ঢাকা ০৫:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

মাঝখানের মানুষ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মে ২০২১
  • / 1957
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
শিরোনামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অগত্যা এই ছবিতেও তিনি মাঝখানে। একবার তিনি মা-বোনের সম্মান রক্ষার জন্য, মানুষের জন্য, দেশমাতৃকার জন্য, স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার জন্য মাঝখান থেকে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন। জীবনকে মুঠোয় রেখে মৃত্যুর কাছে এগিয়ে; একাত্তরে : মহান মুক্তিযুদ্ধে। তিনি আব্দুল মালিক ফারুক। আমাদের সকলের প্রিয় ফারুক ভাই৷ গল্পকার। ছড়াকার। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য নিয়ে প্রবল উৎসাহী আমাদের ফারুক ভাই।
বন্ধুদের মধ্যে যত ঝগড়া হোক, তর্ক থেকে যতই তিক্ততা হোক, অন্যকে প্রবলভাবে পরাভূত করে বিজয়ী হাসি দিয়ে কেউ কেউ যতই উল্লাসে মত্ত হোক, ফারুক ভাই নির্বিকার থেকে অবধারিতভাবে মাঝখান থেকে অপ্রস্তুত বন্ধুর দলভুক্ত হয়ে যান।
এতো এতো দীর্ঘ বছর থেকে ফারুক ভাইকে জানি; অথচ, আজতক এক মুহূর্তের জন্য তাঁকে রেগে যেতে দেখিনি। কখনোই তাঁকে মুখ কালো করে বসে থাকতে দেখিনি। এক আশ্চর্য অমিত খুশি ও স্বস্তির ফোয়ারা তাঁর অবয়বে, সান্নিধ্যে, স্বভাবে।
মনে আছে আমরা তখন তুমুল আড্ডায় খারিজ করে দিচ্ছি কোন কোন কবি কিংবা সাহিত্যিকের দেশব্যাপি খ্যাতির অভিধা। প্রবল প্রতাপে আমাদেরই কেউ কেউ বোদলেয়ার, রঁদা, নেরুদা হিসেবে নিজেদের বলয়ে পরিচিত কিংবা পরস্পরের দ্বারা চিহ্নিত। এ নিছকই আমাদের নিজেদের বলয়ে আনন্দের ডাকনাম। সেই সময়ে আল-আমিন প্রেস কিংবা চমচম মিষ্টিঘরই আমাদের জন্য ‘ক্যাফে দ্য জেনি’। ‘কাফে দ্য জেনির’ আদলে চমচম মিষ্টিঘরকে পরিচিত করার অন্যতম প্রধান রূপকার আমাদের ফারুক ভাই। এমনকি তিনি ‘চমচমের আড্ডা’ শিরোনামে একটি গল্পও লিখলেন। যদিও গল্পটি আমাদের প্রিয় এনায়েত সারোয়ার ভাইয়ের উচ্চ শিক্ষার্থী হয়ে লণ্ডন চলে যাওয়ার প্রাক্কালে আমাদের মনোকষ্টের ছবিটিকেই প্রধান উপজীব্য করেছেন গল্পকার; তবুও চমচমের আড্ডাধারীদের কিঞ্চিৎ বৈশিষ্ট্য ও বৈদগ্ধটিও রেখাপাত করেছেন তিনি। গল্পটি প্রাচীন পত্রিকা ‘যুগভেরী’র সাহিত্য পাতায় ছাপা হলে চমচমের আড্ডার খ্যাতি আরো বেড়ে যায়।
আমাদের বন্ধুবলয়ে ফারুক ভাই মধ্যযুগের সাহিত্য নিয়ে প্রবল উৎসাহী হওয়ায় সেই সময়ে আমরা তাঁকে ‘মধ্যযুগ’ ডাকতাম। এতে ফারুক ভাইয়ের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না কখনোই। বরং তিনি খুশিই হতেন। আমরা যারা ফারুক ভাইয়ের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি, বয়সে ফারুক ভাই আমাদের অনেকেরই অনেক বছর বড়। অথচ, তিনিই আমাদের সবার নির্ভরতার স্বস্তি, সান্নিধ্যের আনন্দ ও স্বজন-সঙ্গের সুখ।
