ঢাকা ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ সংশোধন, প্রবাসীদের কতটা সুবিধা হল? রূপসায় গুলিতে সৌদি প্রবাসী যুবক নিহত গণভোট প্রশ্নে বিএনপির প্রস্তাব ভুল, স্বীকার করলেন আমীর খসরু ‘আসন সমঝোতা’ জামায়াতের ‘গোপন’ কৌশল? ট্রাম্প বললেন, নিউইয়র্ক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে, কমিউনিস্ট শহর হয়ে যাবে সৌদিতে সভা-সমাবেশে কঠোর ব্যবস্থা: সতর্কতা দূতাবাসের মামদানির জয়—ট্রাম্পের ক্ষমতা কি নড়বড়ে হচ্ছে? চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে গুলি বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার নিহত নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি, ভাঙলেন সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড পিতৃপরিচয়ে ধানের শীষ পেলেন ২৪ জন, প্রথমবার নির্বাচনে ৮১ জন

সহায় সম্বলহীন একজন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:১৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০১৯
  • / 1628
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শহিদুল্লাহ সবুজ। তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ২৫ হাজার ৬২১ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মতিন চৌধুরী নৌকা প্রতীক পান ১৩ হাজার ৭৮৯ ভোট।

গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্থানীয় ভোটারসহ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহায়-সম্বলহীন এসএম শহিদুল্লাহ সবুজকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন। এমনকি ভিক্ষুকরা প্রতিদিন ভিক্ষা করে যা পেতেন তাও তুলে দিতেন শহিদুল্লাহ সবুজের হাতে।

এর আগে শহিদুল্লাহ সবুজ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেবার নির্বাচিত হয়ে সামান্য জায়গা-জমি যা ছিল তা বিক্রি করে মানুষের সেবায় খরচ করেছেন। এখন তিনি সহায়-সম্বলহীন। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সিরাজগঞ্জ শহরের হোসেনপুর বাগানবাড়ি মহল্লায়। তার আদি বাড়ি কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নের বড়ধুল গ্রামে।

কামারখন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

স্থানীয়রা জানান, সহায়সম্বল বলতে শহিদুল্লাহ সবুজের কিছুই নেই। এলাকায় বাপ-দাদার কিছু জমিজমা ছিল। জনসেবা করতে গিয়ে সেগুলোও বিক্রি করে ফেলেছেন। দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু কোনোবারই তার টাকা ছিল না। এলাকার লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা ও চাল তুলে তার নির্বাচনী খরচ চালিয়েছেন।

বড়ধুল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান, তার তো ভিটে বাড়ি কিছুই নেই। তিনি সিরাজগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকেন। ঠিকমতো বাড়ি ভাড়াও দিতে পারেন না।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি জনগণের টাকায় চলেন। নির্দিষ্ট কোনো ইনকাম নেই। বাড়িওয়ালা জানে তার বাড়ি ভাড়া দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই। কিন্তু সৎ ও নির্লোভ রাজনীতিক হওয়ায় সবাই তাকে ছাড় দেন।

একই গ্রামের আবদুল আউয়াল জানান, শহিদুল্লাহ সবুজ লোভ লালসার ঊর্ধ্বে। এর আগে তিনি পাঁচ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। তারপরও কোনো বাড়িঘর করতে পারেননি। তার বাড়িই ছিল উপজেলা অফিস। সেজন্যই দলমত নির্বিশেষে উপজেলার সব জনগণ তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, বাড়ি দিয়ে কী হবে। আমাকে খোঁজার জন্য জনগণকে বাড়ি যেতে হয় না। আমিই তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার অফিসে কোনো পর্দা থাকবে না। আমি ভিক্ষুকের দেয়া প্রথম ৭২ টাকা আর ৫ কেজি চাল দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলাম। এছাড়া আমার এলাকার মানুষসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহযোগিতা করেছেন। আমি শুধু ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, টাকার চিন্তা করেছে জনগণ। এটা নিয়ে আমাকে কখনো ভাবতে হয়নি। জনগণের ভালোবাস ছাড়া আমার অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। যত দিন বেঁচে থাকবো তত দিনই মানুষের সেবা করবো ইনশাআল্লাহ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সহায় সম্বলহীন একজন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ

আপডেট সময় : ০৬:১৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০১৯

পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শহিদুল্লাহ সবুজ। তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ২৫ হাজার ৬২১ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মতিন চৌধুরী নৌকা প্রতীক পান ১৩ হাজার ৭৮৯ ভোট।

গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্থানীয় ভোটারসহ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহায়-সম্বলহীন এসএম শহিদুল্লাহ সবুজকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন। এমনকি ভিক্ষুকরা প্রতিদিন ভিক্ষা করে যা পেতেন তাও তুলে দিতেন শহিদুল্লাহ সবুজের হাতে।

এর আগে শহিদুল্লাহ সবুজ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেবার নির্বাচিত হয়ে সামান্য জায়গা-জমি যা ছিল তা বিক্রি করে মানুষের সেবায় খরচ করেছেন। এখন তিনি সহায়-সম্বলহীন। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সিরাজগঞ্জ শহরের হোসেনপুর বাগানবাড়ি মহল্লায়। তার আদি বাড়ি কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নের বড়ধুল গ্রামে।

কামারখন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

স্থানীয়রা জানান, সহায়সম্বল বলতে শহিদুল্লাহ সবুজের কিছুই নেই। এলাকায় বাপ-দাদার কিছু জমিজমা ছিল। জনসেবা করতে গিয়ে সেগুলোও বিক্রি করে ফেলেছেন। দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু কোনোবারই তার টাকা ছিল না। এলাকার লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা ও চাল তুলে তার নির্বাচনী খরচ চালিয়েছেন।

বড়ধুল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান, তার তো ভিটে বাড়ি কিছুই নেই। তিনি সিরাজগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকেন। ঠিকমতো বাড়ি ভাড়াও দিতে পারেন না।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি জনগণের টাকায় চলেন। নির্দিষ্ট কোনো ইনকাম নেই। বাড়িওয়ালা জানে তার বাড়ি ভাড়া দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই। কিন্তু সৎ ও নির্লোভ রাজনীতিক হওয়ায় সবাই তাকে ছাড় দেন।

একই গ্রামের আবদুল আউয়াল জানান, শহিদুল্লাহ সবুজ লোভ লালসার ঊর্ধ্বে। এর আগে তিনি পাঁচ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। তারপরও কোনো বাড়িঘর করতে পারেননি। তার বাড়িই ছিল উপজেলা অফিস। সেজন্যই দলমত নির্বিশেষে উপজেলার সব জনগণ তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, বাড়ি দিয়ে কী হবে। আমাকে খোঁজার জন্য জনগণকে বাড়ি যেতে হয় না। আমিই তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার অফিসে কোনো পর্দা থাকবে না। আমি ভিক্ষুকের দেয়া প্রথম ৭২ টাকা আর ৫ কেজি চাল দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলাম। এছাড়া আমার এলাকার মানুষসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহযোগিতা করেছেন। আমি শুধু ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, টাকার চিন্তা করেছে জনগণ। এটা নিয়ে আমাকে কখনো ভাবতে হয়নি। জনগণের ভালোবাস ছাড়া আমার অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। যত দিন বেঁচে থাকবো তত দিনই মানুষের সেবা করবো ইনশাআল্লাহ।