‘চাঁদাবাজি-দুর্নীতি’: সারাদেশে বৈছাআ’র সব শাখার কার্যক্রম স্থগিত
চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের কিল-ঘুষি-লাথি
- আপডেট সময় : ০৮:০৮:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
- / 202

দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির’ অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সংগঠনের সব ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
রবিবার রাজধানীর শাহবাগে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “সারাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বেড়ে গিয়েছে। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা এগুলো রুখে দেব। কিন্তু এ কমিটিগুলোতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রভাবে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছেন। এ কমিটিগুলো যখন গঠন করা হয়েছিল, সে কমিটি গঠনের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা যেহেতু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের ভেতরে চলে গিয়েছে। তাদের প্রশ্রয় পেয়ে জুলাই যোদ্ধারা বিপথগামী হয়েছে। এ মুহূর্তে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অর্গানোগ্রামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারা দেশের সকল কমিটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে সারাদেশে নানা অপকর্ম, চাঁদাবাজি, দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। আমরা এসব বরদাস্ত করব না। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করে এ সংগঠন চালিয়েছি।”
এর আগের দিন শনিবার রাজধানীর গুলশানে ‘চাঁদা আদায়ের সময়’ সংগঠনের চার নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গুলশান ২ নম্বর এলাকায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের বাসার সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার আদালত চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে দেয়।
রিমান্ডে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, ঢাকা মহানগর শাখার বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব।
পাঁচ নম্বর আসামি একজন শিশু। এর আগেও সংগঠনটির নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
গুলশানের ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই বৈছাআ সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
“এত কম বয়সে কোটি কোটি টাকা কেন দরকার?” – রাষ্ট্রপক্ষ
রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, “ওদের এত কম বয়স, কেন ওদের কোটি কোটি টাকা দরকার?” তিনি অভিযুক্তদের ‘কুলাঙ্গার’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “এদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।”
রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন: রিয়াদ, ইব্রাহিম, সিয়াম ও সাদাব। শেষের তিনজনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ সময় আইনজীবীরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
কাঠগড়ায় আসামিরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। ইব্রাহিম দাবি করেন, তারা চাঁদা চাননি বরং সেখানে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কেউ জড়িত জানিয়ে পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। সিয়াম জানান, তারা বাসায় প্রবেশ করেননি, শুধু নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিচারক যখন এজলাসে ওঠেন তখন কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে তারা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় নজর রাখতেন এবং সেখানে গিয়ে চাঁদা দাবি করতেন। তারা তারেক রহমানকে চাঁদাবাজ বলে প্রচার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার কথা বলতেন। এই চক্র কত টাকা চাঁদা তুলেছে তা রিমান্ডে জানা যাবে।”
তিনি বলেন, “এই আসামিদের আগে খাবারের টাকাও ছিল না, এখন কোটি টাকার গাড়ি ব্যবহার করছে।”
আসামিদের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল কাদের ভূঁইয়া রিমান্ড বাতিল ও জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, “যদি পুলিশে আগে ফোন দিয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টা ভিন্নভাবে দেখতে হবে।”
মামলার পটভূমি
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের বাসায় গিয়ে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের কাছে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন।
তিনি টাকা দিতে অপারগতা জানালে আওয়ামী লীগের ‘ঘনিষ্ঠ’ আখ্যায়িত করে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি নিজের কাছে থাকা ৫ লাখ এবং ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা দেন।
পরবর্তীতে ২৬ জুলাই বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা পুনরায় ওই বাসার সামনে এসে বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করে হুমকি দেন।
ঘটনার পর পুলিশকে জানানো হলে গুলশান থানার একটি দল গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্তদের মধ্যে অপু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
রোববার পুলিশ তদন্ত কর্মকর্তা রিয়াদসহ চারজনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শিশু আসামিকে গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শওকত আলী।
চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের কিল-ঘুষি-লাথি
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তিন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের এক নেতাকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে কিল-ঘুষি-লাথি মেরেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
রবিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গুলশান থানার চাঁদাবাজির মামলার রিমান্ড শুনানির পর এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবীদের ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘এনসিপি চাঁদাবাজ’, ‘চাঁদাবাজ, চাঁদাবাজ যায়’, ‘জুলাইয়ের বেইমান’ ইত্যাদি আখ্যা ও স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। পরে আদালত থেকে তাদের হাজতখানায় নেওয়ার পথে সিঁড়িতে ও আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ব্যারিকেড ডিঙিয়ে কিল-ঘুষি মারতে দেখা যায়।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।
আদালতে বিএনপিপন্থি এক আইনজীবী বলেন, ‘এরা জুলাইয়ের কলঙ্ক। হাজার হাজার শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছে। এরা চাঁদাবাজ, এদের ক্ষমা নাই। এরা তারেক জিয়াকে নিয়েও বিষোদগার করেছে। নিজেরা চাঁদাবাজি করে আর বিএনপির নামে বদনাম ছড়ায়।’


















