ঢাকা ০৬:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বাংলা একাডেমির লেখক ক্লাব ‘দখল’!

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
  • / 172

বাংলা একাডেমি লেখক ক্লাব

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলা একাডেমিতে ‘লেখক ক্লাব’ নামে নতুন একটি কক্ষ উদ্বোধনের আগেই সেটি দখলের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একাডেমির আজীবন সদস্য আকবর আলী সিরাজীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এসেছে।

কর্মকর্তারা জানান, সিরাজী কয়েকজনকে নিয়ে এসে কক্ষে ‘নিজস্ব তালা’ লাগান এবং নিরাপত্তাকর্মীর কাছে একটি চাবি দিয়ে যান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আকবর সিরাজী বলেন, “আমি তালা দেই নাই। আমি তালা দেব কেন? তালা দিয়ে থাকলে বাংলা একাডেমির কেয়ারটেকারই তালা দিছে।”

একাডেমির পক্ষের অভিযোগ

একাডেমির কর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাষা প্রশিক্ষণ উপবিভাগ ও নির্মাণাধীন লেখক কেন্দ্রের মূল ফটকে তালা দেন সিরাজীর লোকজন।

ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সিরাজীকে চিঠি দিয়ে পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলে। তবে সিরাজীর দাবি, তিনি এখনো কোনো চিঠি পাননি।

প্রাপ্ত চিঠিতে লেখা হয়েছে—“জাতির মননের প্রতীক বাংলা একাডেমির আপনি একজন সম্মানিত জীবনসদস্য। একাডেমির ভাবমূর্তি রক্ষায় আপনার দায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আপনার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে একাডেমি কর্তৃপক্ষ বারবার বিব্রত হচ্ছে।

“ইতিপূর্বেও, বিশেষ করে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আপনি দলবলসহ একাডেমিতে এসে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন। আপনার এসব কর্মকাণ্ড একাডেমির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।”

চিঠিতে আরও বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ড একাডেমির স্বার্থ ও আদর্শের পরিপন্থি। বিষয়টি নির্বাহী পরিষদে তোলা হবে।

সচিবের বক্তব্য

বাংলা একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, “আকবর সিরাজী গতকাল কিছু লোক নিয়ে নির্মাণাধীন লেখক কেন্দ্রের ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এতে পাশের অফিসগুলোও তালাবদ্ধ হয়ে যায়।

“লেখক ক্লাব এখনো উদ্বোধন হয়নি। কিছু ফার্নিচার কেনা হলেও সেগুলো ঠিকভাবে বসানো হয়নি। অথচ তিনি নিজে সেগুলো সাজিয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে বলেছেন, এখন থেকে এটি তাদের সংগঠনের অফিস হিসেবে ব্যবহার করবেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ফোনে কথা বলেছি, পরে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী তিনি এমনটা করতে পারেন না। আমরা তালা খুলে আমাদের তালা দিয়েছি।”

সেলিম রেজার দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই সিরাজী নানা ‘তদবির’ চালিয়ে আসছেন। “গত বইমেলায় তিনি বসার জায়গা চেয়েছিলেন, বলেছেন তাদের ২০/৩০ জন এখানে বসবেন। এমনকি বিভিন্নজনকে জীবনসদস্য করার সুপারিশও করেছেন।”

অন্য কর্মকর্তারা বলেন, সিরাজী একাধিকবার একাডেমিতে ‘মব’ তৈরির চেষ্টা করেছেন এবং ধমকধামকি দিয়ে বেআইনি সুবিধা নিতে চেয়েছেন।

আরও অভিযোগ

  • নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিলেও বাস্তবে কোনো পদে নেই।

  • শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করেছেন, কিন্তু ভাড়া পরিশোধ করেননি।

  • একাডেমির লোগো ব্যবহার করে সংগঠন গড়ে তুলেছেন, যা বিধিসম্মত নয়। সেই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— গুরুত্বপূর্ণ কোনো সাহিত্যকর্ম না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি বাংলা একাডেমির জীবনসদস্য হলেন।

মহাপরিচালকের প্রতিক্রিয়া

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “লেখক কেন্দ্রের কক্ষে আকবর সিরাজী তালা দিয়ে নিরাপত্তাকর্মীর কাছে চাবি দিয়ে যান। কেন তা করেছেন, জানতে আমরা তাকে চিঠি দিয়েছি।”

থানায় কোনো জিডি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো কোনো জিডি করা হয়নি।”

অধ্যাপক আজম আরও জানান, “লেখক ক্লাব চালু করার প্রস্তুতি চলছে, তবে এখনো উদ্বোধন হয়নি। পরিচালনার নিয়মও চূড়ান্ত হয়নি।”

সিরাজীর বক্তব্য

আকবর সিরাজী বলেন, “আমরা বলছি, এটা খোলা থাকে। বহিরাগতরা এসে বসে, সিগারেট খায়, গাঁজাও খায়। এজন্যই হয়তো কেয়ারটেকার তালা দিয়েছেন।”

নারী কর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “তারা তো আমাদের পরিবারের মতো। কেউ ছোট বোন, কেউ বড় বোন, কেউ মেয়ে সমতুল্য। অসৌজন্যমূলক আচরণ সম্ভব?”

রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজী বলেন, “ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছি, এখন করি না। এখন লেখালেখিই করি। কলাম লিখি। শত শত কলাম প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়।”

তিনি জানান, ‘দৈনিক দেশ জগৎ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং নিয়মিত দৈনিক ইত্তেফাকদৈনিক ইনকিলাব-এ কলাম লেখেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলা একাডেমির লেখক ক্লাব ‘দখল’!

