ঢাকা ১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়া ‘বিমান ভ্রমণে সক্ষম নন’, মত মেডিকেল বোর্ডের শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন ভারতে কতদিন থাকবেন, জানালেন জয়শঙ্কর আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত

ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হাসিনাকে এক সপ্তাহ সময়

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • / 246
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে দেশের দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে যদি তারা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না হন, তবে বিচার চলবে তাদের অনুপস্থিতে।

সোমবার (১৫ জুন ২০২৫) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ জুন।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিবেদন আজ আদালতে উপস্থাপন করার কথা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, একাধিকবার অভিযান চালিয়েও আসামিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

আদালত তাই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের হাজির হওয়ার সুযোগ দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। তাজুল ইসলাম আরও বলেন, “এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তারা যেন ২৪ জুনের শুনানিতে হাজির হন এবং বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।”

যদি বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও তারা আদালতে না আসেন, তবে আইন অনুযায়ী অনুপস্থিতিতেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

এর আগে, ১ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে। মামুনকে এ মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে এবং সেইদিনই পরবর্তী আদেশের জন্য ১৫ জুন দিন ধার্য করা হয়।

এই শুনানি ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথম টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম। মামুন বর্তমানে কারাগারে থাকলেও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক রয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ১৩৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার সাক্ষ্যপ্রমাণ ও নথি দাখিল করেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি পৃথক অভিযোগ আনা হয়েছে।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “তদন্তকালে শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।”

এই মামলাটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিপ্লব চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত। গত ১২ মে এসব অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা দেয়। পরে চিফ প্রসিকিউটর তা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে জুলাই বিপ্লব-সংক্রান্ত মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গৃহীত হয়েছে।

অন্য দুটি মামলায় একটি সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের অভিযোগ এবং অপরটি হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, “আমরা নিয়ম অনুসরণ করেই সব কাজ করছি। যদি কেউ রাজনৈতিকভাবে ট্যাগিং করে তদন্ত ব্যাহত করতে চায়, তাও আমরা খতিয়ে দেখব। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ চলবে।”

তিনি আরও জানান, “অনেকেই বিদেশ থেকে বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিচ্ছেন—এটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। পাশাপাশি আমরা দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কেও তদন্ত করছি, যেটি অনেক সময় মানি লন্ডারিংয়ে সহায়ক হয়।”

অবশেষে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা চাই ট্রাইব্যুনাল কার্যকরভাবে চলুক। এ জন্য গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা দরকার।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হাসিনাকে এক সপ্তাহ সময়

আপডেট সময় : ০৭:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে দেশের দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে যদি তারা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না হন, তবে বিচার চলবে তাদের অনুপস্থিতে।

সোমবার (১৫ জুন ২০২৫) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ জুন।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিবেদন আজ আদালতে উপস্থাপন করার কথা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, একাধিকবার অভিযান চালিয়েও আসামিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

আদালত তাই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের হাজির হওয়ার সুযোগ দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। তাজুল ইসলাম আরও বলেন, “এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তারা যেন ২৪ জুনের শুনানিতে হাজির হন এবং বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।”

যদি বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও তারা আদালতে না আসেন, তবে আইন অনুযায়ী অনুপস্থিতিতেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

এর আগে, ১ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে। মামুনকে এ মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে এবং সেইদিনই পরবর্তী আদেশের জন্য ১৫ জুন দিন ধার্য করা হয়।

এই শুনানি ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথম টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম। মামুন বর্তমানে কারাগারে থাকলেও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক রয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ১৩৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার সাক্ষ্যপ্রমাণ ও নথি দাখিল করেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি পৃথক অভিযোগ আনা হয়েছে।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “তদন্তকালে শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।”

এই মামলাটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিপ্লব চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত। গত ১২ মে এসব অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা দেয়। পরে চিফ প্রসিকিউটর তা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে জুলাই বিপ্লব-সংক্রান্ত মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গৃহীত হয়েছে।

অন্য দুটি মামলায় একটি সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের অভিযোগ এবং অপরটি হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, “আমরা নিয়ম অনুসরণ করেই সব কাজ করছি। যদি কেউ রাজনৈতিকভাবে ট্যাগিং করে তদন্ত ব্যাহত করতে চায়, তাও আমরা খতিয়ে দেখব। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ চলবে।”

তিনি আরও জানান, “অনেকেই বিদেশ থেকে বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিচ্ছেন—এটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। পাশাপাশি আমরা দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কেও তদন্ত করছি, যেটি অনেক সময় মানি লন্ডারিংয়ে সহায়ক হয়।”

অবশেষে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা চাই ট্রাইব্যুনাল কার্যকরভাবে চলুক। এ জন্য গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা দরকার।”