ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

কবি তমিজ উদ্দীন লোদীর সম্মানে লন্ডনে ‘স্বজন কাব্যসন্ধ্যা’

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:৩৫:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / 648

লন্ডনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কবি তমিজ উদদীন লোদী

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কবি ও কথাসাহিত্যিক তমিজ উদ্দীন লোদীকে নিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠান হলো ‘স্বজন কাব্যসন্ধ্যা’।  অনুষ্ঠানটি বিলেতের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কমিউনিটি সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত সম্মিলনে পরিণত হয়।

সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাথিউরা গ্রামের কৃতি সন্তান তমিজ উদ্দীন লোদী বর্তমানে যুক্তরাস্ট্রে বসবাস করেন। এক সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি লন্ডন এসেছেন। ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের নিউ রোডের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকে।

অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়রের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর (এথনিক মিডিয়া) মুহাম্মদ জুবায়ের, বিলেতবাসী কবি ও শিকড় এন্ড গ্লোবাল পয়েট এন্ড পোয়েট্রি সম্পাদক, কবি ফারুক আহমেদ রনি, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ এবং সংহতি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছড়াকার আবু তাহের। আলোচনায় অংশ নেন-গবেষক ফারুক আহমদ, গ্রন্থি সম্পাদক কবি শামীম শাহান প্রমুখ।

সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুবিন ও ওহিদ চৌধুরী। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কাউন্সিলর আহমেদুল কবির।

অনুষ্ঠানে কবিকে বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন সমিতির সাবেক সহসভাপতি আলাউদ্দিন ও বাবুল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার আহমদ, জেবুল ইসলাম প্রমুখ।

অতিথিবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ময়নুল ইসলাম, গোলাম কবির রুমেল, গুলজার আহমদ, আলী হোসেন প্রমুখ।

মাথিউরা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কবির আহমদ ও নূর উদ্দীন লোদী প্রমুখ।

টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান ফয়সল আহমদ রুহেল, এডভোকেট সি এম কামরুজ্জামান ও ওহিদ চৌধুরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত কবি তমিজ উদ্দীন লোদী বক্তব্যে বলেন, “বিলেত হচ্ছে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চারণভূমি। ঐতিহাসিকভাবে বৃটেনে শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ঐতিহ্য চর্চা এবং এর ক্ষেত্রগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মূলত এই লালন ও চর্চার কারণে দেশটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতাবোধে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।”

বৃটেনে বাংলা ভাষীদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার উজ্জ্বল দিকগুলো নিয়ে তিনি আলোকপাত করে বলেন, বর্তমান যুগে সাহিত্য চর্চায় ভাষা কোনো বাঁধা নেই। আমাদেরকে ইংরেজি ভাষায় ব্যাপকভাবে বাংলা সাহিত্য ছড়িয়ে দিতে হবে। লেখায় মৌলিকত্ব থাকলে সাহিত্য বা যে কোনও বিষয়ে পাঠক ঠিকই তার সন্ধান পায়। আমাদের জন্য জরুরি হলো সময়ের সাথে লেখক হিসাবে সেগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা।

তিনি আয়োজক সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শিকড় ভূমির প্রতি প্রতিটি মানুষের অদ্ভুত টান ও মায়া থাকে। আজ আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, তার প্রতিদান দেবার ক্ষমতা আমি নগণ্য। তবে আপনাদের প্রতিটি কথা ও সম্মানকে শ্রদ্ধায় বুকে জমা রাখলাম।

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের লোদীকে বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি উল্লেখ করে বলেন, তাঁর লেখা কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নেই। প্রকৃতি, সমাজ, প্রতিবাদ, দ্রোহ, বিদ্রোহ ও ঘটমান বর্তমানে বৈশ্বিক বিভৎসতা, নিপীড়ন ইত্যাদি তার লেখনিতে সব সময় উচ্চকণ্ঠ হয়ে আছে।

