপরও এই ইন্ড্রাষ্টি টিকে আছে। ব্রেক্সিট ইস্যুর কারণে আমাদের লবিং এবং আন্দোলন সাময়িক স্থিমিত আছে। তবে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে একটুও বিচ্যুত না হয়েই কাজ করে যাবো। তিনি নবনির্বাচিত ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরী বিসিএকে কমিউনিটি বান্ধব সংগঠন উল্লেখ করে বলেন, কারী ইন্ড্রাষ্টি ব্রিটেনে বিশেষ করে বাংলাদেশী কমিউনিটির অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরীসহ নানা ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমাদের ইন্ড্রাষ্টির নানা সংকট মোকাবেলা করেই আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। জাতীয় অর্থনীতিতে ৪.২ বিলিয়ন অবদান রাখছে বাংলাদেশি কারী ইন্ড্রাষ্টি। ব্রিটেনে রাইস এন্ড কারীর নাম জানে না এমন লোক খুব কমই আছেন।
নবনির্বাচিত সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেন- এই ইন্ড্রাষ্টিতে আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে এবং সংগঠনের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা বিবদমান সমস্যা সমাধানে কাজ করবো। এবং মূলধারায় এই ইন্ড্রাষ্টির সম্ভাবনা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে কী ভাবে আরও অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে নিরলস কাজ করবে ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি।
‘আমাদের অর্জনগুলোকে ধরে রাখতে দরকার আরও জোরালো লবিং । এবং কারী শিল্পে ইতিবাচক এবং নতুন নতুন উদ্ভাবিত ম্যানু এবং ব্যাবসার আকর্ষনীয় দিকগুলো তুলে ধরা। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি এইসব কাজগুলো করবেন বলে আমার বিশ্বাস। তারা অতীতেও বিসিএর সাংগঠনিক নানা পদে দায়িত্বে থেকে এইসব কাজে অভিজ্ঞতালব্ধ’- বলেছেন বিসিএর সাবেক প্রেসিডেন্ট বজলুর রশীদ এমবিই।
সাবেক প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার এমবিই বলেন- বিসিএ‘র প্রধানতম শক্তি হলো ঐক্যবদ্ধতা। অভিজ্ঞতা এবং কাজের লক্ষ্য টিক রেখে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করতে পেরেছে বলেই বিসিএ কারী শিল্পের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন হয়ে মূলধারায় জোরালো লবিং এবং আন্দোলন ,সংগ্রাম করতে পারছে। নতুন কমিটি এই ধারাকে আরও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবার মতো যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আছে বলেই আমি তাদের কাছে বেশী আশাবাদী হয়েই থাকতে চাই।
‘ব্রিটেনে বাংলাদেশী ক্যাটারার্সদের বৃহৎ সংগঠন বিসিএ কারী শিল্পের নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছে এবং আমি খুব আশাবাদি বর্তমান এক্সিকিউটিভ কমিটি ব্রেক্সিট সমস্যা পরবর্তী সময়ে অনেক ভালো এবং সাহসী প্রদক্ষেপ নিয়ে কারী ইন্ড্রাষ্টির সংকট মোকাবেলায় কাজ করবে। তিনি নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন- বিসিএ‘র নির্বাচিত একঝাঁক অভিজ্ঞ টিম ক্যাটারার্স ও রেষ্টুরেন্ট কর্মীদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার মতো সকল যোগ্যতা তাদের আছে‘ বলেছেন বিসিএর সাবেক সভাপতি এম কামাল ইয়াকুব ।
বিসিএর সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ওলি খান বলেছেন- আমরা সত্যিকার অর্থে স্টাফ সংকট সহ নানাবিদ সমস্যায় জর্জরিত। ক্যাটারার্স এবং রেষ্টুরেন্ট কর্মীদের সমস্যাগুলো নিয়ে ব্রেক্সিট সমস্যা পরবর্তি সময়ে আরও সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট মহলে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি রেষ্টুরেন্টগুলোতে ব্যাবসাবান্ধব নতুন কৌশল এবং নতুন প্রজন্মদের ব্যাবসায়িক সাফল্যের চিত্রগুলোও প্রচারসহ তাদেরকে অনুপ্রাণীত করা দরকার।
চিফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুল বলেন, কারী ইন্ড্রাষ্ট্রির বিবদমান সমস্যা নিয়ে যেমন বিসিএ কাজ করছে,তেমনি এর সম্ভাবনা এবং সাফল্যগুলো নিয়েও সংগঠনটি অতীতের মতো ধারাবাহিক কাজ করবে। আমাদের প্রজন্মদের মাঝে কারী শিল্পের পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরে এটাকে আরও ক্রিয়েটিভ মেইনষ্ট্রিম ব্যবসাবান্ধব করতে তাদের নতুন চিন্তা এবং কাজকে আমরা ইন্ড্রাষ্টিতে সংযোগ করতে চাই। সংগঠনটি কারী শিল্পবান্ধব হয়ে আগের মতো ক্যাটারার্স এবং রেষ্টুরেন্টকর্মীদের মতামত এবং চিন্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বিসিএ‘র সবগুলো রিজিওন নিয়েই কাজ করবে।
অর্গানাইজিং সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম কারী ইন্ড্রাষ্টির সম্ভাবনা ও সমস্যাগুলো উত্তোরণে কাজ করার লক্ষ্যে ব্রিটেন জুড়ে ১৫টি রিজনে বিসিএ কে সক্রিয় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের অনেক ইতিবাচক দিক ও অর্জন আছে, আমরা সেগুলোকে মূলধারায় তুলে আনতে চাই।
অনুষ্ঠানে নতুন প্রেসিডেন্টকে ফুল দিয়ে বরণ করেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল ইয়াকুব, সেক্রেটারী জেনারেল ওলি খান,সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জামাল মকদ্দস ও মো. ফজল উদ্দিন । বিদায়ী সেক্রেটারী জেনারেলকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনামুল হক চৌধুরী ও প্রেস এন্ড পাবলিসিটি সেক্রেটারী ফরহাদ হোসনে টিপু।
নানা পদে রাতের খাবার পরিবেশনের পরে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কালচারাল সেক্রেটারী মো. নাসির উদ্দিনের পরিচালনায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী লাবনি বড়ুয়া ও শিবলু রহমান।
প্রসঙ্গত ১৪ জুলাই, রবিবার বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন এর বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা মাহমুদ হাসান এমবিই লন্ডনের হ্যোরো রোডের বিসিএ ভবনে ১১৫টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত নেতাদের নাম ঘোষনা করেন। এসময় নির্বাচন কমিশনার হিসাবে আরও দায়িত্বে ছিলেন আজিজ চৌধুরী ও জাবির মিয়া জেপি।
এম এ মুনিম প্রেসিডেন্ট , মিটু চৌধুরী সেক্রেটারী জেনারেল, সাইদুর রহমান বিপুল চিফ ট্রেজারার,অর্গানাইজিং সেক্রেটারী সাইফুল আলম, প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু, মেম্বারশীপ সেক্রেটারী ইয়ামিম হোসেন দিদার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হোন। ব্রিটেন জুড়ে ১৫টি রিজনে বিসিএ সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হয়ে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত