ঢাকা ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, শক্তি দেখাল বিএনপি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৪২:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • / 267
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চার মাস লন্ডনে ছেলের কাছে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার আগমন উপলক্ষে হাজারো নেতাকর্মী বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পথজুড়ে অবস্থান নিয়ে দলীয় শক্তি ও জনসমর্থনের জানান দিয়েছে বিএনপি।

মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান খালেদা জিয়া। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর শুভেচ্ছা গ্রহণ করতে করতে তিনি গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ পৌঁছাতে সময় নেন প্রায় দুই ঘণ্টা।

২০১৮ সালে কারাবরণের পর এই প্রথমবার জনসমাগমে সরাসরি দেখা গেল বিএনপি চেয়ারপারসনকে। তার দেশে ফেরাকে ঘিরে দলটি বড় আকারের জমায়েতের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত অবস্থান তুলে ধরেছে, যারা বেশ কিছুদিন ধরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

খালেদা জিয়া ঢাকায় নামার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিমানবন্দরের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আজকের দিনটি দেশ ও জাতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।”

সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করে, এরপর সোয়া ১১টায় রওনা হয়ে দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে গুলশানে ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি।

এ সময় রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে তার জন্য স্লোগান দেন। খালেদা জিয়াও গাড়ির জানালা খুলে হাত নাড়িয়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম’, ‘তারেক জিয়া বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’— এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা।

সাড়ে সাত বছর পর

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর সাড়ে সাত বছর ধরে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দল পরিচালনা করছেন তারেক রহমান। দেশে দলের হাল ধরে রেখেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।

২০২০ সালে সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দিলেও তিনি দুটি শর্তের আওতায় কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন। এরপর আর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে সরাসরি অংশ নিতে দেখা যায়নি।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বয়স ও নানা শারীরিক জটিলতার কারণে রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় হতে পারেননি। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার ঘটনাটিই এবার এক ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়।

দেশে ফেরার যাত্রাপথ

স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রওনা দেন খালেদা জিয়া। দোহায় যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি সকালে ঢাকায় পৌঁছায়।

গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডনে যান তিনি। সেখানে লন্ডন ক্লিনিক ও বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় কাটে তার চার মাস।

ফেরার পথে তার সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শামিলা রহমান সিঁথিসহ ১৩ জন সফরসঙ্গী। তাদের মধ্যে ছিলেন মেডিকেল বোর্ড প্রধান ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ।

ঢাকায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান মির্জা ফখরুলসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা—খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

সাদা রঙের একটি এসইউভিতে করে বিমানবন্দর থেকে ফিরোজায় পৌঁছান খালেদা জিয়া। সাধারণত তিনি গাড়ির সামনের আসনে বসেন না, কিন্তু এবার তার দুই পুত্রবধূ পেছনের আসনে বসায় তিনি সামনের আসনে ছিলেন।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ফিরোজা আগেই তার ফেরার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেখানে তাকে স্বাগত জানান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামানসহ স্বজনেরা।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

সড়কে জনসমুদ্র

সকালের আলো ফোটার পর থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর সড়কে জমায়েত হতে থাকেন। খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, বনানী, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের অবস্থান দেখা যায়।

তারা ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা, এমনকি ব্যান্ডপার্টি নিয়েও রাস্তায় নেমে আসেন। এই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মহানগর পুলিশ ট্রাফিক ব্যবস্থা সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ রাখা হয়, সেনানিবাস রুটেও হালকা যানবাহনের চলাচল ছিল। গুলশান থেকে উত্তরা পর্যন্ত মূল সড়ক এড়িয়ে বিকল্প পথে চলার অনুরোধ জানানো হয় সাধারণ যাত্রীদের।

বনানী থেকে গুলশানমুখী রাস্তা নেতাকর্মীদের ভিড়ে বন্ধ হয়ে গেলে ট্রাফিক বিভাগ সেখানে ব্যারিকেড দেয়। অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউর রহমান জানান, যানবাহনগুলোকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়।

বিমানবন্দর এলাকায় ও পথে পথে মোতায়েন ছিল পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা। বিদেশগামী যাত্রীদের সময় নিয়ে বের হতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

লন্ডনে চার মাস

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। গত ৭ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি লন্ডনে যান।

সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলের বাসায় ছিলেন।

তার চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানান, মানসিক প্রশান্তির ফলে তিনি আগের তুলনায় শারীরিকভাবে ভালো বোধ করছিলেন।

সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়া হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। গাড়ি চালিয়ে তাকে পৌঁছে দেন তারেক রহমান। সঙ্গে ছিলেন নাতনি জায়মা রহমান।

বিদায়ের সময় হিথ্রো টার্মিনালে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়। হুইলচেয়ারে বসা খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরেন তারেক ও জায়মা। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভাইয়াকে দেখে রেখো।”

১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন জোবাইদা

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশত্যাগের পর লন্ডনে থাকা জোবাইদা রহমান এবার শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরেছেন। আপাতত তিনি ধানমণ্ডির বাবার বাড়ি ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন।

বাড়িটি সাবেক নৌপ্রধান মাহবুব আলী খানের বাসভবন, যেখানে থাকেন তার স্ত্রী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ও বড় মেয়ে শাহীনা জামান। তবে মান্দ বানু বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি।

মঙ্গলবার ফিরোজা থেকে মাকে দেখতে যাবেন জোবাইদা, সেখান থেকে বাবার বাড়িতে উঠবেন।

১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন জোবাইদা। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটিতে লন্ডনে যান এবং পরে এমএসসি ডিগ্রি নেন ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, শক্তি দেখাল বিএনপি

