লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের আধুনিকায়ন এবং সংস্কার প্রস্তাবনা
- আপডেট সময় : ১১:১২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১
- / 1181
“লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব”, ব্রিটেনে বাংলাভাষী সংবাদকর্মীদের সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্ম। নাম দেখে মনে হতে পারে কেবল লন্ডনে বসবাসকারী সাংবাদিকরা এর সদস্য। আদতে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরের সংবাদকর্মী এই স্বনামধন্য ক্লাবের গর্বিত সদস্য। তাহলে এই ক্লাবের নাম কি হওয়া উচিত ছিল “ইউ কে বাংলা প্রেস ক্লাব” নাকি “বিলেত বাংলা প্রেস ক্লাব”? সে তর্কতে না হয় নাইবা গেলাম। উল্লেখ্য এই ক্লাবের জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৭ জুন । বর্তমানে মোট সদস্য সংখ্যা তিনশো আঠারো জন (৩১৮)। ইসি বা কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল সেক্রেটারির পদসহ পনেরো (১৫) জন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দু’বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। আমার যদি ভুল হয়ে না থাকে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। বিশ্বব্যাপী “প্যানডেমিকের” কারণে চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
বরাবরই লক্ষ্য করেছি সাধারণ নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকে। আবির্ভূত হয় পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির। ফলে সাধারণ ভোটাররা পড়ে যান বিপাকে। কারণ দুপক্ষেই থাকেন পছন্দের প্রার্থী। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ ধরণের প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হওয়া উচিত। প্যানেলের কারণে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে যোগ্যতা থাকা সত্বেও অতীতে পরাস্ত হতে দেখেছি। প্যানেল প্রথায় পরিবর্তন এনে প্রাথীরা যদি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তাদের যোগ্যতা যেমনি পরখ করা সম্ভব হবে তেমনি যোগ্য সাংবাদিক জয়ী হবেন নিশ্চয়ই। যা ক্লাবের জন্য নির্দ্বিধায় মঙ্গল বয়ে আনবে। এখন প্যানেল সিস্টেমের ফলে ইসি বা কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অনেকেই যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত না হয়ে বরং ভোটের সংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচিত হচ্ছেন। ক্রমেই ভোট হয়ে উঠেছে মুখ্য বিষয়ে আর প্রার্থীদের গুনাগুন পরিণত হয়েছে গৌণ বিষয়ে।
এ প্রসঙ্গে সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু আলোকপাত করতে চাই। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে “বাংলাদেশের ৫০ বছর, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি” নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক উদয় শঙ্কর দাসের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা আমাকে দারুণভাবে মোহিত করেছে। তেমনি উপভোগ করেছি তিন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ। ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের এর সাবলীল উপস্থাপনা এবং অনুষ্ঠানের শেষে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর চমৎকার সমাপনী বক্তব্য আমার খুব ভালো লেগেছে। এছাড়া গবেষক ফারুক আহমেদের বক্তব্য থেকেও অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অংশটুকু আমি পুরোপুরি উপভোগ করতে পারিনি। যাদের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল গান, কবিতা আবৃত্তি আয়োজনের, তারা যদি এই বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে সাধারণ সদস্যের মধ্যে যারা অভিজ্ঞ ও আগ্রহী তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে কাজ করতেন, তাহলে আরো উন্নতমানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দেয়া সম্ভব হতো। তাদের উচিত ছিল ব্রিটেন বা বাংলাদেশের প্রথিতযশা কণ্ঠ শিল্পীর কণ্ঠে গান পরিবেশনের ব্যবস্থা করা। আগে থেকে আবৃত্তি শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। যখন উপস্থাপক আবৃত্তি করার জন্য আমার নাম ঘোষণা করলেন, তখন আমি রীতিমতো একদিকে যেমনি বিব্রত বোধ করছিলাম অন্যদিকে তেমনি বিরক্ত হয়েছিলাম। কারণ এর আগে এ ব্যাপারে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানের পরে আমার সাথে আরো তিনজন সদস্যের কথা হয়েছে, যারা প্রত্যেকেই ব্রিটেনে অত্যন্ত জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী। তাঁদের সঙ্গেও আগে যোগাযোগ করা হয়নি। যা সত্যি দুঃখজনক। তবে ডক্টর জাকি রেজোয়ানা আনোয়ারের আবৃত্তি অসাধারণ হয়েছে। অন্যদিকে মুনিরা পারভীন – বীরঙ্গনা প্রভা রানীকে যেভাবে উপস্থাপন করেছিলেন, চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেলেও, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে আজও প্রভা রানীর মতো বীরঙ্গনাকে পাঞ্জাবীর বৌ আর তাঁর ছেলে কাজলকে পাঞ্জাবীর ছেলে বলে অপবাদ শুনতে হয়। ধিক্কার রইলো তাদের প্রতি যারা বীরঙ্গনা প্রভা রানীদের সম্মান করতে শেখেনি। এসব তথাকথিত শিক্ষিত মূর্খদের চিহ্নিত করে একঘরে করা উচিত।
সে যাই হোক ক্লাবের কর্ণধারদের উচিত ছিল বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় বক্তাদের কাউকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী নিয়ে কথা বলার জন্য এ অনুষ্ঠানে যুক্ত করা। অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা আর পরিকল্পনার অভাব না থাকলে আরো উন্নত মানের অনুষ্ঠান উপহার দেয়া যেতো বলে আমার এবং অন্যান্য সদস্যের বিশ্বাস।। আশা করি আগামীতে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এসব বিষয়ে আরো মনোযোগী হবেন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য কেউ অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশ্বব্যাপী “প্যানডেমিকের” অজুহাত দেখালে তা ধোপে টিকবে না। বরং এই “প্যানডেমিকের”সময় মানুষের হাতে অফুরন্ত সময় রয়েছে। কেননা অনেকেই অফিসে না গিয়ে বাড়িতে বসে কাজ করছেন। কারো বাড়িতে গিয়ে সামাজিকতা রক্ষা করতে হচ্ছে না। বাইরে গিয়ে বন্ধু বা অন্য কারো সাথে আড্ডা দেয়া সম্ভব না। তাই তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো যেতো বলে আমার সঙ্গে আশা করি অনেকেই একমত হবেন।
তবে এরইমধ্যে “ওয়াটসআপ গ্রূপে” সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়ের, প্রেসিডেন্ট ও ট্রেজারারের পক্ষে “খোলা চিঠির” প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন। কারো কারো ধারণা, যেকোনো ধরণের বিভ্রান্তি এড়াতে সময়মতো খোলা চিঠির উত্তর সাধারণ সদস্যদের সাথে শেয়ার করলে কারো মনে কোনো রকমের সংশয় আর থাকবে না।তবে আমার দেয়া উদাহরণ পড়ে মনে করার কোনো কারন নেই যে, আমি সৈয়দ নাহাস পাশার খোলা চিঠিকে সমর্থন করছি। আমি এও মনে করি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জনাব পাশা খোলা চিঠি না দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বরাবর যদি চিঠি লিখতেন, তাহলে কারো মনেই কোনো ধরণের ক্ষোভ বা অসন্তোষ জমা হতো না।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও কমিউনিটি কর্মী।
আরও পড়ুন-
https://52banglatv.com/2021/03/26908/





















