ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

সৌদির সমাজে বড় পরিবর্তন, কীভাবে সম্ভব হলো?
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:১৪:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • / 325
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিশ বছর আগেও সৌদি আরবের নানা সংকটের প্রতীক ছিল বুরাইদাহ শহর। তখন রাস্তায় টহল দিত ধর্মীয় পুলিশ। দোকানপাট নামাজের সময় বন্ধ আছে কিনা, নারীরা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছে কি না কিংবা নারী-পুরুষ একসঙ্গে চলাফেরা করছে কি না—এসবই ছিল তাদের নজরদারির বিষয়। সিনেমা বা কনসার্ট ছিল অনুপস্থিত। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ ছিল শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য। পাশাপাশি, তেলের দাম নিম্নমুখী থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই দেশটি নানা সমস্যায় ভুগছিল।

কিন্তু আজকের বুরাইদাহ সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। শহরের মূল রাস্তায় নারী-পুরুষ নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছে। যুগলরা একসঙ্গে হাঁটছে কিংবা রেস্তোরাঁয় পাশাপাশি বসে খাচ্ছে। সিনেমা হলে চলছে আরবি ও হলিউডের ছবি। শহরের প্রান্তে নারী ড্রাইভিং স্কুল জমজমাট। কোথাও দেখা মেলে না সেই মোরাল পুলিশদের, সন্ত্রাসবাদও এখন অতীত।

তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বুরাইদাহ এখনো একটি চ্যালেঞ্জের প্রতীক। যদিও সিনেমা হল বা ড্রাইভিং স্কুলের মতো নতুন সেবা খাতে কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ চাকরি এখনো আমলাতন্ত্রেই সীমাবদ্ধ। শহরের প্রধান শিল্প খেজুরচাষ, যেটি প্রায় পুরোপুরি বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল।

প্রায় এক দশক ধরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সমাজে কঠোরতা কমানো এবং তেলনির্ভরতা হ্রাসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক সংস্কারের গতি ছিল অত্যন্ত দ্রুত; কিন্তু অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের অগ্রগতি বেশ ধীর। আগের অর্থনৈতিক কাঠামোর সমস্যা যেমন—ব্যাপক ভর্তুকি, ধর্মীয় বিধিনিষেধ ও পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা—এখনো রয়ে গেছে।

ভিশন ২০৩০ এর আওতায় নেওয়া সামাজিক সংস্কার সৌদি জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করা অপরিহার্য।

এই পরিকল্পনায় রয়েছে চমক জাগানো গিগা-প্রকল্প: একটি বিশাল সরলরেখা-আকৃতির শহর, মরুভূমির পাশে স্কি রিসোর্ট, ৫০টি বিলাসবহুল হোটেল, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবন নির্মাণসহ আরও অনেক কিছু। একইসঙ্গে, নতুন শিল্প যেমন পর্যটন ও গাড়ি উৎপাদন খাত গড়েও তোলার চেষ্টা চলছে। সরকার ইতোমধ্যে ৬০০টিরও বেশি সংস্কার প্রকল্প চালু করেছে।

২০১৮ সাল থেকে নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা, চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ মিলেছে। নিয়োগ বা বেতনে বৈষম্য এখন বেআইনি। নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। সবচেয়ে দ্রুত যুক্ত হয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষিত নারীরা।

স্পোর্টস ও বিনোদন খাতেও রাষ্ট্রের জোরালো উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। জেদ্দায় ফর্মুলা ওয়ান রেসের আগে পারফর্ম করেছেন জেনিফার লোপেজ। রিয়াদের আকাশের নিচে ডিজে পারফরম্যান্সে তরুণরা নাচছে—যা এক সময় ছিল অকল্পনীয়। ২০১৭ সালে যেখানে পরিবারগুলো আয়-এর ১২ শতাংশ ব্যয় করত খাবার ও বিনোদনে, ২০২৪ সালে তা বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশ হয়েছে।

২০১৬ সালে দেশটিতে ৬ কোটি রাত যাপনকারী পর্যটক থাকলেও ২০২৩ সালে তা বেড়ে ১০ কোটিরও বেশি হয়েছে। এর বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যটক। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা এখনো কম হলেও বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে।

সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক রূপান্তর এখনো ধীরগতির। তেল এখনো রপ্তানি ও রাজস্বের মূল উৎস। যদিও জিডিপিতে এর অবদান ৩৬ থেকে কমে ২৬ শতাংশ হয়েছে, তারপরও তা উল্লেখযোগ্য। নির্মাণ, খুচরা বিক্রি ও আতিথেয়তা খাতে কিছু অগ্রগতি হলেও অন্যান্য সরকার-নির্ধারিত খাত এখনো পিছিয়ে।

