বিনা খরচে ১২ হাজার সাঁতারু গড়ে তুলেছেন মাসুদ রানা
- আপডেট সময় : ০৭:৫৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
- / 309

কোনও ক্লাব সাঁতারু খুঁজে পাচ্ছে না? সমাধান একটাই—মাসুদ রানাকে ফোন করুন। সাঁতারু শেষ মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে পড়েছে? সহায়তা পাবেন মাসুদ রানার কাছ থেকে। যে কোনও প্রতিযোগিতার আগে ক্লাবগুলো তার কাছে চুক্তিভিত্তিক সাঁতারুর সন্ধান করে। যেন সব সময় সাঁতারু প্রস্তুত রেখেই থাকেন বগুড়ার এই নিবেদিতপ্রাণ কোচ।
মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে পা রাখলেই দেখা যাবে মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী নীলুফার ইয়াসমিনকে। মাসুদের হাতে স্টপওয়াচ, মুখভর্তি পান, হাসিমুখে কথা বলেন সবার সঙ্গে। পুলের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়ান সময় মাপতে, পদকের খোঁজে, ক্লাবগুলোর ফলাফল জানতে। চলছে ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা, যেখানে মাসুদ রানা এনেছেন ১৫ জন সাঁতারু।
বগুড়ার সাতমাথা পার্ক পুকুরে সারা বছর অনুশীলন করান একদল সাঁতারুকে। একসময় সাতমাথা গোয়াল রোডে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করতেন মাসুদ রানা। সেই পেশা ছেড়ে এখন সম্পূর্ণ সময় দেন সাঁতারু তৈরিতে।
বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় তার হাতে গড়া সাঁতারুরা এ পর্যন্ত ১০৪টি স্বর্ণপদক অর্জন করেছে। তবু কোনও ছাত্রের কাছ থেকে তিনি অর্থ নেন না। মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “একেবারে বিনামূল্যে শেখাই। বগুড়ার ভাষায় বললে—মাগনা। আমি সাঁতার শেখাতে কোনও অর্থ নিই না। যতদিন বাঁচি, এটা করেই যাব। বড় বড় দলকে অনেক স্বর্ণপদক দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমার ছেলে-মেয়েরা ১০৪টি সোনা জিতেছে, এর মধ্যে ২২টিতে রেকর্ড হয়েছে।”
সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার সাঁতারু তৈরি করেছেন মাসুদ রানা। গর্বভরে বলেন, “এ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ও জাতীয় পর্যায়ে ১২,২৩৭ জনকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে তৈরি করেছি। সবাইকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কোনও দান-ডোনেশন নিইনি। এমনকি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছ থেকেও সহায়তা পাইনি।”
সাঁতার যেন তার নেশা, “এটা এখন একটা নেশার মতো। অনেক সময় ঘুম আসে না। বাচ্চাদের কাছে ছুটে যাই। শীতে ৩০ মিনিট পানিতে এবং ল্যান্ডিং (জমিতে অনুশীলন) করাই আড়াই ঘণ্টা। বাকি সময়ে সকালে ৩ ঘণ্টা, বিকেলে ২ ঘণ্টা অনুশীলন করাই।”
১৯৮৮ সাল থেকে কোচিং করাচ্ছেন মাসুদ রানা। এর আগে নিজেও সাঁতারু ছিলেন। সাফল্য এসেছে পরে। “২০১৭ সাল থেকে আমার সাঁতারুরা সোনা জিততে শুরু করে। এখন পর্যন্ত দুজন আমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাঁতারু ‘সেরা সাঁতারু’র পুরস্কার পেয়েছে।”
তার এক ছাত্র মরিয়ম খাতুন ভেঙেছেন এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাহফুজা খাতুন শিলার রেকর্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও আনসারে কর্মসংস্থান হয়েছে তার অনেক ছাত্রের।
এখন মাসুদ রানার একটাই স্বপ্ন, “আমার কোনো সাঁতারু যদি এসএ গেমসে সোনা জিততে পারে, তবে এত দিনের কষ্ট সার্থক হবে।”
এমন নিবেদিতপ্রাণ তৃণমূল কোচদের কারণেই এখনও মিরপুর সুইমিং পুলে প্রতিদিন ভিড় করে হাজারো কিশোর-কিশোরী। হয়তো তাদেরই হাত ধরে একদিন এসএ গেমসে উঠবে লাল-সবুজের গর্বের সোনালি পদক।


















