সম্ভাবনাময় দেশ হিসাবে বাংলাদেশের নাম বিশ্বে যৌক্তিকভাবেই উচ্চারিত। অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের পেছনে কাজ করছে অনেক মেধাবীর শ্রম, সাধনা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে নানাবিদ শাখায় বাংলাদেশি পেশাজীবিরা কর্মক্ষেত্রে উজ্জ্বলভাবে তাদের সাফল্যের জন্য প্রকারান্তরে বাংলাদেশ-ই আলোকিত হচ্ছে।
বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশি পেশাজীবি ও শ্রমিকদের সুনাম থাকলেও বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে মনে হয় তার উল্টো। আস্থাহীনতা বা রাষ্ট্রিয় ব্যুরোক্রেসীর যাতাকলে প্রতিশ্রুতিশীল এবং মেধাবীদের উচ্চপদে বা লিডারশীপ পর্যায়ে কাজের দায়িত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে বেশ কৌশলে। এর অন্যতম কারণ হিসাবেও অবাধ দুর্ণীতির প্রসঙ্গটি বহুলভাবে প্রচারিত।
দেশে পদ্মা ব্রীজ হচ্ছে কিন্তু কাজ পেলো চায়না।
আমরা পারিনি, কারণ আমাদের টেকনোলজি নেই !
দেশে পারমানবিক পাওয়ার প্লান্ট হচ্ছে। কাজ করার দায়িত্ব পেলো রাশিয়া।বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে এখানেও টেকনোলজি নেই!
কিছুদিন আগেও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে মেঘনা ও গোমতি ব্রীজ সফল ভাবে সম্পূর্ণ হলো চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হবার প্রায় সাত মাস আগে। তবে কাজ করলো জাপানী কোম্পানী।
অভাবের জায়গাটি হলো ডিজিটালের স্লোগানে মূখরিত শুধু আওয়াজেই,টেকনোলজির এই জায়গাটিতেও আমরা ব্যর্থ।
স্মার্ট কার্ড হলো,কোটি কোটি টাকার প্রযুক্তির এই কাজটিও পেলো ফ্রান্স।অভাবের ক্ষেত্রটি আমাদের এখানেও টেকনোলজিতেই!
ই-পাসপোর্ট হলো, এখানেও কাজ পেলো জার্মানি। আমাদের টেকনোলজি নেই!
মেট্রোরেল হচ্ছে, কাজ পেলো থাইল্যান্ড,জাপানসহ আরো দুই চার দেশ।টেকনোলজি নেই আমাদের!
হতাশার করুন সুরে বলা যায় এই রকম ‘টেকনোলজি নেই’ খাত কতগুলো আছে;সেইগুলো খোঁজার টেকনোলজিও আমাদের নেই!
‘টেকনোলজি নাই’ অজুহাত দেখিয়ে বিদেশীদের কাজ দেয়া দেশটায় নতুন ১৮ হাজার মাদ্রাসা তৈরির জন্য বাজেট পাশ করা হলো। অন্যদিকে, হাজার কোটি টাকা দিয়ে মডেল মসজিদ বানিয়ে ইমাম নিয়োগের বিজ্ঞাপন এখন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েভ
পেইজে!
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এই বাজেটে টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, বিজ্ঞান ও গবেষণার জন্য কতটাকা বরাদ্দ হলো ? বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছে?
সম্প্রতি দেশে লোহার খনি পাওয়া গেছে। লোহা লক্কর তুলবেন কীভাবে! সেই টেকনোলজি কি আছে?
দেশের আপামর মানুষের উপর অর্থহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে স্কুল,কলেজ,ইউনিভার্সিটি ও কোচিং সেন্টারগুলো পরীক্ষা ফি,ভর্তি বাণিজ্যে ফি’র নামে বিপুল পরিমাণ শিক্ষিত চাঁদাবাজি করছে !
এই অর্থহীন শিক্ষাজীবন শেষ করে একটা শিক্ষার্থী কি কাজ বা চাকরিটা করার দক্ষতা অর্জন করছে? মোটাদাগে সেই প্রশ্নটিও থেকে যায়।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অভিবাবক নির্বাচনের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে। কিন্তু টেকনোলজির জন্য ছাত্রদের শিক্ষার উন্নয়নে কতটুকু কাজ হয়।
দেশে সরকারি স্কুলের সংখ্যা খুব বেশি নয় বেসরকারি স্কুল প্রায় বেঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।মাধ্যমিক পর্যায়ের এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও একজন শিক্ষার্থীর পেছনে প্রতিমাসে যে টাকা শিক্ষা বাবদ খরচ হয়, শিক্ষা জীবন শেষ করে তার কোন নিশ্চয়তা নেই এই টাকার বেতনে কোনো চাকুরী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করবার।
এসব হাজারো ঘটনা নিয়েই চলছে আমাদের অনিশ্চয়তার জীবন। প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বা প্রযুক্তিবান্ধব কাজে সরকারী অনীহায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। তার সাথে আরও বড় ক্ষতির ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে সরকারী আমলাদের প্রেসক্রিপশনে অন্যদেশের বানানো প্রযুক্তি আমদানিতে টেন্ডারবাজি‘র অনুমোদন ।