সামাজিক পরিবর্তন দ্রুত ঘটানো সম্ভব হলেও অর্থনৈতিক পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। খনিজ খাতে—বিশেষত স্বর্ণ ও বক্সাইটে কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। সৌর শক্তি ও হাইড্রোজেন উৎপাদনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও সুযোগ রয়েছে।

তবে অনেক খাতে সৌদি আরবের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। গাড়ি উৎপাদন ও সেমিকন্ডাক্টর খাত তার মধ্যে অন্যতম। ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৫ লাখ ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মাত্র ৮০০টি গাড়ি কিট আকারে আমদানি করে অ্যাসেম্বল করা হয়েছে।

বহু প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। ২০২৪ সালে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ২০২৩ সালের তুলনায় কমেছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জিডিপির দ্বিগুণ বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বিনিয়োগকারীরা এখনো কিছু বিষয়ে সতর্ক। ২০১৭-১৮ সালে যুবরাজ এমবিএস যখন বেশ কয়েকজন ধনী সৌদিকে রিয়াদের একটি বিলাসবহুল হোটেলে আটকে রেখে বিপুল অর্থ আদায় করেন, সেই স্মৃতি এখনো রয়ে গেছে। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনাও বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবে ব্যবসা করতে এখনো রাজনৈতিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, সরকারি প্রকল্পে অর্থ পরিশোধে বিলম্ব ও চুক্তি-সংক্রান্ত জটিলতাও অস্বাভাবিক নয়।

এর পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধও সৌদিতে বিদেশি বিনিয়োগে বাধা তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার আভাস দিলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও পুঁজি প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মানবসম্পদের সীমাবদ্ধতাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সৌদি পুরুষদের অর্ধেক এখনো সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত। নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও তা তুলনামূলকভাবে কম। মধ্যপ্রাচ্যের শিক্ষার্থীরা গাণিতিক, পাঠ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে ওইসিডি গড়ের নিচে অবস্থান করছে। সৌদি শিক্ষার্থীরা এমনকি কাতার থেকেও পিছিয়ে, যদিও দেশটি শিক্ষা খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। অতীতে ধর্মীয় শিক্ষার ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়াই এর একটি কারণ হতে পারে। পাশাপাশি, সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমে উৎসাহ কমিয়ে দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সৌদির সমাজে বড় পরিবর্তন, কীভাবে সম্ভব হলো?
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

আপডেট সময় : ০২:১৪:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

বিশ বছর আগেও সৌদি আরবের নানা সংকটের প্রতীক ছিল বুরাইদাহ শহর। তখন রাস্তায় টহল দিত ধর্মীয় পুলিশ। দোকানপাট নামাজের সময় বন্ধ আছে কিনা, নারীরা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছে কি না কিংবা নারী-পুরুষ একসঙ্গে চলাফেরা করছে কি না—এসবই ছিল তাদের নজরদারির বিষয়। সিনেমা বা কনসার্ট ছিল অনুপস্থিত। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ ছিল শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য। পাশাপাশি, তেলের দাম নিম্নমুখী থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই দেশটি নানা সমস্যায় ভুগছিল।

কিন্তু আজকের বুরাইদাহ সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। শহরের মূল রাস্তায় নারী-পুরুষ নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছে। যুগলরা একসঙ্গে হাঁটছে কিংবা রেস্তোরাঁয় পাশাপাশি বসে খাচ্ছে। সিনেমা হলে চলছে আরবি ও হলিউডের ছবি। শহরের প্রান্তে নারী ড্রাইভিং স্কুল জমজমাট। কোথাও দেখা মেলে না সেই মোরাল পুলিশদের, সন্ত্রাসবাদও এখন অতীত।

তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বুরাইদাহ এখনো একটি চ্যালেঞ্জের প্রতীক। যদিও সিনেমা হল বা ড্রাইভিং স্কুলের মতো নতুন সেবা খাতে কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ চাকরি এখনো আমলাতন্ত্রেই সীমাবদ্ধ। শহরের প্রধান শিল্প খেজুরচাষ, যেটি প্রায় পুরোপুরি বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল।

প্রায় এক দশক ধরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সমাজে কঠোরতা কমানো এবং তেলনির্ভরতা হ্রাসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক সংস্কারের গতি ছিল অত্যন্ত দ্রুত; কিন্তু অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের অগ্রগতি বেশ ধীর। আগের অর্থনৈতিক কাঠামোর সমস্যা যেমন—ব্যাপক ভর্তুকি, ধর্মীয় বিধিনিষেধ ও পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা—এখনো রয়ে গেছে।