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বান্ধব ধারাবাহিক ইভেন্ট সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেনে বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের মতো অন্যান্য সংগঠনও এরকম অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে, যা মাল্টিকালচারাল বৃটেনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ আরও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শিকড় এন্ড গ্লোবাল পয়েট এন্ড পোয়েট্রি সম্পাদক কবি ফারুক আহমেদ রনি বলেন, মানুষ পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় যায় না কেন, সে তার নিজস্বতাকে নিয়ে যায়। ৮০ দশকের অন্যতম এই কবি এখন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। এই সময়ে আছেন লন্ডনে। কিন্তু তার কবি মানসে আছে মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাঁর কবিতায় আছে অন্যরকম স্পৃহা। রয়েছে সমাজ ও সভ্যতার কথা। তিনি একজন সাহিত্য সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। একজন সব্যসাচি লেখক হিসাবে তিনি সকল শাখায় সাফল্যের ছাপ রাখছেন। সাহিত্যের মৌলিক কাজগুলো তাঁকে অমর রাখবে সন্দেহ নেই।

তিনি বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের সৃজনশীল এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই রকম আয়োজন বহু ভাষা ও সংস্কৃতির লন্ডনের কমিউনিটিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তমিজ উদ্দীন লোদীকে বর্তমান সময়ের একজন শক্তিমান ও মানবিক বোধের কবি আখ্যা দিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ বলেন, দেশে দেশে ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অমানবিকতা, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তমিজ উদ্দীন লোদীর কবিতা শুধু প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ নয়, অসংখ্য পাঠককেও এইসব অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তুলে।

সংহতি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি, ছড়াকার আবু তাহের বলেন, সাহিত্যের একজন গুণী মানুষকে নিয়ে সামাজিক সংগঠনের এরকম অনুষ্ঠান আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর কবিতায় মানুষ এবং মানবিকতার জয়গান বারবার উচ্চারিত হয়। সময়কে ধারণ করে নিরবিচ্ছিন্ন কাব্য সাধনা করছেন সেই ৮০র দশক থেকে। তমিজ উদ্দীন লোদীর এটাই সবচেয়ে বড় গুণ এবং তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শক্তিমান কবি।

গবেষক ফারুক আহমদ বলেন, একজন কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হিসাবে তাঁর উজ্জ্বল পরিচিতি রয়েছে। তমিজ উদ্দীন লোদীর একজন একনিষ্ঠ পাঠক হলেও অনুষ্ঠানে এসে তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। তিনি তাঁর গুণের কারণেই জনপ্রিয় ও সমাদৃত। এখানে অনেকে বলেছেন তিনি সিলেটের কবি ও কথাসাহিত্যিক। প্রকৃত সত্য হল-তিনি বাংলাদেশের অন্যতম কবি ও লেখক এবং তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমেই শিল্পোত্তীর্ণ হয়েছেন বলে মনে করি।

গ্রন্থি সম্পাদক কবি শামীম শাহান বলেন, তিনি অগ্রজ কবি। সিলেট শহরে কবি তমিজ উদ্দীন লোদীর লেখা আমার মতো অনেক সমসাময়িক কবিদের কবিতা লেখায় উদ্ধৃত করেছে। গুণী এই কবির সাহিত্য রচনার পাশাপাশি সাহিত্য সম্পাদনার কঠিন কাজটি করছেন বহুদিন থেকে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিভৃতচারী হলেও তার সৃষ্টিকর্ম দেশে-দেশে পাঠকসমাদৃত। আমি তাঁর মুগ্ধ পাঠক সেই তারুণ্য সময়ের মতো।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান ও সফিক উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ, কাউন্সিলর আহমেদুল কবির, কবি মজিবুল হক মনি, কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল ও ছড়াকার সৈয়দ হিলাল সাইফ।

সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুবিন ‘স্বজন কাব্যসন্ধ্যা’য় সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমিতির সকলের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে অনুষ্ঠান সফল হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

নিউজটি শেয়ার করুন

কবি তমিজ উদ্দীন লোদীর সম্মানে লন্ডনে ‘স্বজন কাব্যসন্ধ্যা’

