হে আল্লাহ, মানুষের মধ্যে মনুষত্ব দাও। শুভবোধ জাগ্রত করো
- আপডেট সময় : ০১:৫৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
- / 289
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্লাসরুমে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত ও দগ্ধ হয়েছেন দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। পুড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে গিয়ে বিপন্ন মনবতার এক কুৎসিত রূপ বেরিয়ে এসেছে। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজিজুল পারভেজ। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি’। আসলে আমরা বাঙালি তো হতেই পারিনি। মানুষও হতে পারিনি। মানুষের মতো প্রাণী হলেই কি মানুষ হওয়া যায়, যদি মনুষত্ববোধ না থাকে? আজ উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান কলেজের ক্লাসরুমে বিধ্বস্ত হওয়ার পর পুড়ে যাওয়া কচি শিশুরা যখন বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছে, তখন এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনায় বিপন্ন মানবতার একটা ভিন্ন রূপ প্রকাশিত হয়েছে। মাঠের সাংবাদিক শাহনাজ শারমিনের একটি লেখায় মনুষত্বহীনতার এই ভয়াবহ রূপ উঠে এসেছে। শারমিন লিখেছেন:
‘‘বার্ন হাসপাতালের সামনে নিজেকে সহ পুরো সমাজটাকে লোভী সুযোগ সন্ধানী মনে হচ্ছিল আর লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম স্বজনদের কাছ থেকে- আমরা কতটা অমানবিক।
বাংলা একাডেমি থেকে ঢাকা মেডিকেলের ভাড়া রিক্সাওয়ালা ৩০টাকার জায়গায় ৬০টাকা নিছে। হাসপাতালের সামনে পানির বোতলের দাম দ্বিগুন । ব্লাড জোগাড় করে চলছে ব্যবসা যেই ব্লাড কোনভাবেই আজকে কাজে লাগবে না। সংরক্ষিত ব্লাড পরে কোন কাজে লাগবে না পোড়া রোগীদের। তাদের লাগবে ফ্রেশ ব্লাড তাও দুই তিনদিন পরে; বলছিলেন পরিচালক। অপ্রয়োজনীয় শব্দ মাইক সেচ্ছাসেবী, রিল আর ছবি সেলফি তোলার হিড়িক।
রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্টজন ভিআইপিআইদের কথা নাই বললাম। আরো আছে আমাদের বিভৎস ছবি আর অমানবিক সাক্ষাৎকার দেখানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা। বার্ন ইউনিটের সামনে ৭ঘন্টা থাকার পর আমার অনুভতি আমরা কতটা মানবিক? জখম মৃত্যু দূর্ঘটনা কাভার করা কাজের অংশ। তবু আজকের মত বিষন্ন আর চোখে জল শেষ কবে এসেছিলো জানিনা। বার বার আরিসার মুখটা মনে পড়ছিলো। আজকের ফুল গুলোর মৃত্যু কাঁদিয়েছে পেশাগত মানুষগুলোকেও।
ঘটনাস্থল উত্তরার মানবতা-
এর আগে দুপুরে দূর্ঘটনাস্থলে এম্বুলেন্স পৌঁছানোর আগে মানুষজন পুড়ে যাওয়া বাচ্চাদের কোলে নিয়েই দৌড়াচ্ছিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে তখন মেট্রো স্টেশন থেকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল মন্সুর আলী মেডিকেল কলেজে যেতে রিকশাওয়ালারা চাচ্ছিল ১২০ টাকা, ১৫০ টাকা যার প্রতিদিনের ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। মর্ডান হাসপাতালে ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা, অথচ আজ সিএনজিওয়ালারা চাচ্ছে ১০০০ টাকা, ১২০০ টাকা। সবাই নাকি মানবিক? থামেনি অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়ে যাওয়া নিষ্পাপ শিশুগুলোকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য।
এরপরও কিছু মানুষ সত্যিকারের মানবিকতা নিয়ে শিশুদের কোলে নিয়ে দৌড়েছিলো হাসপাতালে ঔষধ নিয়ে দাড়িয়েছিলো, স্বজনদের জন্য পানি খাবার নিয়ে এসেছিলো,ডাক্তাররা আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে । তাই চন্দ্র সূর্য ওঠে যেকোন দূর্যোগ বিপর্যয় আমরা উতরে যেতে পারি হাতে হাত রেখে। দেবশিশুদের কষ্ট কমিয়ে দাও সৃষ্টিকর্তা,বাবা মায়েদের দাও সহ্য ক্ষমতা।’’
এই যে সমাজ ও রাষ্ট্রের যে একটি অন্ধকারের দিক পেরিয়ে আসলো, আমরা আমাদের এই কুৎসিত রূপটিকে আর লালন করতে চাই না।
আত্মসমালোচনা করতে চাই।
নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মলিনতাকে ধুুয়ে মুছে সাফ করতে চাই।
পরিশুদ্ধ হতে চাই।
চাই মানবতার বিকাশ।
বিবেক জাগ্রত হোক।
বিপন্ন মানবতার জন্য ব্যগ্রতা, সংযুক্ত প্রিয় ছবিটাই মতোই হোক আমাদের আসল পরিচয়।



















