ঢাকা ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

মাথাপিছু আয় ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮২০ ডলার, নেপথ্যে প্রবাসী আয়
বিবিএসের সাময়িক হিসাব

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:১০:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / 247
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮২০ ডলারে—এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

মঙ্গলবার (২৭ মে ২০২৫) প্রকাশিত সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। এর আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালে এই আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। এর আগের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় রেকর্ড হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার।

বিবিএসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাওয়ায় মাথাপিছু আয়ে এ উল্লম্ফন ঘটেছে।

এদিন সাত মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবিএস চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, মাথাপিছু আয় এবং খাতভিত্তিক উৎপাদনের প্রাক্কলিত হিসাব প্রকাশ করে। এই হিসাব চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাময়িক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মাথাপিছু আয় বলতে কোনো ব্যক্তির একক আয় বোঝানো হয় না। দেশের অভ্যন্তরীণ আয় এবং প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় আয়কে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভাগ করে এই পরিমাপ করা হয়।

তবে মাথাপিছু আয় বাড়লেও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধাক্কা লেগেছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ, যা ছিল তখনকার চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এই প্রবৃদ্ধির হার উন্নয়ন সহযোগী বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসের কাছাকাছি। আগেই সংস্থা দুটি জানিয়েছিল, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে থাকতে পারে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। কিন্তু এরপরই আসে কোভিড মহামারী। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। সেই হিসেবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম।

একটি দেশে বছরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মোট পরিমাণ থেকেই জিডিপির হিসাব নির্ধারিত হয়।

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশের মোট জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৪৬২ বিলিয়ন ডলার বা ৫৫ হাজার ৫২৮ বিলিয়ন টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ২৯ পয়সা ধরে)। আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালে জিডিপির আকার ছিল ৪৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫০ হাজার ২৭ বিলিয়ন টাকা।

এ বছর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শুরুতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সরকার পরিবর্তনের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন, অবরোধ ও সংঘাতের পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সাময়িক হিসাবে বিবিএস আরও জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপির বিপরীতে বিনিয়োগের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ।

সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বিশ্লেষকদের মতে, বছরের শেষ পর্যন্ত এর রেশ অর্থনীতিতে থেকে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাথাপিছু আয় ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮২০ ডলার, নেপথ্যে প্রবাসী আয়
বিবিএসের সাময়িক হিসাব

আপডেট সময় : ১১:১০:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮২০ ডলারে—এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

মঙ্গলবার (২৭ মে ২০২৫) প্রকাশিত সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। এর আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালে এই আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। এর আগের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় রেকর্ড হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার।

বিবিএসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাওয়ায় মাথাপিছু আয়ে এ উল্লম্ফন ঘটেছে।

এদিন সাত মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবিএস চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, মাথাপিছু আয় এবং খাতভিত্তিক উৎপাদনের প্রাক্কলিত হিসাব প্রকাশ করে। এই হিসাব চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাময়িক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মাথাপিছু আয় বলতে কোনো ব্যক্তির একক আয় বোঝানো হয় না। দেশের অভ্যন্তরীণ আয় এবং প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় আয়কে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভাগ করে এই পরিমাপ করা হয়।

তবে মাথাপিছু আয় বাড়লেও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধাক্কা লেগেছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ, যা ছিল তখনকার চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এই প্রবৃদ্ধির হার উন্নয়ন সহযোগী বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসের কাছাকাছি। আগেই সংস্থা দুটি জানিয়েছিল, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে থাকতে পারে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। কিন্তু এরপরই আসে কোভিড মহামারী। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। সেই হিসেবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম।

একটি দেশে বছরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মোট পরিমাণ থেকেই জিডিপির হিসাব নির্ধারিত হয়।

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশের মোট জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৪৬২ বিলিয়ন ডলার বা ৫৫ হাজার ৫২৮ বিলিয়ন টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ২৯ পয়সা ধরে)। আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালে জিডিপির আকার ছিল ৪৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫০ হাজার ২৭ বিলিয়ন টাকা।

এ বছর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শুরুতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সরকার পরিবর্তনের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন, অবরোধ ও সংঘাতের পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সাময়িক হিসাবে বিবিএস আরও জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপির বিপরীতে বিনিয়োগের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ।

সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বিশ্লেষকদের মতে, বছরের শেষ পর্যন্ত এর রেশ অর্থনীতিতে থেকে যাবে।