ঢাকা ১০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

দিল্লির দাঙ্গায় আগুনের মাঝেও লড়েছিলেন যে বীর পুলিশ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:০৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / 1517
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় নিজের জীবন বাজি রেখে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো পুলিশ কর্মকর্তা নীরাজ জাদাউনকে ‘হিরো পুলিশ’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে এখন। সাধারণ মানুষের-জীবন সম্পদ সুরক্ষা দিতে নেয়া শপথ রক্ষায় তার এই জীবন বাজির ঘটনা আলোড়ন ফেলেছে সবার মধ্যে।

নীরাজ জাদাউন দিল্লি সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের একজন এসপি। বিবিসির প্রতিবেদককে নীরাজ বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি সীমান্ত চৌকিতে টহল দিচ্ছিলেন তিনি। আচমকা তার অবস্থান থেকে ২০০ মিটার দূরে উত্তর-পূর্ব দিল্লির কারওয়াল নগরে থেকে তিনি গুলিবর্ষণের শব্দ শুনতে পান।

এসময় তিনি দেখেন ৪০-৫০ জন মানুষের একটি দল যানবাহনে আগুন দিচ্ছেন আর তাদের মধ্যে একজন হাতে পেট্রল বোমা নিঢে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ঠিক সেই মুহূর্তে জাদাউন সিদ্ধান্ত নেন তিনি পুলিশের ঐতিহ্যবাহী প্রোটোকল ভাঙবেন। এরপর প্রাদেশিক সীমানা ছেড়ে দিল্লি সীমান্তে প্রবেশের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নেন।

ভারতে সীমানা ছেড়ে অন্য রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নানারকম অনুমতি নিতে হয় পুলিশকে। তবে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর যে তাড়া নীরাজ জাদাউনের ভেতর কাজ করেছিল তখন, তা রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন থেকে পিছপা হতে দেয়নি। প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গা ৪২ জনের প্রাণ কেড়েছে, আহত ২ শতাধিক।

নীরাজ বলেন, ‘আমি সীমানা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এখতিয়ারবহির্ভূত ছাড়াও সত্যিকার অর্থে নানা বিপদের কথা জেনেও আমি একা সীমান্ত পার হতে চাইলাম। ওই ১৫ সেকেন্ড ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মুহূর্ত। আমি কৃতজ্ঞ যে আমার সহকর্মীরা আমাকে অনুসরণ করেছে আর আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আমাকে সমর্থন দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংখ্যায় খুব কম হওয়ায় এটা ছিল খুবই বিপদজনক এবং দাঙ্গাকারীরাও ছিল সশস্ত্র। আমরা প্রথমে তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করি এবং যখন ব্যর্থ হই তখন তাদের বলি যে, পুলিশ গুলি চালাবে। তারা এরপর প্রথমে পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়ে মুহূর্তেই পাথর ছোড়া শুরু করে এবং আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই।’

এরপর নীরাজ জাদাউন ও তার দল অবস্থান নেয় এবং দাঙ্গাকারীরা সম্পূর্ণ সরে না যাওয়া পর্যন্ত তার দল তাদেরকে চাপ দিতে থাকে। নীরাজের এই সিদ্ধান্তকে দুঃসাহসী কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত হিন্দি দৈনিক আমার উজালার প্রতিবেদক রিচি কুমার। এমন সাহসী কাজ কখনো দেখেননি বলে জানান তিনি।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। দাঙ্গাকারীরা ছিল সম্পূর্ণরুপে সশস্ত্র ছিল এবং কারও কথাই তারা শুনতে চাচ্ছিল না। তাদেরকে আমি রক্তপিপাসু বলে উল্লেখ করতে চাই। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিল কিন্তু জাদাউন পিছু হটেননি। দাঙ্গাকারীর গুলিতে যেকোনো পুলিশ সদস্য হতাহতের শঙ্কা ছিল সেখানে।’

দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের কারণে সাম্প্রতিক এই সহিংসতা প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। পরে সেটা সাম্প্রদায়িকতায় রুপ নেয়। জাদাউন বলেন, তিনি যা দেখেছেন তাতে তার মনে হয়েছে দাঙ্গাকারীরা অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি নিতে এসেছিল।

নীরাজ জাদাউন বিবিসিকে বলেন, ‘ওই এলাকার অনেক দোকানে বাঁশের মজুত ছিল। পুরো এলাকায় আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারতো এবং পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছিল। আর তা যদি হত তাহলে দিল্লির সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে হতো অনেক বেশি। তবে নিজেকে হিরো মানতে নারাজ এসপি জাদাউন।

বিবিসির প্রতিবেদক এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীরাজ জাদাউন বলেন, ‘আমি কোনো হিরো নই। কোনো ভারতীয় বিপদে পড়লে তাকে সুরক্ষা দেয়ার শপথ নিয়েছি আমি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি কারণ আমি আমার চোখের সামনে কোনো মানুষকে মরতে দিতে পারি না। আমরা হস্তক্ষেপ করতে অবস্থান নেই এবং আমরা তা করেছি।’

দিল্লি দাঙ্গার মধ্যে এমন ঘটনা আরও ঘটেছে। সহিংসতা চাঁদবাগে বিয়ে ভেস্তে যাওয়া এক হিন্দু তরুণীর বিয়ে হয়েছে প্রতিবেশী মুসলিম ভাইদের পাহারায়। মসজিদে একদল দুর্বৃত্তের আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনার পর আগুন নেভাতে ছুটে গিয়েছিলেন অশোকনগরের সুভাস শর্মা। মুরতাজা নামের একজন মুসলিম আশ্রয় নেন প্রতিবেশী হিন্দুর বাড়িতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দিল্লির দাঙ্গায় আগুনের মাঝেও লড়েছিলেন যে বীর পুলিশ

