রেমিটেন্সে ট্রাম্পের কর প্রস্তাব, বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ
- আপডেট সময় : ১১:৫৩:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / 258

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যান্য দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে কর আরোপের যে আইন প্রস্তাব করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা পাস হলে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এতে করে অনানুষ্ঠানিক উপায়ে, বিশেষত হুন্ডি মাধ্যমে, রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়তে পারে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় আঘাত হানবে।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী মঙ্গলবার (২০ মে ২০২৫) দুপুরে বলেন, “যদি ট্রাম্প প্রশাসন রেমিটেন্সের ওপর কর আরোপ করে আইন প্রণয়ন করে, তাহলে প্রবাসীদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। এতে করে তারা বিকল্প পথ, অর্থাৎ অনানুষ্ঠানিকভাবে টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী হবেন।”
তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে রেমিটেন্সের প্রবাহ ভালো ছিল, যা বর্তমান অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। ডলার বাজারও কিছুটা স্থিতিশীল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এই আইন পাস হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে নিরুৎসাহ তৈরি হবে। ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর বসালে অনেকেই আর ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চাইবেন না। তখন হুন্ডির পথেই টাকা পাঠানোর ঝুঁকি বাড়বে। আগে যখন রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছিল, তখনও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছিল যে টাকা আসছিল হুন্ডির মাধ্যমে।”
‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামে এই বিলটির পক্ষে গত রোববার ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ বাজেট কমিটি। এটি আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে উত্থাপিত হতে পারে।
এই বিলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের ওপর ৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আওতায় পড়বেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন ব্যক্তি—যারা কাজ বা ব্যবসার জন্য সেখানে থাকেন, যেমন এইচ-১বি, এফ-১ ভিসাধারী বা গ্রিনকার্ডধারীরা। কোনো ছাড়সীমা উল্লেখ না থাকায়, যেকোনো অঙ্কের অর্থ পাঠালেই কর দিতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।
যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিবার চালানো বা বিনিয়োগের জন্য নিয়মিত অর্থ পাঠান, তাদেরকে এখন আগের চেয়ে বেশি খরচ করে সেই অর্থ দেশে পাঠাতে হতে পারে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২৩ সালের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৩৯৪ কোটি ডলার রেমিটেন্স, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১২ কোটি ডলার এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
তার আগের অর্থবছর (২০২৩–২৪) যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯৬ কোটি ডলার এবং আমিরাত থেকে ৪৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
২০২২–২৩ অর্থবছরেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৫২ কোটি ডলার এবং আমিরাত থেকে ৩৭৬ কোটি ডলার এসেছিল, যা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও প্রথম সর্বোচ্চ।
চলতি অর্থবছরের নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ৩৯৪ কোটি ডলারের ওপর যদি ৫ শতাংশ কর আরোপ হতো, তাহলে প্রবাসীদের ১৯.৭ কোটি ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হতো।
বিলটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঠিক কত পরিমাণ রেমিটেন্স কমবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ খবরটি সদ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের টিম কাজ করছে, কতটা প্রভাব পড়বে তা সময় বলবে।”
রেমিটেন্সে শীর্ষ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, “অনেক দিন ধরেই এই আলোচনা চলছিল—বিদেশি কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য সরকার চাইছে এর একটি অংশ কর হিসেবে ধরে রাখতে।”
তার মতে, অভিবাসনপ্রবণ দেশগুলোয় এই চিন্তাভাবনা তৈরি হয়েছে যে, রেমিটেন্সের ওপর কর আরোপের মাধ্যমে অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও সহায়তা করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রও এখন সেই পথেই হাঁটছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “যারা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন, তারা হয়তো এখন হুন্ডি বা অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক পথে অর্থ পাঠানোর দিকে ঝুঁকবেন। বৈধ পথে পাঠানোর ইচ্ছা থাকলেও করের কারণে অনেকেই বাধ্য হবেন বিকল্প পথ নিতে।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি, কিংবা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পেয়ে থাকি। তাই রেমিটেন্সের ওপর কর আরোপ করলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাবে, যা হুন্ডির মতো চ্যানেলকে উৎসাহিত করবে।”


















