ঢাকা ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

শেখ হাসিনার বিরৃুদ্ধে প্রথম রায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড, ১১ মাস পর আরও দুই মামলা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
  • / 245
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার এক মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দেয়া হয়েছে দুই মাসের কারাদণ্ড।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার (২ জুলাইৃ) এই রায় দেয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এগার মাস আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেশান্তরী হওয়ার পর এই প্রথম কেনো মামলায় শেখ হাসিনার সাজা হল।

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের কথিত টেলি আলাপের একটি অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার এই মামলা হয়।

ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়– “আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা জানায়।

এই প্রেক্ষাপটে গত ৩০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনা ও শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন।

সেদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে ১৫ মের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা জবাব দাখিল না করায় ২৫ মে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হননি কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেননি। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারে।

আইন অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় কোনো পক্ষের জন্য সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে’ শেখ হাসিনার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয় আদালত।

এ মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য গত ১৯ জুন এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) দায়িত্ব দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে বুধবার শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিল।

রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে আমরা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আরগুমেন্ট করি এবং অ্যামিকাস কিউরিও আরগুমেন্ট করেন। আমরা আরগুমেন্টে বলেছি, শেখ হাসিনার যে তর্কিত কনভারসেশন, তা পুলিশের সিআইডিকে দিয়ে ফরেনসিক করিয়েছি। তাতে জানা গেছে এই কনভারসেশন এআই জেনারেটেড নয়, অর্থাৎ এটা শেখ হাসিনা এবং শাকিল আকন্দ বুলবুলের। এই কনভারসেশন প্রথমে দৈনিক কালবেলায় রিপোর্ট হয়; পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ হয়।”

তিনি বলেন, “সকলের আরগুমেন্ট শুনে এবং সিআইডির যে ফরেনসিক রিপোর্ট সেটি বিচার বিশ্লেষণ করে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তর্কিত এ কনভারসেশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী, সাক্ষী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ যারা এ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে হত্যা করা এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ তাদের ‘থ্রেট’ করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এবং ১১ এর ৪ ধারা অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়াকে প্রেজুডিস করার অপরাধ করেছেন। এ অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্ল-১ শেখ হাসিনা এবং শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দণ্ডিত করেছেন। যেদিন তারা আত্মসমর্পণ করবেন অথবা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হবেন সেদিন থেকে সাজা কার্যকর হবে।”

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

এ পর্যন্ত তিনটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

জুলাই-অগাস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

১১ মাস পর আরও দুই মামলা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গাজীপুরে কালিয়াকৈরে দুই যুবক নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি হত্যা মামলা হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যায় জড়িত ও প্ররোচনার অভিযোগে সোমবার রাতে কালিয়াকৈর থানায় মামলা দুটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক।

দুটি মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে কালিয়াকৈর থানায় আরও ছয়টি মামলা করা হয়েছিল।

কালিয়াকৈর উপজেলার আন্দারমানিক গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (২০) এবং ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার নাওগাঁও গ্রামের শহিদুল্লাহ গাজীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম গাজী (২৫) নিহতের ঘটনায় মামলা দুটি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছরের ৪ অগাস্ট বিকালে কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার একাডেমির ৩ নম্বর গেটের সামনে ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়। এক পর্যায়ে মিছিলে গুলিবর্ষণ ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন নিহত ও শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয়।

সেখানে গুলিবিদ্ধ হন হাফিজুল ইসলাম। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান তিনি। সেই ঘটনার ১১ মাস পর সোমবার রাতে হাফিজুল ইসলামের বড় ভাই আবদুল হামিদ গাজী কালিয়াকৈর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

মামলা অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি তালহা ইবনে অলি, ছগির আহম্মেদসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অপরদিকে একই দিন উপজেলার সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল্লাহ আল মামুন। পরে তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

পরদিন ৫ অগাস্ট লাশটি শনাক্ত করে বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে মা পারভীন বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। যার কারণে দীর্ঘদিন এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ বা মামলা করেননি।

ঘটনার ১১ মাস পর ৩০ জুন রাতে মামুনের বন্ধু নয়ন মিয়া কালিয়াকৈর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া মামলায় সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার যাবের সাদেক।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শেখ হাসিনার বিরৃুদ্ধে প্রথম রায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড, ১১ মাস পর আরও দুই মামলা