ভিশন ২০৩০ এর আওতায় নেওয়া সামাজিক সংস্কার সৌদি জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করা অপরিহার্য।

এই পরিকল্পনায় রয়েছে চমক জাগানো গিগা-প্রকল্প: একটি বিশাল সরলরেখা-আকৃতির শহর, মরুভূমির পাশে স্কি রিসোর্ট, ৫০টি বিলাসবহুল হোটেল, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবন নির্মাণসহ আরও অনেক কিছু। একইসঙ্গে, নতুন শিল্প যেমন পর্যটন ও গাড়ি উৎপাদন খাত গড়েও তোলার চেষ্টা চলছে। সরকার ইতোমধ্যে ৬০০টিরও বেশি সংস্কার প্রকল্প চালু করেছে।

২০১৮ সাল থেকে নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা, চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ মিলেছে। নিয়োগ বা বেতনে বৈষম্য এখন বেআইনি। নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। সবচেয়ে দ্রুত যুক্ত হয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষিত নারীরা।

স্পোর্টস ও বিনোদন খাতেও রাষ্ট্রের জোরালো উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। জেদ্দায় ফর্মুলা ওয়ান রেসের আগে পারফর্ম করেছেন জেনিফার লোপেজ। রিয়াদের আকাশের নিচে ডিজে পারফরম্যান্সে তরুণরা নাচছে—যা এক সময় ছিল অকল্পনীয়। ২০১৭ সালে যেখানে পরিবারগুলো আয়-এর ১২ শতাংশ ব্যয় করত খাবার ও বিনোদনে, ২০২৪ সালে তা বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশ হয়েছে।

২০১৬ সালে দেশটিতে ৬ কোটি রাত যাপনকারী পর্যটক থাকলেও ২০২৩ সালে তা বেড়ে ১০ কোটিরও বেশি হয়েছে। এর বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যটক। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা এখনো কম হলেও বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে।

সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক রূপান্তর এখনো ধীরগতির। তেল এখনো রপ্তানি ও রাজস্বের মূল উৎস। যদিও জিডিপিতে এর অবদান ৩৬ থেকে কমে ২৬ শতাংশ হয়েছে, তারপরও তা উল্লেখযোগ্য। নির্মাণ, খুচরা বিক্রি ও আতিথেয়তা খাতে কিছু অগ্রগতি হলেও অন্যান্য সরকার-নির্ধারিত খাত এখনো পিছিয়ে।

সামাজিক পরিবর্তন দ্রুত ঘটানো সম্ভব হলেও অর্থনৈতিক পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। খনিজ খাতে—বিশেষত স্বর্ণ ও বক্সাইটে কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। সৌর শক্তি ও হাইড্রোজেন উৎপাদনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও সুযোগ রয়েছে।

তবে অনেক খাতে সৌদি আরবের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। গাড়ি উৎপাদন ও সেমিকন্ডাক্টর খাত তার মধ্যে অন্যতম। ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৫ লাখ ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মাত্র ৮০০টি গাড়ি কিট আকারে আমদানি করে অ্যাসেম্বল করা হয়েছে।

বহু প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। ২০২৪ সালে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ২০২৩ সালের তুলনায় কমেছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জিডিপির দ্বিগুণ বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বিনিয়োগকারীরা এখনো কিছু বিষয়ে সতর্ক। ২০১৭-১৮ সালে যুবরাজ এমবিএস যখন বেশ কয়েকজন ধনী সৌদিকে রিয়াদের একটি বিলাসবহুল হোটেলে আটকে রেখে বিপুল অর্থ আদায় করেন, সেই স্মৃতি এখনো রয়ে গেছে। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনাও বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবে ব্যবসা করতে এখনো রাজনৈতিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, সরকারি প্রকল্পে অর্থ পরিশোধে বিলম্ব ও চুক্তি-সংক্রান্ত জটিলতাও অস্বাভাবিক নয়।

এর পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধও সৌদিতে বিদেশি বিনিয়োগে বাধা তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার আভাস দিলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও পুঁজি প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মানবসম্পদের সীমাবদ্ধতাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সৌদি পুরুষদের অর্ধেক এখনো সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত। নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও তা তুলনামূলকভাবে কম। মধ্যপ্রাচ্যের শিক্ষার্থীরা গাণিতিক, পাঠ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে ওইসিডি গড়ের নিচে অবস্থান করছে। সৌদি শিক্ষার্থীরা এমনকি কাতার থেকেও পিছিয়ে, যদিও দেশটি শিক্ষা খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। অতীতে ধর্মীয় শিক্ষার ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়াই এর একটি কারণ হতে পারে। পাশাপাশি, সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমে উৎসাহ কমিয়ে দিয়েছে।