খেলা শুরুর প্রাক্কালে মাঠের অভ্যন্তরে মাশরাফিকে কমেন্টেটার যখন ‘ফাইনাল কুয়েশ্চন’ করলেন, তখন মাশরাফির নির্বিকার উচ্চারণ, হ্যাঁ এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। এ প্রশ্নে তিনি কাতর হননি বিচ্ছেদ-ব্যথায়, দর্শকদেরও যেন বুঝতে দেননি তার বেদনার চিহ্নটুকু। মাশরাফি মুর্তজার এই শেষ ম্যাচের কথা বলতে গিয়েই কমেন্টেটর বক্স থেকে বারবার উচ্চারিত হয়েছে তার নাম। ভালো অধিনায়ক, দক্ষ নেতৃত্ব প্রভৃতি শব্দে বিশেষায়িত হয়েছেন মাশরাফি বারবার।
আগের দিন মাশরাফি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। অথচ তার সঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রাণস্পর্শি সম্পর্ক আছে বলেই জানে মিডিয়ার সবাই। খুবই স্বাভাবিক বিচ্ছেদ-বেদনা। শত-সহ¯্র দিনের উচ্ছ¡াস-উল্লাস আর বাংলার আকাশস্পর্শি ক্যারিয়ার ছেড়ে অবসর নেয়া ব্যথায় তো কাতর হবেনই মাশরাফি। সেই বেদনা আড়াল করেই আগের দিন গুটিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে।
বেদনা নিয়েই মাঠে নেমেছেন মাশরাফি তার দল নিয়ে, বেদনায় কাতর হননি তিনি, বোলিং কিংবা ব্যাটিং ছিল সেই চিরচেনা মাশরাফির মতই। বেদনা কিংবা হতাশা তাকে গ্রাস করতে পারেনি এতটুকুও। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বেশ অস্বস্তিতেই ছিল তারা।
দুটো দলই খেলেছে যেন অজানা এক শঙ্কায়। বিজয়ের দুর্নিবার আকাক্সক্ষায়। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে চাপের মাঝে রেখেই খেলেছে পাকিস্তানিরা। বাংলাদেশি দর্শকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রান বাগিয়ে নেয় সরফরাজের দল।
কিন্তু তবুও ৩১৫ রান করতে গিয়ে টাইগারদের কাছে তাদের হারাতে হয়েছে ৯ উইকেট। মোস্তাফিজ এ খেলায়ও তার কৃতিত্বটুকু রাখলেন, নিয়ে নিলেন ৫ উইকেট, গত খেলার মতই।
গতকাল লর্ডস কানায় কানায় পূর্ণ হয়নি ঠিকই। ক্রিকেট পাগল দুটো দেশেরই দর্শক উপস্থিতি অন্যান্য ম্যাচের মতো ছিল না। কিন্তু তবুও হাজার হাজার টাইগার সমর্থকদের উপস্থিতিতে কেঁপেছে গ্যালারি। সাকিবের বারবার করা চারে সেই চিরাচরিত বাংলাদেশ উচ্চারণ প্রাণিত করেছে টাইগারদের। লাল সবুজের মেলা বসেছিল কাল গ্যালারিতে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে পারিবারিক বিনোদনে ছিল সেই উচ্চারণ, গর্বিত উচ্চারণ। বাংলাদেশের পারফরমেন্স নিয়ে কারো নেই কোনো খেদ, নেই কোনো অতৃপ্তি কারো। আছে শুধুই গর্বিত উচ্চারণ। এই গর্বিত উচ্চারণেই হাজার হাজার উচ্চকিত আর উচ্ছ¡সিত দর্শকদের উপস্থিতিতে বিচ্ছেদ হচ্ছে আমাদের মাশরাফির, গতকাল লর্ডসে।