শাহবাগে জুলাই যোদ্ধাদের ‘মারামারি’, সরিয়ে দিলো পুলিশ
- আপডেট সময় : ১১:৩৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫
- / 217

জুলাই সনদের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে টানা ৩০ ঘণ্টা অবস্থানরত জুলাই যোদ্ধাদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। জুলাই যোদ্ধাদের দুটি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টির পর তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জুলাই সংসদের কর্মী ও ওয়ারিয়র্স অব জুলাইয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এসময় একপক্ষ আরেক পক্ষকে ভুয়া বলে অভিহিত করছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর চড়াও হয়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। মুহূর্তেই শাহবাগ মোড়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কড়া অবস্থান নেন এবং উভয় পক্ষকে সরিয়ে দিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো শাহবাগ মোড় স্বাভাবিক করে ফেলা হয়।
জুলাই যোদ্ধাদের একপক্ষের সঙ্গে আরেক পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনরত জুলাই সংসদের কর্মী সোহাগ হোসেন দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “প্রথমে আমাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে ছয়-সাতজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এরা হইচই শুরু করলে পুলিশ আমাদের ওপর লাঠি চার্জ করে।”
পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার মুজাহিদ হাসান নামে আরেকজন বলেন, “পুলিশ আমাদের ওপর অহেতুক লাঠিচার্জ করেছে। বৃহস্পতিবার আমাদের মধ্যে অনেক বহিরাগত প্রবেশ করেছে। তারা আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। আজ পুলিশ উল্টো আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েজনকে আহত করেছে।”
প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক রশিদ মিয়া দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “প্রথমে দেখলাম আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপরে হামলা করেন। এরপর পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে।”
এদিকে ওয়ারিয়র্স অব জুলাইয়ের নেতা নাজমুল হাসান বলেন, “গত দুই দিন ধরে যারা আন্দোলন করছে, জনগণের ভোগান্তি তৈরি করছে তাদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করলে তো অন্যায় বলব না।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার জুলাই যোদ্ধা সংসদের যারা শাহবাগে আন্দোলন করেছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, সাংবাদিকদের ওপরে হামলা করেছে। আজও আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে পুলিশ তাদের উঠিয়ে দেয়।”
শাহবাগ মোড় এড়িয়ে চলছে গণপরিবহন
এদিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচিতে সৃষ্ট দুর্ভোগ এড়াতে গণপরিবহন ও অন্যান্য যানবাহনগুলোকে এই রুটটি এড়িয়ে চলতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর থেকে সূত্রাপুরগামী মালঞ্চ পরিবহনের চালক আতিক রহমান বলেন, “শাহবাগ মোড়ে প্রায়ই আন্দোলন বা সমাবেশ লেগেই থাকে। এই রুট দিয়ে চলাচল এখন মেলা ঝামেলার। যাত্রীরা গাড়ি আটকে গেলে গালি দিয়ে নেমে যেতে পারেন। কিন্তু আমরা চালকরা তো তা পারি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়। কখনো কখনো হামলার শিকারও হই।”
তিনি আরও বলেন, “আজ আমরা বিকল্প রুট দিয়ে চলছি। আগে শাহবাগ হয়ে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সরাসরি যেতে পারতাম। এখন আন্দোলনের কারণে পিজি হাসপাতালের পাশ দিয়ে, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে ইউটার্ন নিয়ে বারডেম হয়ে মৎস্য ভবনের দিকে যেতে হচ্ছে।”
গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী শিকর পরিবহনের চালক আজিজ বলেন, “শাহবাগের আন্দোলনের কারণে এখন কাকরাইল হয়ে ঘুরে যাচ্ছি। এতে সময় ও জ্বালানি দুটোই বেশি লাগছে। তবু আন্দোলনের কারণে এই ত্যাগ মেনে নিচ্ছি।”
শাহবাগ মোড়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে ত্যক্ত বিরক্ত এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা। নতুন এই অবরোধের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মালঞ্চ পরিবহনের যাত্রী আল-আমিন দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “আন্দোলন যদি করতেই হয়, তাহলে শাহবাগ মোড় ছাড়া আর কোথাও করা যায় না? যাদের কাছে দাবি, তাদের অফিসে বা বাড়ির সামনেও তো আন্দোলন করা যেতো! তাহলে সরকার হয়তো দ্রুত দাবি মেনে নিতো।”
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। পুলিশ তাদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও তারা অনড় অবস্থানে ছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। এরপরই সন্ধ্যায় জুলাই যোদ্ধাদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।


