অনেক মহাদেশ মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ বছর থেকে অনেক অনেক দূরের দেশে আমাদেরই ইদানিং বসবাস। অন্য আর কারো এরকম হয় কি না জানি না, আমার খুব ফেলে আসা উদ্দাম দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। অবধারিতভাবে কখনো কখনো ফারুক ভাইয়ের মুখটিও মনে পড়ে। আমার মন বলে, ফারুক ভাই এক মায়ার বাঁধনে আমাকে বেঁধে রেখেছেন। এ এমন এক সুতোর বাঁধন, যা অদৃশ্য অথচ অবিচ্ছেদ্য। যা রক্তের সঙ্গে সম্পর্কহীন; অথচ, যা পরস্পরের রক্তপাতের কষ্টে জর্জরিত, রক্তপ্রবাহে আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার মতো উচ্ছ্বাসময়। আমি বহুবার নিজের কাছে প্রশ্ন করেছি : কেন এমন হয়? এজন্যই হয়, ফারুক ভাইয়ের কাছে নিজেকে অবলীলায় প্রকাশ করা যায়। নিজের যা কিছু মূল্য কিংবা মলিনতা, নিজের যা কিছু গৌরব কিংবা গর্হিত অপরাধ, নিজের যা কিছু স্বাচ্ছন্দ কিংবা অস্বচ্ছলতা, নিজের যা কিছু পিছুটান কিংবা অপ্রাপ্তি সবই ফারুক ভাইয়ের কাছে দ্বিধাহীনভাবে ভাগ করে নেওয়া যায়। তিনি সেই অভয়টি দিয়েছেন তাঁর প্রাণখোলা স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মোড়ানো হৃদয়টি খুলে৷ যেখানে বাস করে এক চঞ্চলপ্রাণ শিশু। চিরকালের জন্য যে নিষ্পাপ, নিঃশঙ্ক ও নিরাপদ। এমন মানুষকে কী ভুলে থাকা যায়! আব্দুল মালিক ফারুক, প্রিয় ফারুক ভাই, আপনাকে অনেক ভালোবাসি!
শুভ জন্মদিন!

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাঝখানের মানুষ

আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মে ২০২১
শিরোনামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অগত্যা এই ছবিতেও তিনি মাঝখানে। একবার তিনি মা-বোনের সম্মান রক্ষার জন্য, মানুষের জন্য, দেশমাতৃকার জন্য, স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার জন্য মাঝখান থেকে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন। জীবনকে মুঠোয় রেখে মৃত্যুর কাছে এগিয়ে; একাত্তরে : মহান মুক্তিযুদ্ধে। তিনি আব্দুল মালিক ফারুক। আমাদের সকলের প্রিয় ফারুক ভাই৷ গল্পকার। ছড়াকার। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য নিয়ে প্রবল উৎসাহী আমাদের ফারুক ভাই।
বন্ধুদের মধ্যে যত ঝগড়া হোক, তর্ক থেকে যতই তিক্ততা হোক, অন্যকে প্রবলভাবে পরাভূত করে বিজয়ী হাসি দিয়ে কেউ কেউ যতই উল্লাসে মত্ত হোক, ফারুক ভাই নির্বিকার থেকে অবধারিতভাবে মাঝখান থেকে অপ্রস্তুত বন্ধুর দলভুক্ত হয়ে যান।
এতো এতো দীর্ঘ বছর থেকে ফারুক ভাইকে জানি; অথচ, আজতক এক মুহূর্তের জন্য তাঁকে রেগে যেতে দেখিনি। কখনোই তাঁকে মুখ কালো করে বসে থাকতে দেখিনি। এক আশ্চর্য অমিত খুশি ও স্বস্তির ফোয়ারা তাঁর অবয়বে, সান্নিধ্যে, স্বভাবে।
