ঢাকা ০৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল সংযোগ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:১০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
  • / 187

চীনের ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়াং ডংনিং ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আঞ্চলিক যোগাযোগ বিস্তারের পাশাপাশি স্থানান্তরিত কারখানার রফতানি সহজ করতে বাংলাদেশকে দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনা অবকাঠামো বিনিয়োগকারীদের প্রতি এ অনুরোধ জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধান উপদেষ্টা এ প্রস্তাব দেন। তার সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কারখানা স্থানান্তরের জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন—এই এলাকায় দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর অবস্থিত এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলোও কৌশলগতভাবে নিকটবর্তী।

তিনি বলেন, দেশের এই অংশে সমুদ্রে প্রবেশের সুবিধা অনেক বেশি। চীনা শিল্পগুলোর এখানে স্থানান্তর সম্ভব—এখানেই উৎপাদন করে তারা চীন ও সমৃদ্ধ দেশগুলোতে রফতানি করতে পারবে।

এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং জানান, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে উৎপাদন ক্ষেত্রে রূপান্তরকে সমর্থন করতে চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল ও ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী।

তিনি বলেন, চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অবকাঠামোর বড় প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করছে, তবে এখন তারা মূল উৎপাদন খাতে মনোযোগী হচ্ছে। এর মধ্যে আছে ছাদে সোলার প্যানেল, জ্বালানি ও জৈবসার উৎপাদনে পাটের ব্যবহার, এবং প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরিতে বৃহৎ বিনিয়োগ।

ইয়াং ডংনিং আরও জানান, যেসব প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠান এবং এক্সিম ব্যাংক আগে অবকাঠামো অর্থায়ন করেছে—এখন তারাই প্রত্যক্ষ উৎপাদন খাতেও অর্থায়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ড. মা জুন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বড় ক্ষেত্র। তারা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে চান।

তার ভাষ্য, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প উৎপাদনে এক মিলিয়ন টন পর্যন্ত পাট ব্যবহার করতে পারে।

তিনি যোগ করেন, চীনা অর্থায়নে পাটভিত্তিক যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে চীনের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে চীনসহ উন্নত দেশগুলোতে রফতানিমুখী উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।

ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্যসেবাকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পূর্ণ সক্ষমতায় এগোতে পারে।

প্রফেসর ইউনূস উল্লেখ করেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌর শক্তি উৎপাদনকারী দেশ চীন—সৌর প্যানেল ও ছাদের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—আমরা তা স্বাগত জানাই। পাটভিত্তিক শিল্পে চীনের আগ্রহের প্রসঙ্গ টেনে তিনি যোগ করেন, আমরা এগুলো সামনে এগিয়ে নিতে চাই।

ইয়াং ডংনিং আরও জানান, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ও ই-কমার্সেও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে—যেসব খাতে চীন ইতোমধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্বে রয়েছে।

বৈঠকের শুরুতে হংকংয়ের এক অ্যাপার্টমেন্টে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক জানান প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল সংযোগ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

আপডেট সময় : ০১:১০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আঞ্চলিক যোগাযোগ বিস্তারের পাশাপাশি স্থানান্তরিত কারখানার রফতানি সহজ করতে বাংলাদেশকে দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনা অবকাঠামো বিনিয়োগকারীদের প্রতি এ অনুরোধ জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধান উপদেষ্টা এ প্রস্তাব দেন। তার সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কারখানা স্থানান্তরের জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন—এই এলাকায় দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর অবস্থিত এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলোও কৌশলগতভাবে নিকটবর্তী।

তিনি বলেন, দেশের এই অংশে সমুদ্রে প্রবেশের সুবিধা অনেক বেশি। চীনা শিল্পগুলোর এখানে স্থানান্তর সম্ভব—এখানেই উৎপাদন করে তারা চীন ও সমৃদ্ধ দেশগুলোতে রফতানি করতে পারবে।

এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং জানান, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে উৎপাদন ক্ষেত্রে রূপান্তরকে সমর্থন করতে চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল ও ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী।

তিনি বলেন, চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অবকাঠামোর বড় প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করছে, তবে এখন তারা মূল উৎপাদন খাতে মনোযোগী হচ্ছে। এর মধ্যে আছে ছাদে সোলার প্যানেল, জ্বালানি ও জৈবসার উৎপাদনে পাটের ব্যবহার, এবং প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরিতে বৃহৎ বিনিয়োগ।

ইয়াং ডংনিং আরও জানান, যেসব প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠান এবং এক্সিম ব্যাংক আগে অবকাঠামো অর্থায়ন করেছে—এখন তারাই প্রত্যক্ষ উৎপাদন খাতেও অর্থায়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ড. মা জুন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বড় ক্ষেত্র। তারা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে চান।

তার ভাষ্য, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প উৎপাদনে এক মিলিয়ন টন পর্যন্ত পাট ব্যবহার করতে পারে।

তিনি যোগ করেন, চীনা অর্থায়নে পাটভিত্তিক যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে চীনের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে চীনসহ উন্নত দেশগুলোতে রফতানিমুখী উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।

ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্যসেবাকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পূর্ণ সক্ষমতায় এগোতে পারে।

প্রফেসর ইউনূস উল্লেখ করেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌর শক্তি উৎপাদনকারী দেশ চীন—সৌর প্যানেল ও ছাদের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—আমরা তা স্বাগত জানাই। পাটভিত্তিক শিল্পে চীনের আগ্রহের প্রসঙ্গ টেনে তিনি যোগ করেন, আমরা এগুলো সামনে এগিয়ে নিতে চাই।

ইয়াং ডংনিং আরও জানান, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ও ই-কমার্সেও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে—যেসব খাতে চীন ইতোমধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্বে রয়েছে।

বৈঠকের শুরুতে হংকংয়ের এক অ্যাপার্টমেন্টে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক জানান প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।