মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়,
আপনাকে সালাম,শুভেচ্ছা ,অভিনন্দন। ছাত্রজীবন থেকে আপনাকে ‘নাহিদভাই‘ বলে ডাকার এই অধিকার আপনি-ই দিয়েছেন , এই জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আবার আপনি আমার রাজনীতির অভিভাবক ও ছিলেন।ঐক্য, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির প্রথম মিছিল আমার ছিল আপনার নেতৃত্বে। সেই দিন আমার মনে হয়েছিল এই বুঝি জীবন চলার শ্রেষ্ঠ পথ, এবং সেই ১৯৮৪ সালে যা বুকে লালন করেছিলাম তা নিয়ে আজ ও বেঁচে আছি, আর হয়ত থাকব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
আপনার প্রথম গণ সংবর্ধনা, আয়োজন করা হয়েছিল বিয়ানীবাজার এর সচেতন নাগরিক এর ব্যানারে। জানি না ঐ দিন আমি কতটুকু সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পরে ছিলাম,তবে এই উপলব্ধি ছিল যে, আপনার মতো একজন ভালো রাজনীতিবিদ এর জনসভায় আমি উপস্থিত থাকতে পারছি।
আপনার প্রথম নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল, আমি বিয়ানিবাজার কলেজের নিয়মিত ছাত্র এবং ছাত্র ইউনিয়ন এর একজন নগন্য কর্মী ছিলাম ।১৯৮৯ সালে উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় বিয়ানীবাজার এর সাথে তেমন যোগাযোগও ছিল না আর এ সাথে কিছুটা অভিমানও কাজ করছিল। এই প্রসঙ্গ এখানে না উল্লেখই ভালো মনে করছি।
এর পর থেকে সিলেট এমসি কলেজ এবং তারপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে জীবনের ধারাবাহিকতায় নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে হলে যা হয়, আমিও আর তা থেকে রেহাই পেলাম না; শুরু হলো জীবন যুদ্ধ।
বিভিন্ন দেশ এ প্রবাসী হিসাবে বাস করে শেষ ঠিকানা হলো মাল্টিকালচারাল দেশ যুক্তরাজ্য। এখানেই স্থায়ী ঠিকানা করে ফেললাম।এখানে এসেও আপনার প্রতিটা সভায় উপস্থিত থেকেছি।
জনাব মন্ত্রী মহোদয়, দিন তারিখ ঠিক মনে নেই, লন্ডনের কোন এক সভায় আপনার কাছ থেকে যে ভালবাসা টুকু পেয়েছিলাম তা আজও বুকে লালন করি। কোনদিন আপনার সাথে ছবি তুলে স্যোসাল মিডিয়াতে নিজেকে প্রচার করিনি ,আপনার সাথে আমার সেই রকম কোন ফটো তোলার সুযোগও হয়তো হয়ে ওঠেনি। ইচ্ছা আমার ছিল, পরবর্ত রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে আপনার সাথে ছবি তোলা হয়ে ওঠেনি ।
নাহিদ ভাই,যারা আপনার সাথে সেলফি তুলে ফেইসবুক বা স্যোসালমিডিয়ার অন্যান্য মাধ্যমে আপলোড দেয় এবং সবার কাছে বলতে চায় ‘আমি নাহিদ ভাইর কাছের মানুষ‘, তাদের কে আপনি ভাল করে জানেন। আমরা নানা সময়, নানা বিযয়ে সমালোচনা করছি , কিন্তু আপনার ভালো কাজের সমালোচনা কোন দিন করিনি।
আপনার সততার সমালোচনা করার মতো ক্ষমতা আমার কোন দিন হবে বলেও মনে হয় না। তবে স্পষ্টত সমালোচনা করেছি সেলফিবাজদের। সমালোচনা করেছি আপনার চারপাশে কিছু লোক কোন দিন স্কুলে যায়নি, কলেজেও যায়নি, আবার হঠাৎ আপনার ফটো দিয়ে নেতা পরিচয় দেয় তাদের ব্যাপারে।
জন্মগত প্রগতিশীল হওয়ার কারণে সেইসব সেলফিবাজ ( অর্থাৎ মা‘র চেয়ে মাসি‘র মায়া দেখানোদের কারণে) নিজে লজ্জাবনত হয়ে বর্তমানে আমি আপনার একজন নিরব ভোটার মাত্র।
আপনি ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে দীর্ঘপথ পেরিয়ে যে পর্যন্ত এসেছেন, তার একমাত্র কারণ আমি মনে করি আপনার সততা। আপনার রাজনৈতিক বর্তমান দর্শনের সাথে বিয়ানীবাজার থানা আওয়ামী লীগের কিংবদন্তি নেতা যাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্টা হয়েছিল- সর্বজন শ্রদ্ধেয় এম এ আজিজ, আকদ্দস সিরাজুল ইসলাম, মো. ফৈজুর রহমান ,মতিন মিয়া সহ হাতে গোনা কিছু নেতাদের সাথে আমি মিল খুঁজে পাই। এরা রাজনীতি করেছেন, অর্থ আর ভৈববের জন্য নয় । এখানেও তাদের সাথে আপনার আমি মিল খোঁজে পাই।
আমার এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে ১১টি গ্ৰাম নিয়ে পূর্ব মুড়িয়া অঞ্চল , যথাক্রমে নওয়াগ্ৰাম,সারপার,আষ্টঘর,বড়ুয়া,ইনামপুর,মাইজকাপন,আভঙ্গী, তাজপুর,পাথারী পাড়া,পিরের চক,টেকইকোনা।
আপনার কাজের জন্য আমরা এলাকাবাসী আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো এবং দোয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে নৌকা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন আর বিয়ানীবাজার গোলাপগঞ্জবাসী তা গ্ৰহন করেছিলেন বিধায় আজ আমাদের পূর্ব মুড়িয়া অঞ্চল একটি আদর্শ এলাকায় বিয়ানীবাজার উপজেলায় পরিচিত।
