প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মিলান মুসলিম সেন্টারের আয়োজনে সম্পন্ন হলো বার্ষিক ‘শিক্ষা সফর ২০১৯’। এ বছর শিক্ষা সফর ছিলো ইতালির সর্ব বৃহৎ দর্শনীয় স্হান লাগো দি গার্দা এবং সাফারি পার্ক।
রাতের আঁধার কাটতে না কাটতে মিলান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে জড়ো হতে থাকে একাডেমির ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক,শিক্ষক মন্ডলি আয়োজক বৃন্দ সহ অতিথি বৃন্দ।
২৫ আগষ্ট রোববার সকাল ৯ টার সময় ভেরোনা (সাফারিপার্ক)শহরের উদ্দেশ্যে মিলান শহর ত্যাগ করে দু’টি বাস।সোনালি রোদের আলো,ঝিরিঝিরি মৃদ্যু বাতাস আর দু’পাশের সবুজ প্রান্তর সিঁথি বিলি দিয়ে ক্রমাগত ছুটে চললো বাস গন্তব্যের দিকে।পথে যেতে যেতে মাওলানা জাহিদ সাহেবের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় ইসলামিক পরিবেশনা হামদ,নাদ, গজল,কোরআন তেলাওয়াত।ছাত্র,ছাত্রীদের অত্যান্ত চমৎকার উপস্থাপনা উপস্হিত সকলকে মুগ্ধ করে।
ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বইয়ের পাতায় আর টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছে,
জিরাফ,গন্ডার,জলহস্তি,বাঘ,ভাল্লুক,উট,হরিণ নানা প্রকৃতির জীবজন্তু আজ তাঁরা বিমুগ্ধ নয়নে দেখছে সেই প্রাণী গুলোই হাতের নাগালে ঘোরাফেরা করছে।এ যেন অন্য এক জগতে প্রবেশ করেছে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা।
বাসে চড়ে পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথ বেয়ে দেখতে লাগলো হরেক রকমের জীবজন্তু। এক পর্যায় শেষ হলো দেখা ততক্ষণে সূর্যও হেলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে।
নামাজ শেষে সবাই মিলে খাবার খাওয়া শেষ হলো এবার আবার শুরু হলো অন্য একটি পার্ক দর্শনের সেখানে নির্দিষ্ট জায়গায় উন্মুক্ত বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। প্রত্যেকটি এলাকায় রাস্তা রয়েছে সাথে শক্ত লোহার জাল,কোথাও আবার কাঁচের শক্ত দেয়াল দর্শণাথীদের নিরাপত্তার জন্য। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষনের লক্ষে এবং শিশুকিশোরদের খেলাধূলার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ।সবাই ঘুরে ঘুরে দেখলো কেউ আবার ক্যামেরায় বন্দি করে রাখলো প্রকৃতির মাঝে বিচরণকৃত বিভিন্ন প্রজাতির পশু,পাখীর ছবি।
নির্দিষ্ট সময়ে বাস এবার যাত্রা শুরু করলো লাগো দিয়ে গার্দার পথে এটি ইতালির সর্ব বৃহত লেক এটির আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গ কিলোমিটার।লেকের কোল ঘেঁষে পানির ওপর দাঁড়িয়ে আছে অনেক গুলো স্হাপনা কোনটার বয়স আটশো বছর, কোনটা চারশ বছর এরকম অনেক গুলো পৌরাণিক ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল কাল স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্হাপনা গুলো।লেকের একটি জায়গায় বিশ মিটার পানির গভীর ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রয়েছে সত্যিই বিস্ময়কর।চতুর্দিক তাকালে মনে কুয়াশাচ্ছন্ন উঁচুনিচু পাহাড় আর পাহাড়।লেকের নিলাভ জলরাশি আর উর্মির নৃত্য মনোমুগ্ধকর।বিধাতার অপরুপ সৃজনতা শুধু মানুষের জন্যই সৃষ্টি করেছে।
সূর্যের মিষ্টি আলো ঠিকরে পড়ছে লেকের জলের ওপর।দূর থেকে দৃশ্য গুলো দেখে ভালো লাগায় মন ভরে ওঠে।এবার লেকের খুব কাছাকাছি বাস এসে থামলো অনেকটা ক্লান্ত শরীরে এক এক করে নামতে শুরু করলো সবাই।লেকের পাদদেশে পুলের মত তৈরি ছোট বড় অনেক কাঠের ছাদ।সবাই জড়ো হয় সেখানে। লেকের নীল পানি মৃদু বাতাসে দুলে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে। বিমুগ্ধ নয়ন আটকে থাকে লেকের মনোরম দৃশ্যাবলীর মাঝে।
লেকের পাশে সমবেত সকলের উপস্হিতিতে ছাত্র, ছাত্রীদের প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠান শুরু হলো খুব চমৎকার ভাবে উপস্হাপন করলো গজল,হামদ,নাদ,কেরাত। এর পর শিক্ষা সফরে কি শিখলো বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার মিজানুর রহমান,মিলান বাংলা প্রেস ক্লাব উপদেষ্টা তুহিন মাহামুদসহ আরো অনেকে।
এরপর বিজয়ীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষা সফরের কার্যক্রম শেষ হয়।
শিক্ষা সফরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মিলান মুসলিম সেন্টার এর ইমাম মাওলানা গাউছুর রহমান,হাফিজ সুরুজ আলি,মাওলানা জাহিদ এবং শাহ আলম ভূইয়া।
আয়োজকবৃন্দ সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান এবং আগামীতে আরও সুন্দর ও সাবলীলভাবে যাতে শিক্ষা সফরের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যায় সেজন্য সকলের প্রতি সহযোগীতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য ইউরোপের মাটিতে বেড়ে ওঠা কোমলমতি শিশুদের ইসলামিক শিক্ষা অর্জন,দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগী এবং বাঙালি জাতিস্বত্বা বিকাশের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই আয়োজন করা হয়।