২১শে জুলাই, রবিবার নিউ ইয়র্কের প্রবাসী বাঙালিরা তীব্র ক্ষোভে ফুসে উঠেছিলো সংখ্যালঘু অধিকার নেত্রী প্রিয়া সাহার সাম্প্রদায়িক উক্তির প্রতিবাদে। মাত্র চব্বিশ ঘন্টার আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগ দেন দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। মুরব্বী থেকে তরুণ প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী। সবার মুখে ছিলো একটিই সুর ‘রুখে দাড়াও বাঙালি, অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাংলাদেশ আমাদের অঙ্গিকার’, WE WANT SECULAR DEMOCRATIC BANGLADESH, SECULAR DEMOCRATIC BANGLADESH IS OUR FAITH, প্রভৃতি লেখা প্লেকার্ড নিয়ে জমায়েত হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা। অনুষ্ঠানের বক্তাদের কন্ঠে ফুটে উঠেছিলো প্রতিবাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
বাংলাদেশী আমেরিকান ইয়াং জেনারেশন নিউ ইয়র্ক, ইউএসএ এবং প্রবাসী বাংলাদেশী অধিকার ফোরাম, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র’র উদ্যোগে নিউ ইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত ওজন পার্কের Gastula Park এ আয়োজিত প্রতিবাদী জমায়েতে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম। কমিউনিটি একটিভিস্ট ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ছরওয়ার হোসেন ও নিউ ইয়র্ক সিটি যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জুনেদ আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব নিউ ইয়র্ক ইনক’র সভাপতি বদরুল খাঁন, বিশেষ বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম ও বিশিষ্ঠ কমিউনিটি নেতা একলিমুজ্জামান নুনু।
এছাড়াও বিশিষ্ট কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট ও গীতিকার গৌছ উদ্দিন খাঁন, বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষক জালাল আহমেদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, সাবেক ছাত্রলীগনেতা ফজলে রাব্বী সেবুল, বড়লেখা ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, নিউ ইয়র্ক সিটি যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল আলম অপু, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট শাহিদ সিরাজ সৌরভ, জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগটনিক সম্পাদক জুয়েল আমিন, সাবেক সিলেট জেলা ছাত্রলীগনেতা শাহিন আহমদ স্বপন, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট হাফিজ লোদী, নিউ ইয়র্ক ষ্টেট যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আহমদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাংগটনিক সম্পাদক জুবের আহমদ, প্রমুখ।
বক্তাগণ, গত ১৮ই জুলাই হোয়াট হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হাত ধরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নির্লজ্জ মিথ্যাচার এবং এসবের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের উপর হস্তক্ষেপ করতে আবেদন জানানোর প্রতিবাদে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার মামলা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তাগণ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, প্রিয়া সাহার মিথ্যা বক্তব্যকে ক্ষুদ্রভাবে দেখার অবকাশ নেই, এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ, এজন্য গোটা বাঙালি জাতিকে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। বক্তাগণ, বাংলাদেশে আইনমন্ত্রীর প্রতি বিষোদগার ব্যক্ত করেন। তাদের কন্ঠে অনতিবিলম্বে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল ইসলামের পদত্যাগের দাবী উত্থিত হয়। তারা বলেন, অবস্থাদৃষ্টে আইনমন্ত্রী প্রিয়া সাহার পক্ষে অবস্থান গ্রহন করেছেন।
বক্তাগণ বলেন, যে দেশের ১২ শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্টি ২৫ -৩০শতাংশ সরকারী চাকুরীর অংশীদার, সে দেশ পৃথিবীর যে কোন উন্নত ও সভ্য দেশের চেয়েও সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল তা প্রমানের প্রয়োজন পড়ে না। বক্তাগণ বাংলাদেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্টতম সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের উর্বর ভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে পার্শ্ববর্তী ভারত মায়ানমার ভয় পায় বলেই তথাকথিত ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ ইস্যুকে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত ১৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াসিংটন ডিসি’তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ২৭টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। তখন তিনি অভিযোগ করে বলেন- ‘বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’
এরপর তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’ ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীলতার স্বরূপ এই প্রিয়া সাহার সাথে হাত মেলান। কারা এমন নিপীড়ন চালাচ্ছে? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা করুণকন্ঠে বলেন, ‘দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে। সবসময়।’ তাঁর বক্তৃতা টেলিভিশন চ্যানেলের কল্যানে ফেসবুক ও সংবাদপপত্রে ভাইরাল হলে দেশ বিদেশে বাঙালি জাতি জগণ্য মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালি কমিউনিটি ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। নারী পুরুষ সকলের মুখে প্রিয়া সাহার প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ পাচ্ছে। সকলেই প্রিয়া সাহার কঠোর শাস্তি প্রত্যাশা করেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এরকম ষড়যন্ত্র লিপ্ত হতে না পারেন।