কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারীকে আবার কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর আদালতে হাজির হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস।
মামলার আটদিনের মাথায় ৮ জুলাই একই আদালতের একজন ভারপ্রাপ্ত নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসুদ ব্যাপারীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন।মাসুদকে জামিন দেয়ার পর ফুঁসে ওঠে শরীয়তপুরের সুশীল সমাজ। বুধবার শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হলে মাসুদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ভিকটিম ও তার মা-বাবা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মির্জা হযরত আলী বলেন, ধর্ষণ মামলার আসামিকে ওই দিন জামিন দেয়ার বিরোধিতা করেছে রাষ্টপক্ষ। কিন্তু আদালত তা আমলে নেননি। তখন আদালতের কাছে রাষ্ট্রপক্ষ অসহায় হয়ে পড়ে। গুরুতর অপরাধের মামলার আসামিকে দ্রুত সময়ে জামিন দেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার মাসুদ আদালতে হাজির হলে জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্টপক্ষ। তখন দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক জামিন বাতিল করে মাসুদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ জুন রাতে ওই কলেজছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। জাজিরার মুলনা ইউনিয়নের একটি গ্রামে তাদের বাড়ি। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে কাজ করেন। জাজিরা পৌর এলাকার আক্কেল মাহমুদ মুন্সিকান্দি মহল্লার বাসিন্দা মাসুদ ব্যাপারী (৩১) কলেজছাত্রীর দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। ২৯ জুন বিকেলে মাসুদ তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে আসতে বলে। ওই ছাত্রী রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের কাজ শেষ করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাসুদের বাড়িতে যান। সেখানে মাসুদের পরিবারের কাউকে না দেখে ওই ছাত্রী ফিরে আসার চেষ্টা করেন। তখন মাসুদ তাকে ঘরে আটকে রাখেন।
এরপর দুই দফা তাকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে ওই ছাত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে ওই ছাত্রী সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। মাসুদের বাড়ি থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে ওই মহল্লার কয়েকজন নারী তাকে উদ্ধার করেন। তার পরিবারের সদস্যরা রাত ১০টার দিকে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করান। রাতেই তাকে বাড়ি নেয়া হয়। ৩০ জুন দুপুরে জাজিরা থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রী।
১ জুলাই আদালতের মাধ্যমে মাসুদ ব্যাপারীকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ৭ জুলাই তার জামিনের আবেদন করা হয় শরীয়তপুর জেলা আমলি আদালতে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আমলি আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জামিন ও রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নব আক্তার ইতি পরদিন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিস আপিল করেন। তিনি ওই দিনই আরেক আবেদনে আসামিরা জামিন প্রার্থনা করেন। জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মরিয়ম মুন মঞ্জুরি জামিন মঞ্জুর করে আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাসুদ ব্যাপারী আদালতে হাজির হয়। পরে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ তাকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী বলেন, মাসুদ আমার আত্মীয় হন। তারপরও ধর্ষণ করতে পিছপা হননি। আমি তার পায়ে ধরে কেঁদেছি, তারপরও রেহাই পাইনি। মামলা করার পর থেকেই চাপে রয়েছি। এরই মধ্যে মাসুদ জামিন পেয়ে যায়। এতে আমার শঙ্কা বেড়ে যায়। আমাকে মেরে ফেলে কি-না তা নিয়ে আমি হুমকিতে আছি। তাকে আবার কারাগারে পাঠানোর ফলে কিছুটা শঙ্কামুক্ত আছি। আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।
এ বিষয়ে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের শরীয়তপুরের সদস্য সচিব অমলা দাস বলেন, ভয়ঙ্কর একটি অপরাধের মামলার আসামি দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিনে মুক্ত হওয়া লজ্জা ও শঙ্কার বিষয়। এতে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। অপরাধী মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ পায়, সমাজে অবরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।