অনাবিল আনন্দ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে স্পেনে ঈদ উল আজহা উদযাপন হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার স্পেনে বসবাসরত মুসলমান প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। রাজধানী শহর মাদ্রিদ, পর্যটন নগরী বার্সেলোনাসহ স্পেনের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের নামাজ আদায় করে একে অপরের বাসায় গিয়ে ঈদের কুশলাদি বিনিময় করে ঈদের দিনকে আনন্দময় করার চেষ্টা করেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটির জন্য স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় বাঙালি নবপ্রজন্মের মাঝেও ছিল ঈদকে ঘিরে আনন্দের মাতামাতি।
মাদ্রিদ:
রাজধানী মাদ্রিদে স্পেনের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ইসলামিক কালচারাল সেন্টার (এম৩০ মসজিদ, ভেনতাস) এ। সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত এ ঈদের জামাতে বিভিন্ন দেশের মুসলিম কুটনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন। এ মসজিদে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার, বাণিজ্যিক সচিব রেদওয়ান আহমেদ ও প্রথম সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম ঈদের নামাজ আদায় করেন।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত লাভাপিয়েস সংলগ্ন কাসিনো পার্কের খোলা ময়দানে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট ও ৮টা ৪৫ মিনিটে ঈদের ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত দুইটিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মরোক্ক, সেনেগালসহ কয়েক হাজার মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন। মহিলাদের জন্য ছিল নামাজের বিশেষ ব্যবস্থা। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় কাসিনো পার্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আধিক্য ছিল লক্ষ্যনীয়। ঈদকে ঘিরে কাসিনো পার্ক যেন হয়ে ওঠে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলার একটি ক্ষেত্র।
বাংলাদেশ দূতাবসের দূতালয় প্রধান এম হারুণ আল রাশিদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব খোরশেদ আলম মজুমদার, বাংলদেশ অ্যসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল ইসলাম নয়ন, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দরসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন। ‘মাস মাদ্রিদ’ এর একমাত্র মুসলিম মহিলা কাউন্সিলর সামিরা মাইসুনও এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে খুতবায় বিশ্বের সকল মানুষের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বিশেষ করে ফিলিস্তিন, কাশ্মীর সহ বিশ্বে নির্যাতিত মুসলমানদের অধিকার রক্ষা, নিরাপত্তা ও শান্তি কামনা করা হয়।
মাদ্রিদের সান ক্রিস্টোবালে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন।
বার্সেলোনা:
পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা রাভাল সংলগ্ন শাহ জালাল জামে মসজিদ, লতিফিয়া ফুলতলী জামে মসজিদ ও দারুল আমাল জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে পৃথকভাবে অনেকগুলো ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শাহ জালাল জামে মসজিদের উদ্যোগে মসজিদে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট, মসজিদ সংলগ্ন খোলা মাঠে সকাল ৮টা, মসজিদে সকাল ৯টায় ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় জামাতে মহিলারাও অংশগ্রহণ করেন।
লতিফিয়া ফুলতলী জামে মসজিদের উদ্যোগে মসজিদে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট, সকাল ৮টা ৩০ মিনিট ও মাকবা প্রাঙ্গনে খোলা ময়দানে সকাল ৮টা ৩০মিনিটে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বার্সেলোনা দারুল আমাল জামে মসজিদের তত্ত্বাবধানেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও সান্তা কলোমায় পলি ডিপোর্টিভোতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের ১টি জামাত।
বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ঈদের প্রতিটি জামাতেই ছিলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপচে পড়া ভিড়। নামাজের পর বিশেষ মোনাজাতে কাশ্মীর ফিলিস্তিন সহ মুসলিম উম্মাহ’র কল্যাণ কামনা করা হয়। নামাজ শেষে বাংলাদেশিরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন।
এছাড়াও স্পেনের টেনেরিফ, লানজারোতে, মালাগা, আলিকান্তে, মুরছিয়া, সেভিয়া, গ্রানাদাসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা মুসলিম প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের নামাজ আদায় ও আনন্দ উচ্ছ্বাসে ঈদ উল ফিতর উদযাপন করেছেন।
স্পেনের অনেকগুলো ঈদের জামাতে মহিলাদের নামাজের বিশেষ সুবিধা থাকায় বিপুল সংখ্যক মহিলা শিশুদের নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ঈদের প্রতিটি নামাজ শেষে খুতবায় নিজ নিজ দেশের শান্তি সমৃদ্ধিসহ বিশেষ করে ফিলিস্তিন, কাশ্মী, সিরিয়া সহ বিশ্বে নির্যাতিত মুসলমানদের অধিকার, নিরাপত্তা ও সকল মানুষের জন্য শান্তি ও মানবিকবোধ জাগ্রত করার জন্য দোয়া করা হয়েছে।
স্পেনে প্রকাশ্যে পশু কোরবানির নিয়ম না থাকায় স্থানীয় মাংসের দোকানগুলোতে মানুষের ছিল প্রচুর বিড়। পোশাক, পরিচ্ছদে ছিল উৎসবের বাড়তি আমেজ। নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতি সাথে ইসলামের ভ্রাত্তিত্ববোধ, সম্প্রতি এবং মানবিকবোধের স্ফোরণ পবিত্র ঈদে দেখা গেছে।
তবে, ঈদকে ঘিরে স্পেনের সবজায়গায় বাংলাদেশী প্রবাসীরা হামিখুশির মধ্যেও থাকলেও ফেলে আসা বাংলাদেশের ঈদ আনন্দের স্মৃতিরোমন্থন এবং প্রিয়জনদের কাছে না থাকার চাপা বেদনাও ছিল সকলের সাথে ছায়ার মতো।
কণ্ঠ: সুমু মির্জা