ঐতিহ্যবাহী পূর্ব মুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ,আমাদের এলাকার কিছু সন্মানীত ব্যক্তিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল।এই স্কুলসহ এলাকায় প্রায় প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন,সর্বপরি উন্নয়ন বলতে যা যা দরকার সবই হয়েছে, আর তা সম্ভব হয়েছে আপনার মত একজন সৎ যোগ্য নেতা বিয়ানীবাজার -গোলাপগঞ্জবাসী পাওয়ার জন্য।
আপনি আমাদের এলাকায় এক জনসভায় বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছেন আমরা নাকি অকৃতজ্ঞ, কারণ দানের কথা আমাদের মনে থাকে না, শুধু নাকি চাইতেই থাকি। আসলে এ কথাটি কতটুকু সত্য আমার বোধগম্য নয়, কারণ হিসেবে আপনাকে স্মরণ করে দিতে চাই, আপনার দ্বিতীয় মহাসমাবেশ কিন্তু পূর্ব মুড়িয়ায় হয়েছিল,যে কেন্দ্রটিতে আপনি বিজয়ী হয়েছিলেন।
ইতিহাস বলে , এর আগে,স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দল আওয়ামী লীগও পারেনি সেই কেন্দ্রে জয়ী হতে। আপনাকে আরো কিছু মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনার প্রথম জনসভায় আমরা আমাদের মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে রাস্তায় নিয়েছিলাম এবং তা ছিল আমাদের এলাকায় মৌলবাদের পতনের বিদায়ী ঘন্টা। আজ জানি না সেদিনের নিবেদিত প্রাণ মানুষজন কে কোথায়, শুধু ইতিহাসে সাক্ষী হওয়ার জন্য নামগুলো স্বরণ করা।সেলিম,বেলাল, ফখরুল,কালাম, আলতাফ প্রমূখ (নওয়াগ্রাম), জয়নাল আবেদীন, নুনু,কয়েছ, গিয়াস প্রমূখ (সারপার)সেলিম,রুনূ,মাকু প্রমূখ (আষ্টঘরী) এনু, হালিম,আমিন উদ্দিন,রামিম, ইসলাম উদ্দিন প্রমূখ (টেকইকোনা)।
ইতিহাস জানা লোকজন কে সুযোগ দিতে হবে কিছু বলার, আপনার কাছে থেকে নিজের
আখের গোছানোর লোকজন আপনারই আশেপাশের। এখনও সময় আছে,ঐ দালাল বাহিনীকে দূরে রাখার, যারা তাদের কেবল তাদের স্বার্থের জন্য আপনার চারপাশে আছে ।
আপনার সততা,আপনার ন্যায় -নীতি দেখে আসলেই আমরা মুগ্ধ। আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
নাহিদভাই,আমরা প্রবাসীরা নানা কষ্টের মাঝে থেকেও দেশের জন্য কিছু করতে মন চায়। আমরা দেশের মানুষের দুঃখ কষ্টের ভাগী হতে চাই। অথচ তার জন্য আমাদের অনেক সময় ঐ দালাল শ্রেণীর দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়।সুসময়ে যারা পাশে থাকেন তারা নয় বরং দুঃসময় যারা দলের পাশে থাকেন তারাই দলের নিঃস্বার্থ কর্মী আপনি আমাদের চেয়ে অনেক বেশী উপলব্দি করার যোগ্যতা আপনি রাখেন।
সচেতন সমাজের এটাও জানা আছে, যেই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৪৭ বছর আগে দেশটি স্বাধীন হলো, সেই পাকিস্তান কেন এখন উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে চায়। ’ সেদিন পর্যন্ত যে দেশটির কোনো ভবিষ্যৎ বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদ দেখতে পাননি, সে দেশ কী জাদুতে ২০১৮ সালে এসে বিশ্বের ৩১তম শক্তিশালী অর্থনীতি (পিপিপি অনুযায়ী) হিসেবে পরিচিত হলো। শেখ হাসিনার এক দশকের নিরবচ্ছিন্ন আর ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে যে জায়গায় অবস্থান করছে, তাতে একজন শেখ হাসিনা হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর।
আপনার মাধ্যমে সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে সরকার উচ্চ শিক্ষায় গুরুত্ব, গবেষণা ও ইনোভেশন কাজে অধিক বরাদ্দ দিচ্ছে। গবেষণার ক্ষেত্রেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। গবেষণায় বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে, তার কিছু টা হলে ও আমরা পূর্ব মুড়িয়া এলাকাবাসী আশা করছি । জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণায় আপনার অবদান তুলনাহীন। আমাদের পূর্ব মুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় সহ এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। যাতায়াত ব্যবস্থা আপনার সরকারের অধীনে যা হয়েছে, আমরা এলাকাবাসীর কাছে কোন ভাষা নেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার। আমরা আশা করছি অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে আপনি পূর্ব মুড়িয়াবাসীর অন্তরে ইতিহাস হয়ে থাকবেন। নওয়াগ্ৰাম- আতুয়া সেতু কাজ প্রায় শেষ, আপনার সামান্য সুদৃষ্টিতে হতে পারে চিরস্থায়ী সেতু বন্ধন বিয়ানীবাজারবাসীর সাথে বড়লেখাবাসীর।
আপনার দীর্ঘায়ু,সুস্থতা এবং উত্তরোত্তর সাফল্য নিরন্তর কামনা করি।
সাদিক রহমান। ইজলিংটন, লন্ডন।