আপডেট সময় : ০৬:৪৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার এক মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দেয়া হয়েছে দুই মাসের কারাদণ্ড।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার (২ জুলাইৃ) এই রায় দেয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এগার মাস আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেশান্তরী হওয়ার পর এই প্রথম কেনো মামলায় শেখ হাসিনার সাজা হল।

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের কথিত টেলি আলাপের একটি অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার এই মামলা হয়।

ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়– “আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা জানায়।

এই প্রেক্ষাপটে গত ৩০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনা ও শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন।

সেদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে ১৫ মের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা জবাব দাখিল না করায় ২৫ মে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হননি কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেননি। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারে।

আইন অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় কোনো পক্ষের জন্য সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে’ শেখ হাসিনার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয় আদালত।

এ মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য গত ১৯ জুন এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) দায়িত্ব দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে বুধবার শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিল।

রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে আমরা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আরগুমেন্ট করি এবং অ্যামিকাস কিউরিও আরগুমেন্ট করেন। আমরা আরগুমেন্টে বলেছি, শেখ হাসিনার যে তর্কিত কনভারসেশন, তা পুলিশের সিআইডিকে দিয়ে ফরেনসিক করিয়েছি। তাতে জানা গেছে এই কনভারসেশন এআই জেনারেটেড নয়, অর্থাৎ এটা শেখ হাসিনা এবং শাকিল আকন্দ বুলবুলের। এই কনভারসেশন প্রথমে দৈনিক কালবেলায় রিপোর্ট হয়; পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ হয়।”

তিনি বলেন, “সকলের আরগুমেন্ট শুনে এবং সিআইডির যে ফরেনসিক রিপোর্ট সেটি বিচার বিশ্লেষণ করে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তর্কিত এ কনভারসেশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী, সাক্ষী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ যারা এ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে হত্যা করা এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ তাদের ‘থ্রেট’ করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এবং ১১ এর ৪ ধারা অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়াকে প্রেজুডিস করার অপরাধ করেছেন। এ অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্ল-১ শেখ হাসিনা এবং শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দণ্ডিত করেছেন। যেদিন তারা আত্মসমর্পণ করবেন অথবা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হবেন সেদিন থেকে সাজা কার্যকর হবে।”

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

এ পর্যন্ত তিনটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

জুলাই-অগাস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

১১ মাস পর আরও দুই মামলা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গাজীপুরে কালিয়াকৈরে দুই যুবক নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি হত্যা মামলা হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যায় জড়িত ও প্ররোচনার অভিযোগে সোমবার রাতে কালিয়াকৈর থানায় মামলা দুটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক।

দুটি মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে কালিয়াকৈর থানায় আরও ছয়টি মামলা করা হয়েছিল।

কালিয়াকৈর উপজেলার আন্দারমানিক গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (২০) এবং ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার নাওগাঁও গ্রামের শহিদুল্লাহ গাজীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম গাজী (২৫) নিহতের ঘটনায় মামলা দুটি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছরের ৪ অগাস্ট বিকালে কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার একাডেমির ৩ নম্বর গেটের সামনে ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়। এক পর্যায়ে মিছিলে গুলিবর্ষণ ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন নিহত ও শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয়।

সেখানে গুলিবিদ্ধ হন হাফিজুল ইসলাম। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান তিনি। সেই ঘটনার ১১ মাস পর সোমবার রাতে হাফিজুল ইসলামের বড় ভাই আবদুল হামিদ গাজী কালিয়াকৈর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

মামলা অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি তালহা ইবনে অলি, ছগির আহম্মেদসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অপরদিকে একই দিন উপজেলার সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল্লাহ আল মামুন। পরে তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

পরদিন ৫ অগাস্ট লাশটি শনাক্ত করে বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে মা পারভীন বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। যার কারণে দীর্ঘদিন এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ বা মামলা করেননি।

ঘটনার ১১ মাস পর ৩০ জুন রাতে মামুনের বন্ধু নয়ন মিয়া কালিয়াকৈর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া মামলায় সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার যাবের সাদেক।