আপডেট সময় : ১০:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

বাংলা একাডেমিতে ‘লেখক ক্লাব’ নামে নতুন একটি কক্ষ উদ্বোধনের আগেই সেটি দখলের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একাডেমির আজীবন সদস্য আকবর আলী সিরাজীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এসেছে।

কর্মকর্তারা জানান, সিরাজী কয়েকজনকে নিয়ে এসে কক্ষে ‘নিজস্ব তালা’ লাগান এবং নিরাপত্তাকর্মীর কাছে একটি চাবি দিয়ে যান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আকবর সিরাজী বলেন, “আমি তালা দেই নাই। আমি তালা দেব কেন? তালা দিয়ে থাকলে বাংলা একাডেমির কেয়ারটেকারই তালা দিছে।”

একাডেমির পক্ষের অভিযোগ

একাডেমির কর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাষা প্রশিক্ষণ উপবিভাগ ও নির্মাণাধীন লেখক কেন্দ্রের মূল ফটকে তালা দেন সিরাজীর লোকজন।

ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সিরাজীকে চিঠি দিয়ে পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলে। তবে সিরাজীর দাবি, তিনি এখনো কোনো চিঠি পাননি।

প্রাপ্ত চিঠিতে লেখা হয়েছে—“জাতির মননের প্রতীক বাংলা একাডেমির আপনি একজন সম্মানিত জীবনসদস্য। একাডেমির ভাবমূর্তি রক্ষায় আপনার দায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আপনার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে একাডেমি কর্তৃপক্ষ বারবার বিব্রত হচ্ছে।

“ইতিপূর্বেও, বিশেষ করে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আপনি দলবলসহ একাডেমিতে এসে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন। আপনার এসব কর্মকাণ্ড একাডেমির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।”

চিঠিতে আরও বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ড একাডেমির স্বার্থ ও আদর্শের পরিপন্থি। বিষয়টি নির্বাহী পরিষদে তোলা হবে।

সচিবের বক্তব্য

বাংলা একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, “আকবর সিরাজী গতকাল কিছু লোক নিয়ে নির্মাণাধীন লেখক কেন্দ্রের ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এতে পাশের অফিসগুলোও তালাবদ্ধ হয়ে যায়।

“লেখক ক্লাব এখনো উদ্বোধন হয়নি। কিছু ফার্নিচার কেনা হলেও সেগুলো ঠিকভাবে বসানো হয়নি। অথচ তিনি নিজে সেগুলো সাজিয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে বলেছেন, এখন থেকে এটি তাদের সংগঠনের অফিস হিসেবে ব্যবহার করবেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ফোনে কথা বলেছি, পরে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী তিনি এমনটা করতে পারেন না। আমরা তালা খুলে আমাদের তালা দিয়েছি।”

সেলিম রেজার দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই সিরাজী নানা ‘তদবির’ চালিয়ে আসছেন। “গত বইমেলায় তিনি বসার জায়গা চেয়েছিলেন, বলেছেন তাদের ২০/৩০ জন এখানে বসবেন। এমনকি বিভিন্নজনকে জীবনসদস্য করার সুপারিশও করেছেন।”

অন্য কর্মকর্তারা বলেন, সিরাজী একাধিকবার একাডেমিতে ‘মব’ তৈরির চেষ্টা করেছেন এবং ধমকধামকি দিয়ে বেআইনি সুবিধা নিতে চেয়েছেন।

আরও অভিযোগ

  • নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিলেও বাস্তবে কোনো পদে নেই।

  • শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করেছেন, কিন্তু ভাড়া পরিশোধ করেননি।

  • একাডেমির লোগো ব্যবহার করে সংগঠন গড়ে তুলেছেন, যা বিধিসম্মত নয়। সেই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— গুরুত্বপূর্ণ কোনো সাহিত্যকর্ম না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি বাংলা একাডেমির জীবনসদস্য হলেন।

মহাপরিচালকের প্রতিক্রিয়া

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “লেখক কেন্দ্রের কক্ষে আকবর সিরাজী তালা দিয়ে নিরাপত্তাকর্মীর কাছে চাবি দিয়ে যান। কেন তা করেছেন, জানতে আমরা তাকে চিঠি দিয়েছি।”

থানায় কোনো জিডি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো কোনো জিডি করা হয়নি।”

অধ্যাপক আজম আরও জানান, “লেখক ক্লাব চালু করার প্রস্তুতি চলছে, তবে এখনো উদ্বোধন হয়নি। পরিচালনার নিয়মও চূড়ান্ত হয়নি।”

সিরাজীর বক্তব্য

আকবর সিরাজী বলেন, “আমরা বলছি, এটা খোলা থাকে। বহিরাগতরা এসে বসে, সিগারেট খায়, গাঁজাও খায়। এজন্যই হয়তো কেয়ারটেকার তালা দিয়েছেন।”

নারী কর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “তারা তো আমাদের পরিবারের মতো। কেউ ছোট বোন, কেউ বড় বোন, কেউ মেয়ে সমতুল্য। অসৌজন্যমূলক আচরণ সম্ভব?”

রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজী বলেন, “ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছি, এখন করি না। এখন লেখালেখিই করি। কলাম লিখি। শত শত কলাম প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়।”

তিনি জানান, ‘দৈনিক দেশ জগৎ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং নিয়মিত দৈনিক ইত্তেফাকদৈনিক ইনকিলাব-এ কলাম লেখেন।