ঢাকা ১১:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

গোপালগঞ্জে কারফিউ, চলছে ধরপাকড়, সরকারের তদন্ত কমিটি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:১৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
  • / 249
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি


গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা, প্রতিরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২২ ঘন্টার কারফিউ চলছে। এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তাদের আটকের পর গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, “গতকাল সন্ধ্যা থেকেই গোপালগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অধীনে এটি পরিচালনা করছে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।” বুধবার সংঘর্ষের পর অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সংখ্যাটি কত, সে বিষয়ে পুলিশ এখনই কিছু জানাতে চাইছে না।

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া কারফিউর কারণে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার পরও শহরে মানুষের কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। হাট-বাজার জনমানবহীন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এখনও ইট, বাঁশসহ যান চলাচলে নানা প্রতিবন্ধক সামগ্রী পড়ে আছে, যা একদিন আগের সংঘর্ষের চিহ্ন বহন করছে। কারফিউয়ের কারণে যাত্রীর অভাবে লোকাল বাসগুলো না চললেও ঢাকাসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে।

আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদেরও কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তাদের টহলও দেখা যায়নি। তবে জেলা কারাগারের সামনে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।

এর আগে বুধবার দেশজুড়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ছিল এনসিপির। সকালে এনসিপি নেতাকর্মীরা শহরের পৌর পার্ক মাঠে কর্মসূচি শুরুর আগেই সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ইউএনওর গাড়িতে হামলা হয়। এনসিপি নেতাদের শহরে ঢোকার পরের পরিস্থিতি সামলাতে সাজোঁয়া যান নিয়ে নামতে হয় সেনা সদস্যদের। ছিল বিজিবির চার প্লাটুন সদস্য।

সকালে শহরের উলপুর ও টেকেরহাটে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনার পর বেলা দেড়টার দিকে পৌর পার্কের সমাবেশ মঞ্চে হামলা হয়। কিছুক্ষণ পর মঞ্চে ফিরে এনসিপি নেতারা ‘মুজিববার-মুর্দাবাদ’, ‘ইনকিলাব-জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এরপর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে পুলিশ ও সেনা পাহারায় মাদারীপুরের দিকে রওনা দিলে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা লঞ্চঘাট এলাকায় হামলার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সেনাবাহিনীকে সরাসরি গুলি করতে দেখা যায়।

হামলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এনসিপির নেতাকর্মীরা। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের গাড়িও আটকে দেওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে এনসিপির শীর্ষ নেতাদেরকে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়িতে করে উদ্ধার করে খুলনায় পাঠানো হয়।

সংঘর্ষের পর অন্তত চারজনের লাশ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আনার খবর আসে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৯জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে আহত তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জের ডিসি মো. কামরুজ্জামান জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরে সরকার রাত ৮টা থেকে ২২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ আরোপ করে।

পরে বুধবার রাতে গোপালগঞ্জ শহর ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছিল। সীমিত আকারে রিকশা চলাচল করলেও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। রাতেও শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের টহল বা কঠোর অবস্থান দেখা যায়নি।

ঘটনা তদন্তে কমিটি

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার পর সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়।

এতে লেখা হয়, কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। আরও থাকবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দুইজন অতিরিক্ত সচিব। কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গোপালগঞ্জে কারফিউ, চলছে ধরপাকড়, সরকারের তদন্ত কমিটি

আপডেট সময় : ০৩:১৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫


গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা, প্রতিরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২২ ঘন্টার কারফিউ চলছে। এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তাদের আটকের পর গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, “গতকাল সন্ধ্যা থেকেই গোপালগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অধীনে এটি পরিচালনা করছে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।” বুধবার সংঘর্ষের পর অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সংখ্যাটি কত, সে বিষয়ে পুলিশ এখনই কিছু জানাতে চাইছে না।

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া কারফিউর কারণে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার পরও শহরে মানুষের কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। হাট-বাজার জনমানবহীন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এখনও ইট, বাঁশসহ যান চলাচলে নানা প্রতিবন্ধক সামগ্রী পড়ে আছে, যা একদিন আগের সংঘর্ষের চিহ্ন বহন করছে। কারফিউয়ের কারণে যাত্রীর অভাবে লোকাল বাসগুলো না চললেও ঢাকাসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে।

আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদেরও কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তাদের টহলও দেখা যায়নি। তবে জেলা কারাগারের সামনে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।

এর আগে বুধবার দেশজুড়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ছিল এনসিপির। সকালে এনসিপি নেতাকর্মীরা শহরের পৌর পার্ক মাঠে কর্মসূচি শুরুর আগেই সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ইউএনওর গাড়িতে হামলা হয়। এনসিপি নেতাদের শহরে ঢোকার পরের পরিস্থিতি সামলাতে সাজোঁয়া যান নিয়ে নামতে হয় সেনা সদস্যদের। ছিল বিজিবির চার প্লাটুন সদস্য।

সকালে শহরের উলপুর ও টেকেরহাটে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনার পর বেলা দেড়টার দিকে পৌর পার্কের সমাবেশ মঞ্চে হামলা হয়। কিছুক্ষণ পর মঞ্চে ফিরে এনসিপি নেতারা ‘মুজিববার-মুর্দাবাদ’, ‘ইনকিলাব-জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এরপর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে পুলিশ ও সেনা পাহারায় মাদারীপুরের দিকে রওনা দিলে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা লঞ্চঘাট এলাকায় হামলার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সেনাবাহিনীকে সরাসরি গুলি করতে দেখা যায়।

হামলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এনসিপির নেতাকর্মীরা। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের গাড়িও আটকে দেওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে এনসিপির শীর্ষ নেতাদেরকে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়িতে করে উদ্ধার করে খুলনায় পাঠানো হয়।

সংঘর্ষের পর অন্তত চারজনের লাশ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আনার খবর আসে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৯জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে আহত তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জের ডিসি মো. কামরুজ্জামান জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরে সরকার রাত ৮টা থেকে ২২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ আরোপ করে।

পরে বুধবার রাতে গোপালগঞ্জ শহর ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছিল। সীমিত আকারে রিকশা চলাচল করলেও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। রাতেও শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের টহল বা কঠোর অবস্থান দেখা যায়নি।

ঘটনা তদন্তে কমিটি

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার পর সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়।

এতে লেখা হয়, কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। আরও থাকবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দুইজন অতিরিক্ত সচিব। কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।