মব আতঙ্কে শাহপরান মাজারের ওরসে শিরনি বিতরণ বন্ধ!
- আপডেট সময় : ০১:০৮:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
- / 224
সাত শতাব্দীর ঐতিহ্য বহন করছে সিলেটের হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার শরীফের বাৎসরিক পবিত্র ওরস। খতমে কোরআন, দোয়া, জিকির, মিলাদ, গিলাফ চড়ানো, গরু জবাই, ফাতেহা পাঠ এবং শেষ দিন ফজরের নামাজের পর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় ওরস। এরপর শিরনি বিতরণ ছিল অন্যতম আয়োজন। তবে এবার মবের আশঙ্কায় শিরনি বিতরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাজার কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের নির্দেশে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান মাজারের খাদেম আব্দুল আজিজ।
প্রশাসনের দাবি, ওরসকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব-৯, সেনাবাহিনী, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম আর্মি ক্যাম্প, সিটি কর্পোরেশন, সিভিল সার্জন অফিস, ফায়ার সার্ভিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইমাম সমিতি, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি, মাজার কমিটি, মোতাওয়াল্লি ও খাদেমদের অংশগ্রহণে সমন্বয়সভা করেছে পুলিশ।
সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাজার ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারি করা হবে। এছাড়া প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
৭০০ বছরের ইতিহাসে এর আগে কেবল করোনা মহামারির কারণে একবার শিরনি বিতরণ বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু এবার মবের ভয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষাকারী সংগঠন ও নাগরিক সমাজ।
শাহপরান (রহ.) মাজারের খাদেম আব্দুল আজিজ বলেন, ‘প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে সভায় আমাদের জানানো হয় শিরনি বিতরণে মারামারি হয়, তাই এ বছর শিরনি বিতরণ করা যাবে না। অথচ আগে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এখন বলা হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। তাই আমাদের কিছু করার নেই, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে।’
পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রেজাউল কিবরিয়া বলেন, ‘আমি কখনো শুনিনি শাহপরান মাজারে শিরনি বিতরণ নিয়ে মারামারি হয়েছে। এবার যদি মবের অজুহাতে তা বন্ধ করা হয়, তাহলে এটা অন্যায় সিদ্ধান্ত। ওরসের শিরনি শুধু ধর্মীয় আচার নয়, সংস্কৃতিরও অংশ। সরকারের দায়িত্ব ঐতিহ্য রক্ষা করা।’
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.) মাজারের ওরসের অন্যতম প্রধান বিষয় শিরনি বিতরণ। ধনী-গরিব সবাই এতে অংশ নেন। বিশেষত দরিদ্ররা এখানে খাবারের সুযোগ পান। এত নিরাপত্তার মধ্যেও যদি শিরনি বিতরণ বন্ধ হয়, তা অবশ্যই দুঃখজনক।’
সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হাই আল হাদী বলেন, ‘শিরনি বিতরণ বন্ধ করা মাথা ব্যথায় মাথা কেটে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত। ওরসের শিরনির সঙ্গে মানুষের আবেগ ও মানতের বিষয় জড়িত। তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের মধ্য দিয়েই এ আয়োজন চালু রাখা উচিত ছিল।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিমকে ফোনে পাওয়া না গেলেও তিনি দুদিন আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘ওরস চলাকালীন মাজারের পবিত্রতা ও ধর্মীয় মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হবে। নাচ-গানসহ কোনো অনৈসলামিক কার্যকলাপ ঘটতে দেওয়া হবে না।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার শরীফের ওরস নিয়ে কেউ আমার কাছে আসেনি। আইনশৃঙ্খলার স্বার্থেই হয়তো এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে।’

