আপডেট সময় : ০৫:০৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় নিজের জীবন বাজি রেখে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো পুলিশ কর্মকর্তা নীরাজ জাদাউনকে ‘হিরো পুলিশ’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে এখন। সাধারণ মানুষের-জীবন সম্পদ সুরক্ষা দিতে নেয়া শপথ রক্ষায় তার এই জীবন বাজির ঘটনা আলোড়ন ফেলেছে সবার মধ্যে।

নীরাজ জাদাউন দিল্লি সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের একজন এসপি। বিবিসির প্রতিবেদককে নীরাজ বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি সীমান্ত চৌকিতে টহল দিচ্ছিলেন তিনি। আচমকা তার অবস্থান থেকে ২০০ মিটার দূরে উত্তর-পূর্ব দিল্লির কারওয়াল নগরে থেকে তিনি গুলিবর্ষণের শব্দ শুনতে পান।

এসময় তিনি দেখেন ৪০-৫০ জন মানুষের একটি দল যানবাহনে আগুন দিচ্ছেন আর তাদের মধ্যে একজন হাতে পেট্রল বোমা নিঢে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ঠিক সেই মুহূর্তে জাদাউন সিদ্ধান্ত নেন তিনি পুলিশের ঐতিহ্যবাহী প্রোটোকল ভাঙবেন। এরপর প্রাদেশিক সীমানা ছেড়ে দিল্লি সীমান্তে প্রবেশের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নেন।

ভারতে সীমানা ছেড়ে অন্য রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নানারকম অনুমতি নিতে হয় পুলিশকে। তবে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর যে তাড়া নীরাজ জাদাউনের ভেতর কাজ করেছিল তখন, তা রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন থেকে পিছপা হতে দেয়নি। প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গা ৪২ জনের প্রাণ কেড়েছে, আহত ২ শতাধিক।

নীরাজ বলেন, ‘আমি সীমানা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এখতিয়ারবহির্ভূত ছাড়াও সত্যিকার অর্থে নানা বিপদের কথা জেনেও আমি একা সীমান্ত পার হতে চাইলাম। ওই ১৫ সেকেন্ড ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মুহূর্ত। আমি কৃতজ্ঞ যে আমার সহকর্মীরা আমাকে অনুসরণ করেছে আর আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আমাকে সমর্থন দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংখ্যায় খুব কম হওয়ায় এটা ছিল খুবই বিপদজনক এবং দাঙ্গাকারীরাও ছিল সশস্ত্র। আমরা প্রথমে তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করি এবং যখন ব্যর্থ হই তখন তাদের বলি যে, পুলিশ গুলি চালাবে। তারা এরপর প্রথমে পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়ে মুহূর্তেই পাথর ছোড়া শুরু করে এবং আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই।’

এরপর নীরাজ জাদাউন ও তার দল অবস্থান নেয় এবং দাঙ্গাকারীরা সম্পূর্ণ সরে না যাওয়া পর্যন্ত তার দল তাদেরকে চাপ দিতে থাকে। নীরাজের এই সিদ্ধান্তকে দুঃসাহসী কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত হিন্দি দৈনিক আমার উজালার প্রতিবেদক রিচি কুমার। এমন সাহসী কাজ কখনো দেখেননি বলে জানান তিনি।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। দাঙ্গাকারীরা ছিল সম্পূর্ণরুপে সশস্ত্র ছিল এবং কারও কথাই তারা শুনতে চাচ্ছিল না। তাদেরকে আমি রক্তপিপাসু বলে উল্লেখ করতে চাই। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিল কিন্তু জাদাউন পিছু হটেননি। দাঙ্গাকারীর গুলিতে যেকোনো পুলিশ সদস্য হতাহতের শঙ্কা ছিল সেখানে।’

দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের কারণে সাম্প্রতিক এই সহিংসতা প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। পরে সেটা সাম্প্রদায়িকতায় রুপ নেয়। জাদাউন বলেন, তিনি যা দেখেছেন তাতে তার মনে হয়েছে দাঙ্গাকারীরা অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি নিতে এসেছিল।

নীরাজ জাদাউন বিবিসিকে বলেন, ‘ওই এলাকার অনেক দোকানে বাঁশের মজুত ছিল। পুরো এলাকায় আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারতো এবং পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছিল। আর তা যদি হত তাহলে দিল্লির সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে হতো অনেক বেশি। তবে নিজেকে হিরো মানতে নারাজ এসপি জাদাউন।

বিবিসির প্রতিবেদক এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীরাজ জাদাউন বলেন, ‘আমি কোনো হিরো নই। কোনো ভারতীয় বিপদে পড়লে তাকে সুরক্ষা দেয়ার শপথ নিয়েছি আমি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি কারণ আমি আমার চোখের সামনে কোনো মানুষকে মরতে দিতে পারি না। আমরা হস্তক্ষেপ করতে অবস্থান নেই এবং আমরা তা করেছি।’

দিল্লি দাঙ্গার মধ্যে এমন ঘটনা আরও ঘটেছে। সহিংসতা চাঁদবাগে বিয়ে ভেস্তে যাওয়া এক হিন্দু তরুণীর বিয়ে হয়েছে প্রতিবেশী মুসলিম ভাইদের পাহারায়। মসজিদে একদল দুর্বৃত্তের আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনার পর আগুন নেভাতে ছুটে গিয়েছিলেন অশোকনগরের সুভাস শর্মা। মুরতাজা নামের একজন মুসলিম আশ্রয় নেন প্রতিবেশী হিন্দুর বাড়িতে।