‘ধ্বংস করা হচ্ছে প্রজন্মের মূল্যবোধ’: তারেকের বিরুদ্ধে স্লোগানের ভাষায় ফখরুলের নিন্দা
- আপডেট সময় : ০৩:৫৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
- / 220

পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে হত্যার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করতে চায় একটি গোষ্ঠী। তাদের ষড়যন্ত্র রুখতে সরকার উদাসীন রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
“এই অপরাজনীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার প্রতি আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি,”—সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ফখরুল।
তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত হলে, তার দায় সংশ্লিষ্টদেরই বহন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা গভীর শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সুপরিকল্পিতভাবে এই অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন এই দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের সমার্থক রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব।”
ফখরুল আরও বলেন, “আমরা কুণ্ঠিত হই, যখন লক্ষ্য করি বিকৃত রুচির এই বিকারগ্রস্ত গোষ্ঠী তাদের অশ্লীল-কদর্য মানসিকতা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত করিয়ে আমাদের প্রজন্মের মূল্যবোধ ধ্বংস করছে—শুধু তাদের কুৎসিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে।”
গত ৯ জুলাই মিটফোর্ড এলাকায় লাল চাঁদ ওপারে ব্যবসায়ী সোহাগকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন—যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচজন নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ঘটনার পর জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বের অভিযোগ তোলে।
সোহাগ হত্যার জন্য তারেক রহমানকে দায়ী করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এসব মিছিলে ব্যবহৃত স্লোগানের ভাষা নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে সমালোচনা চলছে।
ফখরুল বলেন, “তারেক রহমান ও বিএনপির বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিতভাবে কুৎসা রটানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে—আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল ও তার প্রধান নেতৃত্বকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিল এবং অশ্লীল ভাষার প্রয়োগ—রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও সেই ফ্যাসিবাদের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংঘাত সৃষ্টির জন্য পরিকল্পিত ‘ফাঁদ’ পাতা হয়েছে। এই ফাঁদে পা না দিতে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের যেকোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আমরা এই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে দেবো না।”
গুটিকয়েক ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর’ অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যে তারুণ্য ফ্যাসিবাদের পতনে আমাদের সঙ্গে অগ্রসৈনিক ছিল, আজ দেশের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায়—যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত ১৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে আমাদের কষ্টার্জিত সফলতা ব্যর্থ করার সুযোগ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।


