মনে আছে আমরা তখন তুমুল আড্ডায় খারিজ করে দিচ্ছি কোন কোন কবি কিংবা সাহিত্যিকের দেশব্যাপি খ্যাতির অভিধা। প্রবল প্রতাপে আমাদেরই কেউ কেউ বোদলেয়ার, রঁদা, নেরুদা হিসেবে নিজেদের বলয়ে পরিচিত কিংবা পরস্পরের দ্বারা চিহ্নিত। এ নিছকই আমাদের নিজেদের বলয়ে আনন্দের ডাকনাম। সেই সময়ে আল-আমিন প্রেস কিংবা চমচম মিষ্টিঘরই আমাদের জন্য ‘ক্যাফে দ্য জেনি’। ‘কাফে দ্য জেনির’ আদলে চমচম মিষ্টিঘরকে পরিচিত করার অন্যতম প্রধান রূপকার আমাদের ফারুক ভাই। এমনকি তিনি ‘চমচমের আড্ডা’ শিরোনামে একটি গল্পও লিখলেন। যদিও গল্পটি আমাদের প্রিয় এনায়েত সারোয়ার ভাইয়ের উচ্চ শিক্ষার্থী হয়ে লণ্ডন চলে যাওয়ার প্রাক্কালে আমাদের মনোকষ্টের ছবিটিকেই প্রধান উপজীব্য করেছেন গল্পকার; তবুও চমচমের আড্ডাধারীদের কিঞ্চিৎ বৈশিষ্ট্য ও বৈদগ্ধটিও রেখাপাত করেছেন তিনি। গল্পটি প্রাচীন পত্রিকা ‘যুগভেরী’র সাহিত্য পাতায় ছাপা হলে চমচমের আড্ডার খ্যাতি আরো বেড়ে যায়।
আমাদের বন্ধুবলয়ে ফারুক ভাই মধ্যযুগের সাহিত্য নিয়ে প্রবল উৎসাহী হওয়ায় সেই সময়ে আমরা তাঁকে ‘মধ্যযুগ’ ডাকতাম। এতে ফারুক ভাইয়ের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না কখনোই। বরং তিনি খুশিই হতেন। আমরা যারা ফারুক ভাইয়ের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি, বয়সে ফারুক ভাই আমাদের অনেকেরই অনেক বছর বড়। অথচ, তিনিই আমাদের সবার নির্ভরতার স্বস্তি, সান্নিধ্যের আনন্দ ও স্বজন-সঙ্গের সুখ।
অনেক মহাদেশ মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ বছর থেকে অনেক অনেক দূরের দেশে আমাদেরই ইদানিং বসবাস। অন্য আর কারো এরকম হয় কি না জানি না, আমার খুব ফেলে আসা উদ্দাম দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। অবধারিতভাবে কখনো কখনো ফারুক ভাইয়ের মুখটিও মনে পড়ে। আমার মন বলে, ফারুক ভাই এক মায়ার বাঁধনে আমাকে বেঁধে রেখেছেন। এ এমন এক সুতোর বাঁধন, যা অদৃশ্য অথচ অবিচ্ছেদ্য। যা রক্তের সঙ্গে সম্পর্কহীন; অথচ, যা পরস্পরের রক্তপাতের কষ্টে জর্জরিত, রক্তপ্রবাহে আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার মতো উচ্ছ্বাসময়। আমি বহুবার নিজের কাছে প্রশ্ন করেছি : কেন এমন হয়? এজন্যই হয়, ফারুক ভাইয়ের কাছে নিজেকে অবলীলায় প্রকাশ করা যায়। নিজের যা কিছু মূল্য কিংবা মলিনতা, নিজের যা কিছু গৌরব কিংবা গর্হিত অপরাধ, নিজের যা কিছু স্বাচ্ছন্দ কিংবা অস্বচ্ছলতা, নিজের যা কিছু পিছুটান কিংবা অপ্রাপ্তি সবই ফারুক ভাইয়ের কাছে দ্বিধাহীনভাবে ভাগ করে নেওয়া যায়। তিনি সেই অভয়টি দিয়েছেন তাঁর প্রাণখোলা স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মোড়ানো হৃদয়টি খুলে৷ যেখানে বাস করে এক চঞ্চলপ্রাণ শিশু। চিরকালের জন্য যে নিষ্পাপ, নিঃশঙ্ক ও নিরাপদ। এমন মানুষকে কী ভুলে থাকা যায়! আব্দুল মালিক ফারুক, প্রিয় ফারুক ভাই, আপনাকে অনেক ভালোবাসি!
শুভ জন্মদিন!