বাংলাদেশ নিয়ে আসলে কী বলেছেন ট্রাম্প?
- আপডেট সময় : ০৬:৩২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 275

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আসলে কী কথা বলেছেন, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, কানা-ঘুষা চলছে। এ নিয়ে সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল থেকে শুরু করে সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ পর্যন্ত লেখালেখি করছেন।
আসিফ নজরুল Saiyed Abdullah এর পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মোদির বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ট্রাম্প যা বলেছে, সেটাকে কয়েকটা মিডিয়া ভুল ভেবে প্রচার করছে।
ডেইলি স্টার বাংলা ভার্সনে যেমন হেডিং দিয়েছে— ‘বাংলাদেশের বিষয়গুলো মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি: ট্রাম্প’। ডেইলি স্টারকে দেখাদেখি আরও কয়েকটা মিডিয়াও একই টাইপ মিসলিডিং শিরোনাম দিচ্ছে। তাদের এসব শিরোনাম দেখে এবং নিউজ দেখে মনে হচ্ছে ট্রাম্প যেন মোদিকে দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশ ইস্যু ডিল করার জন্য।
আপনারা যারা এই নিউজটা করবেন, খুব মনোযোগ দিয়ে অনলাইন থেকে ওই ভিডিওটা দেখবেন। ইংলিশের ওপর মোটামুটি লেভেলের দক্ষতা থাকলেই বুঝবেন সেখানে কোন প্রেক্ষাপটে এবং কীভাবে কনভারসেশন চলছিলো।
ট্রাম্পকে এক ইন্ডিয়ান সাংবাদিক যে প্রশ্নটা করেছিলো, তার সামারি হলো— বাইডেন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশে রেজিম চেঞ্জ (হাসিনার পতন) ইস্যুতে আমেরিকার ডিপ স্টেটের ভূমিকা আছে। এব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
উত্তরে ট্রাম্প বলেছে— না, আমেরিকার ডিপস্টেটের কোনই ভূমিকা নাই। এবং তারপর চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে মোদির দিকে ইঙ্গিত করে (যেহেতু ইন্ডিয়ান সাংবাদিক মনগড়া তত্ত্ব প্রচার করতে চাচ্ছিলো, তাই ইন্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকে রেফার করে দিয়ে) ট্রাম্প বলেছেন বাংলাদেশ ইস্যুতে ওই প্রশ্নের উত্তরটা মোদির ওপর ছেড়ে দিলাম! মানে, বাংলাদেশ সংক্রান্ত ওই প্রশ্নটার উত্তর মোদিকে দিতে বলেছিলেন ট্রাম্প।
এই হলো ঘটনার সামারি।
আর এইবার চিন্তা করেন যারা এই হেডলাইন করছে যে– বাংলাদেশের বিষয়গুলো মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি, তারা ঠিক কী বুঝে এই শিরোনাম করছে? অন্যদের কথা বাদ। ডেইলি স্টার ইংলিশ টু বাংলা অনুবাদ পারে না— এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে জনগণকে ম্যানিপুলেট কেন করতে চান আপনারা? আর অন্য যেসব মিডিয়া এইটাইপ কাজ করতেছেন, জাস্ট ধুপধাপ কপি-পেস্ট না করে একটু কনভারসেশনটা শুনে আসুন। শুনে তারপর খবর প্রকাশ করুন। এখন কিন্তু আর ওই যুগ নাই যে যেমন খুশি তেমন মিসইন্টারপ্রেট করে জনগণকে যা গেলাইতে চাইবেন, জনগণ সেটাই গিলবে! অনেক সুযোগসন্ধানী লোকজন আছেন, যারা এই খবরটা ম্যানিপুলেট করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করবে। দেশপ্রেমিক সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা সত্যটা প্রচার করুন এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে সবার কাছে প্রকৃত সত্যটা উপস্থাপন করুন। এতে করে যারা মিসলিডিং শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে সবাই সচেতন থাকতে পারবে। আর কী হেডলাইন দিলেন আপনারা? একটা কনভারসেশন এর অনুবাদ কীভাবে করতে হয় এইটুকু বেসিক জ্ঞানটুকুও নাই? নাকি তোমরা মনে করো যে ইচ্ছাকৃতভাবে ম্যানিপুলেট করে মানুষকে ভুল বার্তা দিবা?’’
কামাল আহমেদ লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের কথা আদৌ আলোচনা হয়েছে কি? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁদের আলোচনার বিষয়ে যেসব বিবরণী প্রকাশ পেয়েছে, তাতে সেরকম কিছু নেই। এমনকি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও নেই।
তাঁদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একজন ভারতীয় সাংবাদিকের একটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরেও দুজনের কেউই বলেননি যে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বরং, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুটো তথ্য দিয়েছেন: ১. বাংলাদেশের পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ( কথিত ডিপস্টেট বা বাইডেন প্রশাসনের) কোনো ভূমিকা ছিল না। মনে রাখা দরকার বাইডেন প্রশাসনকে সমালোচনা করার সামান্যতম সুযোগ পেলেও ট্রাম্প তা কাজে লাগিয়ে থাকেন এবং এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটার কথা নয়। ২. ভারত যে বাংলাদেশকে নিয়ে বছরের পর বছর (তাঁর কথায় শত শত বছর) চর্চা করছে সেটা তিনি জানেন।
বাংলাদেশ সর্ম্পকিত প্রশ্নে ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদিকে কথা বলার সুযোগ করে দিলেও তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কিছুই বললেন না। যাতে যৌক্তিকভাবে অনুমান করা যায়, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি, সেহেতু তাঁর নতুন কিছু বলার নেই। মোদি তাই ইউক্রেনে নজর দিয়ে সেখানে কোনো পক্ষ না নিয়ে ভারত শান্তির পক্ষে কাজ করছে বলে দাবি করলেন।
বৈঠকটি সম্পর্কে যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে ট্রাম্পের বাণিজ্য সুবিধা আদায় এবং অবৈধ অভিবাসী ভারতীয়দের ফেরত নেওয়ার চাপ সামলাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মনোযোগ দিতে হয়েছে।
ট্রাম্প–মোদি আলোচনায় বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণের জল্পনায় বোধহয় এবার একটু বিরতি নেওয়া উচিত।’’
কামাল আহমেদের পোস্টে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসাইন মঞ্জু। তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনি ‘চর্চা করছে’ পর্যন্ত বলে ছেড়ে দিলেন। তারপর ট্রাম্প যে বললেন ‘…I will leave Bangladesh (issue) to the Prime Minister (Modi)’ এ কথাটা বাদ দিলেন কেন?
ট্রাম্প এখন দুনিয়ার বাদশা। জমিদারদের মধ্যে বিভিন্ন তালুক বন্টন করেন। গাজা খালি করে সেটা নেটনিয়াহুকে দেন, উক্রাইন দেন পুতিনকে, তেমনি বাংলাদেশ দিলেন মোদীকে। ( ট্রাম্প নিজের কাছে এনে রাখতে চাচ্ছেন কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডকে, যেমন গনিমতের মাল বন্টনের সময় বন্দিনীদের মধ্যে সুন্দরীরা যেতেন রাজার নিজের হেরেমে। ট্রাম্পের রাজত্বে দুনিয়া মধ্যযুগে ফিরে গেছে তো! ’’
এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা ‘বাংলাদেশে পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেটের’ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, নাকচ করলেন ট্রাম্প’ শিরোনামে রিপোর্ট করেছে। বিবিসি লিখেছে, ‘‘বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেটের’ ভূমিকার বিষয়ে নানা আলোচনা যে রয়েছে, তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার [১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাতে ওয়াশিংটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এতে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা নেই।’
নরেন্দ্র মোদীর দুই দিনের ওয়াশিংটন সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, শুল্ক, ভিসানীতি, ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এসেছে। ট্রাম্প-মোদীর বৈঠকে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের প্রসঙ্গ উঠতে পারে–– এমনটা ধারণা করা হচ্ছিলো।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। তাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তাকে ফেরত পাঠানোর দাবিও জোরালো করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের পর বাংলাদেশে সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়। এই সম্পর্কে উন্নতির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়। ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করে বসেন ভারতীয় এক সাংবাদিক। তার প্রশ্নেই ছিল বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেটের’ ভূমিকার প্রসঙ্গ।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডিপ স্টেটের প্রসঙ্গ টেনে ভারতের ওই সাংবাদিক প্রথমে নরেন্দ্র মোদীর কাছে হিন্দিতে জানতে চান, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের ভূমিকার বিষয়ে। এরপর ট্রাম্পের উদ্দেশে ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন তিনি। এরপর ওই সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি বাংলাদেশ বিষয়ে কী বলতে চান? কেননা আমরা দেখেছি এবং এটা স্পষ্ট যে, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট ক্ষমতার পরিবর্তনে জড়িত ছিল; এরপর জুনিয়র সরোসের ((মার্কিন বিনিয়োগকারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক আন্দোলনে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে) সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সুতরাং বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার অভিমত কী?’
এর জবাবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা সরাসরি নাকচ করে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। এটা এমন একটা বিষয়- যেখানে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।’
এরপর নরেন্দ্র মোদীর দিকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, স্পষ্ট করে বললে, ভারত সেখানে শতশত বছর ধরে কাজ করেছে, আর সেসব বিষয় তিনি পড়েছেন। ‘তবে বাংলাদেশের বিষয় আমি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেব,’ বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে বলার জন্য ইশারা দেন ট্রাম্প।’’
মোদি অবশ্য তার বক্তব্যে এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি।


