আপডেট সময় : ১২:৪২:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

চার মাস লন্ডনে ছেলের কাছে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার আগমন উপলক্ষে হাজারো নেতাকর্মী বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পথজুড়ে অবস্থান নিয়ে দলীয় শক্তি ও জনসমর্থনের জানান দিয়েছে বিএনপি।

মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান খালেদা জিয়া। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর শুভেচ্ছা গ্রহণ করতে করতে তিনি গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ পৌঁছাতে সময় নেন প্রায় দুই ঘণ্টা।

২০১৮ সালে কারাবরণের পর এই প্রথমবার জনসমাগমে সরাসরি দেখা গেল বিএনপি চেয়ারপারসনকে। তার দেশে ফেরাকে ঘিরে দলটি বড় আকারের জমায়েতের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত অবস্থান তুলে ধরেছে, যারা বেশ কিছুদিন ধরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

খালেদা জিয়া ঢাকায় নামার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিমানবন্দরের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আজকের দিনটি দেশ ও জাতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।”

সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করে, এরপর সোয়া ১১টায় রওনা হয়ে দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে গুলশানে ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি।

এ সময় রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে তার জন্য স্লোগান দেন। খালেদা জিয়াও গাড়ির জানালা খুলে হাত নাড়িয়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম’, ‘তারেক জিয়া বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’— এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা।

সাড়ে সাত বছর পর

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর সাড়ে সাত বছর ধরে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দল পরিচালনা করছেন তারেক রহমান। দেশে দলের হাল ধরে রেখেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।

২০২০ সালে সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দিলেও তিনি দুটি শর্তের আওতায় কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন। এরপর আর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে সরাসরি অংশ নিতে দেখা যায়নি।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বয়স ও নানা শারীরিক জটিলতার কারণে রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় হতে পারেননি। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার ঘটনাটিই এবার এক ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়।

দেশে ফেরার যাত্রাপথ

স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রওনা দেন খালেদা জিয়া। দোহায় যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি সকালে ঢাকায় পৌঁছায়।

গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডনে যান তিনি। সেখানে লন্ডন ক্লিনিক ও বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় কাটে তার চার মাস।

ফেরার পথে তার সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শামিলা রহমান সিঁথিসহ ১৩ জন সফরসঙ্গী। তাদের মধ্যে ছিলেন মেডিকেল বোর্ড প্রধান ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ।

ঢাকায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান মির্জা ফখরুলসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা—খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

সাদা রঙের একটি এসইউভিতে করে বিমানবন্দর থেকে ফিরোজায় পৌঁছান খালেদা জিয়া। সাধারণত তিনি গাড়ির সামনের আসনে বসেন না, কিন্তু এবার তার দুই পুত্রবধূ পেছনের আসনে বসায় তিনি সামনের আসনে ছিলেন।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ফিরোজা আগেই তার ফেরার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেখানে তাকে স্বাগত জানান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামানসহ স্বজনেরা।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

সড়কে জনসমুদ্র

সকালের আলো ফোটার পর থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর সড়কে জমায়েত হতে থাকেন। খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, বনানী, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের অবস্থান দেখা যায়।

তারা ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা, এমনকি ব্যান্ডপার্টি নিয়েও রাস্তায় নেমে আসেন। এই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মহানগর পুলিশ ট্রাফিক ব্যবস্থা সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ রাখা হয়, সেনানিবাস রুটেও হালকা যানবাহনের চলাচল ছিল। গুলশান থেকে উত্তরা পর্যন্ত মূল সড়ক এড়িয়ে বিকল্প পথে চলার অনুরোধ জানানো হয় সাধারণ যাত্রীদের।

বনানী থেকে গুলশানমুখী রাস্তা নেতাকর্মীদের ভিড়ে বন্ধ হয়ে গেলে ট্রাফিক বিভাগ সেখানে ব্যারিকেড দেয়। অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউর রহমান জানান, যানবাহনগুলোকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়।

বিমানবন্দর এলাকায় ও পথে পথে মোতায়েন ছিল পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা। বিদেশগামী যাত্রীদের সময় নিয়ে বের হতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

লন্ডনে চার মাস

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। গত ৭ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি লন্ডনে যান।

সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলের বাসায় ছিলেন।

তার চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানান, মানসিক প্রশান্তির ফলে তিনি আগের তুলনায় শারীরিকভাবে ভালো বোধ করছিলেন।

সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়া হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। গাড়ি চালিয়ে তাকে পৌঁছে দেন তারেক রহমান। সঙ্গে ছিলেন নাতনি জায়মা রহমান।

বিদায়ের সময় হিথ্রো টার্মিনালে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়। হুইলচেয়ারে বসা খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরেন তারেক ও জায়মা। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভাইয়াকে দেখে রেখো।”

১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন জোবাইদা

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশত্যাগের পর লন্ডনে থাকা জোবাইদা রহমান এবার শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরেছেন। আপাতত তিনি ধানমণ্ডির বাবার বাড়ি ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন।

বাড়িটি সাবেক নৌপ্রধান মাহবুব আলী খানের বাসভবন, যেখানে থাকেন তার স্ত্রী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ও বড় মেয়ে শাহীনা জামান। তবে মান্দ বানু বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি।

মঙ্গলবার ফিরোজা থেকে মাকে দেখতে যাবেন জোবাইদা, সেখান থেকে বাবার বাড়িতে উঠবেন।

১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন জোবাইদা। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটিতে লন্ডনে যান এবং পরে এমএসসি ডিগ্রি নেন ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে।