ঢাকা ০৫:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

মুখোমুখি অবস্থানে সরকার ও প্রাথমিকের শিক্ষকরা, পরীক্ষা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:৫২:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 69

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দাবি আদায়ের আন্দোলনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) বর্জন করে লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে শিক্ষকদের শোকজ করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে সরকার। পরীক্ষা না নিলে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এ অবস্থানের পর শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন—দাবি মানা না হলে আন্দোলন চলবে। ফলে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে বছরের শেষ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পে-কমিশনের সুপারিশ লাগবে। সেটিও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের অপেক্ষা করা দরকার ছিল।’’

শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে, এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে—এ প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, ‘শুধু পরীক্ষা বর্জনই নয়, সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেছেন। আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো।’’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষকরা গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ওইদিনই পুলিশের সহিংসতার শিকার হন তারা। এরপর ৯ নভেম্বর থেকে দেশজুড়ে কর্মবিরতি চলতে থাকে। আন্দোলনের তৃতীয় দিন (১০ নভেম্বর) ১১তম গ্রেডের আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকরা।

কিন্তু নভেম্বর শেষে দাবিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৩০ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। ১ ডিসেম্বর হওয়ার কথা ছিল তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা)। এই পরিস্থিতিতে সহকারী শিক্ষকরা মূল্যায়ন বর্জন করেন। যদিও কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকেরা নিজেরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন; তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

পরীক্ষা বর্জনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আন্দোলন নেতৃত্বদানকারী চার শিক্ষক—মো. আবুল কাসেম, মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ, খাইরুন নাহার লিপি এবং মু. মাহবুবুর রহমান—শোকজ হন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘শিক্ষক নেতাদের শোকজ করা হয়েছে। নোয়াখালী জেলায় ২৩ ও ২৫ ব্যাচের সব শিক্ষককে শোকজ করেছেন স্থানীয় শিক্ষা অফিসার।’’

এসব ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখাসহ বিদ্যালয়গুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় শিক্ষক নেতৃত্ব। পাশাপাশি বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রতিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

৩০ নভেম্বর থেকে সহকারী শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি চলছে, আর ১ ডিসেম্বর থেকে তারা তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন বর্জন করছেন।

অন্যদিকে সরকার শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। মূল্যায়ন না নিলে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে গত কয়েক দিন ধরে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, মন্ত্রণালয় ও শিক্ষকদের টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের মানসিক চাপ বাড়ছে; অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন।

মোহাম্মদপুরের এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষকরা আন্দোলন করতেই পারেন। ‘‘কিন্তু শিশুদের পরীক্ষা বন্ধ রেখে, তাদের জিম্মি করে আন্দোলন কেন? এতে শিশুদের মানসিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে, আমরা অভিভাবকরা রয়েছি টেনশনে।’’

আন্দোলন চলবে কিনা জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘‘দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আন্দোলনে গেছেন শিক্ষকরা। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বা দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’’

তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়নের ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সারা বছর লেখাপড়া করিয়েছি, মূল্যায়নও করেছি। দাবি বাস্তবায়ন হলে ডিসেম্বরে ছুটির মধ্যেই তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন করা যাবে। মাত্র আট দিনেই সম্পন্ন সম্ভব—শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না।’’

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘‘আন্দোলন চলবে। প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদও সক্রিয়। আনিচুর রহমান, শাহীনুর আল আমিন, শাহীনুর আক্তারসহ অন্য নেতারাও কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আমাদের বৈঠক হয়েছে।’’

আন্দোলনে আহত হয়ে শিক্ষকের মৃত্যুতে ক্ষোভ

নেতারা জানান, ‘পুলিশি নির্যাতনে আহত চাঁদপুরের মতলব (উত্তর) উপজেলার ৫ নম্বর ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা আক্তারের মৃত্যুতে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। এমনিতেই সরকার আশ্বাস দিয়ে দাবি বাস্তবায়ন করেনি; এরপর আহত শিক্ষকের মৃত্যু সবাইকে মর্মাহত করেছে।’’

মন্ত্রণালয়ের অবস্থান

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি শেষে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া–এই দুটি দাবি এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

৭ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে ১৩তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার অনুরোধ করা হয়। এরপর পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই অর্থ বিভাগ পদক্ষেপ নেবে বলে ১০ নভেম্বরের বৈঠকে জানানো হয়।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এই পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন পরীক্ষা পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করেছেন; কোথাও কোথাও পরীক্ষা নিতে চাওয়া শিক্ষকদের ওপর হামলাও হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া এসব কর্মসূচি সরকারি চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনের পরিপন্থী।

তাই সব সহকারী শিক্ষককে অবিলম্বে কাজে যোগ দিয়ে তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি

১. সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা।
২. চাকরির ১০ ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দূর করা।
৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।

নিউজটি শেয়ার করুন

মুখোমুখি অবস্থানে সরকার ও প্রাথমিকের শিক্ষকরা, পরীক্ষা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ১১:৫২:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

দাবি আদায়ের আন্দোলনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) বর্জন করে লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে শিক্ষকদের শোকজ করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে সরকার। পরীক্ষা না নিলে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এ অবস্থানের পর শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন—দাবি মানা না হলে আন্দোলন চলবে। ফলে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে বছরের শেষ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পে-কমিশনের সুপারিশ লাগবে। সেটিও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের অপেক্ষা করা দরকার ছিল।’’

শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে, এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে—এ প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, ‘শুধু পরীক্ষা বর্জনই নয়, সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেছেন। আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো।’’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষকরা গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ওইদিনই পুলিশের সহিংসতার শিকার হন তারা। এরপর ৯ নভেম্বর থেকে দেশজুড়ে কর্মবিরতি চলতে থাকে। আন্দোলনের তৃতীয় দিন (১০ নভেম্বর) ১১তম গ্রেডের আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকরা।

কিন্তু নভেম্বর শেষে দাবিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৩০ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। ১ ডিসেম্বর হওয়ার কথা ছিল তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা)। এই পরিস্থিতিতে সহকারী শিক্ষকরা মূল্যায়ন বর্জন করেন। যদিও কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকেরা নিজেরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন; তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

পরীক্ষা বর্জনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আন্দোলন নেতৃত্বদানকারী চার শিক্ষক—মো. আবুল কাসেম, মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ, খাইরুন নাহার লিপি এবং মু. মাহবুবুর রহমান—শোকজ হন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘শিক্ষক নেতাদের শোকজ করা হয়েছে। নোয়াখালী জেলায় ২৩ ও ২৫ ব্যাচের সব শিক্ষককে শোকজ করেছেন স্থানীয় শিক্ষা অফিসার।’’

এসব ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখাসহ বিদ্যালয়গুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় শিক্ষক নেতৃত্ব। পাশাপাশি বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রতিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

৩০ নভেম্বর থেকে সহকারী শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি চলছে, আর ১ ডিসেম্বর থেকে তারা তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন বর্জন করছেন।

অন্যদিকে সরকার শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। মূল্যায়ন না নিলে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে গত কয়েক দিন ধরে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, মন্ত্রণালয় ও শিক্ষকদের টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের মানসিক চাপ বাড়ছে; অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন।

মোহাম্মদপুরের এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষকরা আন্দোলন করতেই পারেন। ‘‘কিন্তু শিশুদের পরীক্ষা বন্ধ রেখে, তাদের জিম্মি করে আন্দোলন কেন? এতে শিশুদের মানসিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে, আমরা অভিভাবকরা রয়েছি টেনশনে।’’

আন্দোলন চলবে কিনা জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘‘দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আন্দোলনে গেছেন শিক্ষকরা। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বা দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’’

তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়নের ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সারা বছর লেখাপড়া করিয়েছি, মূল্যায়নও করেছি। দাবি বাস্তবায়ন হলে ডিসেম্বরে ছুটির মধ্যেই তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন করা যাবে। মাত্র আট দিনেই সম্পন্ন সম্ভব—শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না।’’

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘‘আন্দোলন চলবে। প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদও সক্রিয়। আনিচুর রহমান, শাহীনুর আল আমিন, শাহীনুর আক্তারসহ অন্য নেতারাও কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আমাদের বৈঠক হয়েছে।’’

আন্দোলনে আহত হয়ে শিক্ষকের মৃত্যুতে ক্ষোভ

নেতারা জানান, ‘পুলিশি নির্যাতনে আহত চাঁদপুরের মতলব (উত্তর) উপজেলার ৫ নম্বর ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা আক্তারের মৃত্যুতে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। এমনিতেই সরকার আশ্বাস দিয়ে দাবি বাস্তবায়ন করেনি; এরপর আহত শিক্ষকের মৃত্যু সবাইকে মর্মাহত করেছে।’’

মন্ত্রণালয়ের অবস্থান

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি শেষে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া–এই দুটি দাবি এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

৭ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে ১৩তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার অনুরোধ করা হয়। এরপর পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই অর্থ বিভাগ পদক্ষেপ নেবে বলে ১০ নভেম্বরের বৈঠকে জানানো হয়।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এই পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন পরীক্ষা পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করেছেন; কোথাও কোথাও পরীক্ষা নিতে চাওয়া শিক্ষকদের ওপর হামলাও হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া এসব কর্মসূচি সরকারি চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনের পরিপন্থী।

তাই সব সহকারী শিক্ষককে অবিলম্বে কাজে যোগ দিয়ে তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি

১. সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা।
২. চাকরির ১০ ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দূর করা।
৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।