ঢাকা ০২:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট : আয়করদাতাদের জন্য সুখবর নেই

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৮:২৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • / 252
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

সোমবার বেলা ৩টায় তিনি বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শুরু করেন। সংসদ না থাকায় তার বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ তার প্রথম বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’।

অর্থ উপদেষ্টার ভাষ্যে, একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিছুটা সংস্কারভিত্তিক এই বাজেটে উন্নয়নের সুফল সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা থাকছে।

সংসদ না থাকায় সর্বশেষ এভাবে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

প্রথা অনুযায়ী, প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। পরদিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে ওই বাজেটে খুঁটিনাটি তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবরা। কিন্তু এবার দেশের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বাজেট দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে কারণে আগের প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। আগামী ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত কোরবানির ঈদের ছুটি বলে বাজেট সোমবার দেওয়া হচ্ছে।

এই বাজেট চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তার দুই মাসের মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।

ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ইতোমধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে, যা আগের চলতি অর্থ বছরের মূল এডিপির তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম।

সংসদের বাইরে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

সেদিনও ছিল সোমবার। বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল তার বাজেট বক্তৃতা।

তারপর আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচ বার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।

নির্বাচিত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর মাসজুড়ে তার ওপর আলোচনা চলত। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হত নতুন অর্থ বছরের বাজেট, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতো।

এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনও সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে।

তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ৯ শতাংশ রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকারের ব্যয়ের খাতের মধ্যে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদ্যু ও সার বাবদ ভর্তুকি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো।

আয়করদাতাদের জন্য সুখবর নেই এবারের বাজেটেও
মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফনে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেলেও নতুন বাজেটে আয়করদাতারা কোনও ছাড় পাচ্ছেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখানে করমুক্ত আয়সীমা একই রাখা হয়েছে। আগামী বছর করমুক্ত আয়সীমা এখনকার মতোই সাড়ে ৩ লাখ টাকা থাকছে।

তবে পরের দুই অর্থ বছরে অর্থাৎ ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থ বছরে এই সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা; যদিও অন্তর্বর্তী সরকার কত বছর থাকবে, তার দিশা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।

করমুক্ত সীমা না বাড়ালেও নতুন বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের স্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ শতাংশ হারে একটি কর স্তর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেই প্রস্তাব অনুসারে, ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ করহারের পরে উচ্চস্তরে আরেকটি করহার এসেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, বছরে আয় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকার বেশি হলে ওই করদাতাকে বাকি অর্থের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার পরে প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ এবং বাকি অর্থের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর বসবে।

এ ছাড়া নারী করদাতা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো ৪ লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা ও প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে ৫ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা হবে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাতা–পিতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।

পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত (গেজেটভুক্ত) করদাতাদের জন্য ২০২৬–২৭ অর্থ বছর থেকে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

নতুনদের ন্যূনতম কর ১ হাজার টাকা
নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূনতম কর এক হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। করমুক্ত আয়সীমা পার হলেই এক হাজার টাকা কর দিতে হবে।

বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর পাঁচ হাজার টাকা, অন্য সিটির করদাতার জন্য চার হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্য এলাকার করদাতার জন্য তিন হাজার টাকা দিতে হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ কোটি ১১ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। এক বছর ধরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে আছে। এর মানে হলো, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ গত এক বছরে ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কিন্তু মজুরির হার এক বছর ধরে ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে আছে। তাদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট : আয়করদাতাদের জন্য সুখবর নেই

আপডেট সময় : ০৮:২৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

সোমবার বেলা ৩টায় তিনি বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শুরু করেন। সংসদ না থাকায় তার বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ তার প্রথম বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’।

অর্থ উপদেষ্টার ভাষ্যে, একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিছুটা সংস্কারভিত্তিক এই বাজেটে উন্নয়নের সুফল সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা থাকছে।

সংসদ না থাকায় সর্বশেষ এভাবে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

প্রথা অনুযায়ী, প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। পরদিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে ওই বাজেটে খুঁটিনাটি তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবরা। কিন্তু এবার দেশের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বাজেট দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে কারণে আগের প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। আগামী ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত কোরবানির ঈদের ছুটি বলে বাজেট সোমবার দেওয়া হচ্ছে।

এই বাজেট চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তার দুই মাসের মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।

ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ইতোমধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে, যা আগের চলতি অর্থ বছরের মূল এডিপির তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম।

সংসদের বাইরে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

সেদিনও ছিল সোমবার। বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল তার বাজেট বক্তৃতা।

তারপর আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচ বার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।

নির্বাচিত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর মাসজুড়ে তার ওপর আলোচনা চলত। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হত নতুন অর্থ বছরের বাজেট, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতো।

এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনও সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে।

তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ৯ শতাংশ রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকারের ব্যয়ের খাতের মধ্যে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদ্যু ও সার বাবদ ভর্তুকি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো।

আয়করদাতাদের জন্য সুখবর নেই এবারের বাজেটেও
মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফনে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেলেও নতুন বাজেটে আয়করদাতারা কোনও ছাড় পাচ্ছেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখানে করমুক্ত আয়সীমা একই রাখা হয়েছে। আগামী বছর করমুক্ত আয়সীমা এখনকার মতোই সাড়ে ৩ লাখ টাকা থাকছে।

তবে পরের দুই অর্থ বছরে অর্থাৎ ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থ বছরে এই সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা; যদিও অন্তর্বর্তী সরকার কত বছর থাকবে, তার দিশা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।

করমুক্ত সীমা না বাড়ালেও নতুন বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের স্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ শতাংশ হারে একটি কর স্তর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেই প্রস্তাব অনুসারে, ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ করহারের পরে উচ্চস্তরে আরেকটি করহার এসেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, বছরে আয় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকার বেশি হলে ওই করদাতাকে বাকি অর্থের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার পরে প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ এবং বাকি অর্থের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর বসবে।

এ ছাড়া নারী করদাতা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো ৪ লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা ও প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে ৫ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা হবে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাতা–পিতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।

পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত (গেজেটভুক্ত) করদাতাদের জন্য ২০২৬–২৭ অর্থ বছর থেকে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

নতুনদের ন্যূনতম কর ১ হাজার টাকা
নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূনতম কর এক হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। করমুক্ত আয়সীমা পার হলেই এক হাজার টাকা কর দিতে হবে।

বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর পাঁচ হাজার টাকা, অন্য সিটির করদাতার জন্য চার হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্য এলাকার করদাতার জন্য তিন হাজার টাকা দিতে হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ কোটি ১১ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। এক বছর ধরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে আছে। এর মানে হলো, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ গত এক বছরে ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কিন্তু মজুরির হার এক বছর ধরে ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে আছে। তাদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।