সেনাবাহিনীর একশন, রক্তাক্ত নুরুল হক নুর
জাপা-গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ
- আপডেট সময় : ১২:১৫:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
- / 214
ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। রক্তাক্ত অবস্থায় নুরকে উদ্ধার করে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান নেতাকর্মীরা। পরে সেখান থেকে রাত ১১টার দিকে নুরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়েছে।
নুরুল হক নুরকে ঢামেকে ভর্তি করার পর তাকে দেখতে অর্ন্তবর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করে প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে নূরের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ সময় ‘ভুয়া,ভুয়া’, ‘পদত্যাগ চাই’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রথম দফা সংঘর্ষের পর রাত ৯টার পর দিকে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রথম দফা সংঘর্ষের পর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রথম দফার সংঘর্ষের ঘটনার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌছাতে পারলেও দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের কারণে সংবাদ সম্মেলন হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে দ্বিতীয় দফায় জাপা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। এ সময় জাপা নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে জাপা নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের ঘটনাস্থল ছাড়তে ১০ মিনিট সময় দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এর মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় সেখানে ব্যাপক লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এতে নুরুল হক নুরসহ অনেকেই আহত হন।
গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা জানান, নুরের মাথা ফেটে গেছে। এ ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান আটজন নেতাকর্মী ও পুলিশ আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
অন্য আহতরা হলেন- হাসান তারেক (২৮), ফারজানা কিবরিয়া (৩০), মইনুল ইসলাম (৩৫), মেহবুবা ইসলাম (৩০), ইন্সপেক্টর আনিছুর রহমান (৪২), আবু বক্কর (৩০) ও তারেক আজাদ (২৫)।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান অভিযোগ করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে আমাদের মিছিলে হামলা চালিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাকরাইল থেকে পুলিশ সদস্যসহ মোট আটজন আহত হয়ে হাসপাতালে আসে। জরুরি বিভাগে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এর আগে, সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ের সামনে জাপা ও গণঅধিকার পরিষদের নেতকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। জাপার নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে তাদের ওপর হামলা করেছেন। আর গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তারা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় জাপার লোকজনই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে উসকানি দিয়েছে।
এ ঘটনার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, যে দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ সভা করেছে, এ ধরনের সমাবেশ করা বেআইনি।
‘জি এম কাদের গ্রেপ্তার না হলে সচিবালয় ঘেরাও’
জি এম কাদেরকে গ্রেপ্তার করা না হলে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে নিজের ফেসবুকে আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।
এর আগে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রথম দফা সংঘর্ষের ঘটনার পর নুরুল হক নূর ফেসবুকে এই ঘোষণা দেন।
সেনাবাহিনীর বক্তব্য
সংঘর্ষের ঘটনার পর রাত পৌনে ১টার দিকে সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেইজ থেকে ঘটনা সম্পর্কে ‘ কাকরাইলে দুটি রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে’ শিরোনামে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘আজ রাত আনুমানিক ৮ টায় রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেড়ে গেলে তারা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয় এবং এতে কয়েকজন সদস্য আহত হন।
ঘটনার শুরুতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে স্থান ত্যাগ করার জন্য ও দেশের বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার অনুরোধ জানায়। তবে বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও কতিপয় নেতাকর্মীরা তা উপেক্ষা করে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করে। তারা সংগঠিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় এবং আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে মশাল মিছিলের মাধ্যমে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি করে। এ সময় তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়ারও চেষ্টা চালায়। এছাড়াও বিজয়নগর, নয়াপল্টন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শান্তিপূর্ণ সমাধানের সকল চেষ্টা তারা অগ্রাহ্য করে। ফলস্বরূপ, জননিরাপত্তা রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য আজকের উদ্ভূত ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্য আহত হয়।
সকল ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করছে এবং জনমনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা আনয়নে সকল ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত রয়েছে। জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সর্বদা বদ্ধপরিকর।’

















