জামায়াতের প্রার্থী তালিকায় অমুসলিম কিংবা নারী নেই কেন?
- আপডেট সময় : ১২:২০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
- / 400

গত ২৪ এপ্রিল অমুসলিমদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে জামায়াতের প্রার্থী হতে মুসলমানদের বাইরে অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি আহ্বান জানান দলের আমির শফিবুর রহমানল
নির্বাচন কবে হবে—এই প্রশ্নে সবচেয়ে কম তাড়াহুড়া যে কয়টি দলের, তাদের মধ্যে অন্যতম জামায়াত। কিন্তু ভোটের প্রস্তুতিতে সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে তারাই। প্রায় সব আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়ে গেছে। তাদেরকে জয়ী করতে নানামুখী প্রচারও শুরু হয়েছে।
এই প্রার্থী তালিকায় বরাবরের মতোই কোনো নারী নেই। আবার দলের অমুসলিম শাখা খুলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাউকে প্রার্থী করা হয়নি। দলটির দাবি, খুঁজেও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
নারী প্রার্থী না করার প্রশ্নে এক নেতা বলেছেন, তাদের কোনো নারী প্রার্থী হতে রাজি নন।
তবে জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেছেন, এই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে পরিবর্তন আসতে পারে।
সিলেটের একটি আসনে জামায়াত একজনকে প্রার্থী করেও পরে তাকে পাল্টে দিয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর জামায়াতের অমুসলিম শাখা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা হয়েছে। মাগুরার এক জেলা কমিটির নেতার বক্তব্য ঘিরে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল জামায়াতের প্রার্থী হতে অমুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন দলের আমির শফিকুর রহমান। সেদিন অসুমলিমদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি বলেন, “আপনাদের কথা আপনারাই সংসদে গিয়ে বলবেন। আশ্বাস নয়, আহ্বান জানাচ্ছি—যদি পছন্দ করেন, তাহলে আগামীতে জামায়াতের ব্যানারেই নির্বাচনের জন্য তৈরি হোন।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা এলে স্বাগতম। না এলে, অন্তত ভালোবাসা চাই। কোনো ব্যক্তি বা দলের জন্য নয়, আপনার নিজের জন্য এবং দেশের জন্য চাই।”
যদি অমুসলিমদের জন্য দরজা খোলা থাকে, তাহলে ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় একজনও অমুসলিম নেই কেন?-এই প্রশ্নে দলটির প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “অমুসলিমদের প্রার্থী করার ব্যাপারে আমাদের নীতিগত অবস্থান আছে। তবে এখনও তো সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি। যেখানে আমরা প্রার্থী পাব, সেখানে ঘোষণা করব।”
মাগুরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর অমুসলিম শাখার সভাপতি পরেশ কান্তি সাহা বলেন, “আমাদের কাছে প্রার্থী চেয়েছে। কিন্তু আমরা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা যদি প্রার্থী দিতে পারি, তাহলে এখনও যাবে (চূড়ান্ত হবে)।”
কেন প্রার্থী দিতে পারছেন না—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “হঠাৎ করে বললেই তো আর হবে না। প্রত্যেকটা কাজের জন্য তো পূর্বপ্রস্তুতি লাগে।
“হয়ত দিনাজপুর থেকে পাওয়া যাবে একজন, ফরিদপুর থেকে পাওয়া যাবে। এমন ৪-৫ জন রয়েছে। আমরা তো মাগুরাতেই দিতে পারিনি।”
‘নারীরা কেউ ভোটে আগ্রহী নন’
সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে জামায়াতের অবস্থান হলো—ভোট হতে হবে সরাসরি এবং সেটি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। অর্থাৎ যত শতাংশ ভোট জামায়াত পাবে, তত শতাংশ আসন তারা পাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংশোধন কমিশন নারী আসন বাড়িয়ে ১০০টি করার সুপারিশ করেছে। জামায়াত এতে আপত্তি জানায়নি।
তবে দলটি কখনও নারী প্রার্থীকে সরাসরি ভোটে দাঁড় করায়নি। যদিও দলের নেতারা বলছেন, এটি নীতিগত অবস্থানের কারণে নয়।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “মহিলা যদি নির্বাচন করতে চায় তাহলেই তো আমরা দেই। না করতে চাইলে আমরা দেই না।”
তার মন্তব্য, “মহিলার তো পরিবার আছে, আরও অনেক বিষয় আছে। কেউ যদি না করেন, সেটা তো উনার নিজের বিষয়। কেউ না চাইলে আমরা দেই না।”
তিনি আরও বলেন, জামায়াত মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে প্রার্থী দেয়। সেই জরিপেও কোনো নারীর পক্ষে মতামত উঠে আসেনি।
নারী প্রার্থী দিতে কোনো বাধা নেই বলেও দাবি করেন প্রচার সম্পাদক আকন্দ।
তবে তার বক্তব্যে দলের প্রার্থী চূড়ান্তকরণের বিষয়ে বিপরীত অবস্থান উঠে আসে।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে তো আগ্রহী কেউ হয় না। আমাদের সমস্ত প্রার্থীদের মধ্যে কেউ বলে না, ‘আমি প্রার্থী হব’। এখানে সংগঠন প্রার্থী বানায়, মনোনয়ন দেয়।”
জামায়াতের নারী শাখা বিশাল, নেতৃত্ব সীমিত
সরাসরি নির্বাচনে কাউকে প্রার্থী না করলেও জামায়াতের নারী শাখা কিন্তু বিশাল। দলটির দাবি, তাদের সদস্যদের ৪৩ শতাংশ নারী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এই নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতের নারী শাখার নেতাকর্মীরা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে নানা কর্মসূচিও পালন করেছে।
দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গর্ব করে বলেছেন—ইউরোপীয় ইউনিয়ন জামায়াতের এই নারী অংশগ্রহণকে ইতিবাচকভাবে দেখছে।
তবে দলের ১৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ বা কার্যপরিষদে কোনো নারী নেই।
নারী শাখা কাজ করে স্বতন্ত্রভাবে, যার প্রধান হন “সেক্রেটারি”। এই বিভাগে নারীর নাম রাখা হয় না জামায়াতের মূল নেতৃত্বের অংশ হিসেবে, কারণ দলটি নারী নেতৃত্বকে শীর্ষ পর্যায়ে সমর্থন করে না।
জামায়াতের নারী সদস্যদের নিয়ে কাজ করে “মহিলা বিভাগ”। ছাত্রীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই দুই সংগঠন দেশের বিভিন্ন জেলা, থানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সক্রিয়।
জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ৫৮ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা সদস্যগণের (রুকনগণের) ভোটে কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরার সদস্যগণ ৩ (তিন) বছরের জন্য নির্বাচিত হইবেন।”
সংসদে জামায়াতের নারী প্রতিনিধিত্ব
জামায়াত সরাসরি নারী প্রার্থী না দিলেও সংরক্ষিত নারী আসনের মাধ্যমে ছয়জন সংসদ সদস্য পায়।
২০০১ সালের নির্বাচনে ১৭টি আসন পাওয়ার পর জামায়াত চারটি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রতিনিধি পাঠায়। তারা হলেন—
সুলতানা রাজিয়া (জামালপুর);
আমিনা বেগম (সিলেট);
শাহানারা বেগম (রাজশাহী);
এবং
রোকেয়া আনসার (সাতক্ষীরা)
তাদের মধ্যে আমিনা বেগম হলেন দলের বর্তমান আমির শফিকুর রহমানের স্ত্রী।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে জামায়াত দুইটি সংরক্ষিত আসন পায়—
আসমা খাতুন;
এবং
খন্দকার রাশিদা খাতুন
সে সময় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ৩০টি, যা সরকার গঠনকারী দল এককভাবে বণ্টন করত।


