আপডেট সময় : ০২:৩৫:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

কবি ও কথাসাহিত্যিক তমিজ উদ্দীন লোদীকে নিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠান হলো ‘স্বজন কাব্যসন্ধ্যা’।  অনুষ্ঠানটি বিলেতের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কমিউনিটি সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত সম্মিলনে পরিণত হয়।

সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাথিউরা গ্রামের কৃতি সন্তান তমিজ উদ্দীন লোদী বর্তমানে যুক্তরাস্ট্রে বসবাস করেন। এক সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি লন্ডন এসেছেন। ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের নিউ রোডের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকে।

অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়রের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর (এথনিক মিডিয়া) মুহাম্মদ জুবায়ের, বিলেতবাসী কবি ও শিকড় এন্ড গ্লোবাল পয়েট এন্ড পোয়েট্রি সম্পাদক, কবি ফারুক আহমেদ রনি, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ এবং সংহতি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছড়াকার আবু তাহের। আলোচনায় অংশ নেন-গবেষক ফারুক আহমদ, গ্রন্থি সম্পাদক কবি শামীম শাহান প্রমুখ।

সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুবিন ও ওহিদ চৌধুরী। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কাউন্সিলর আহমেদুল কবির।

অনুষ্ঠানে কবিকে বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন সমিতির সাবেক সহসভাপতি আলাউদ্দিন ও বাবুল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার আহমদ, জেবুল ইসলাম প্রমুখ।

অতিথিবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ময়নুল ইসলাম, গোলাম কবির রুমেল, গুলজার আহমদ, আলী হোসেন প্রমুখ।

মাথিউরা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কবির আহমদ ও নূর উদ্দীন লোদী প্রমুখ।

টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান ফয়সল আহমদ রুহেল, এডভোকেট সি এম কামরুজ্জামান ও ওহিদ চৌধুরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত কবি তমিজ উদ্দীন লোদী বক্তব্যে বলেন, “বিলেত হচ্ছে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চারণভূমি। ঐতিহাসিকভাবে বৃটেনে শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ঐতিহ্য চর্চা এবং এর ক্ষেত্রগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মূলত এই লালন ও চর্চার কারণে দেশটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতাবোধে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।”

বৃটেনে বাংলা ভাষীদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার উজ্জ্বল দিকগুলো নিয়ে তিনি আলোকপাত করে বলেন, বর্তমান যুগে সাহিত্য চর্চায় ভাষা কোনো বাঁধা নেই। আমাদেরকে ইংরেজি ভাষায় ব্যাপকভাবে বাংলা সাহিত্য ছড়িয়ে দিতে হবে। লেখায় মৌলিকত্ব থাকলে সাহিত্য বা যে কোনও বিষয়ে পাঠক ঠিকই তার সন্ধান পায়। আমাদের জন্য জরুরি হলো সময়ের সাথে লেখক হিসাবে সেগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা।

তিনি আয়োজক সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শিকড় ভূমির প্রতি প্রতিটি মানুষের অদ্ভুত টান ও মায়া থাকে। আজ আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, তার প্রতিদান দেবার ক্ষমতা আমি নগণ্য। তবে আপনাদের প্রতিটি কথা ও সম্মানকে শ্রদ্ধায় বুকে জমা রাখলাম।

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের লোদীকে বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি উল্লেখ করে বলেন, তাঁর লেখা কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নেই। প্রকৃতি, সমাজ, প্রতিবাদ, দ্রোহ, বিদ্রোহ ও ঘটমান বর্তমানে বৈশ্বিক বিভৎসতা, নিপীড়ন ইত্যাদি তার লেখনিতে সব সময় উচ্চকণ্ঠ হয়ে আছে।

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বান্ধব ধারাবাহিক ইভেন্ট সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেনে বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের মতো অন্যান্য সংগঠনও এরকম অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে, যা মাল্টিকালচারাল বৃটেনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ আরও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শিকড় এন্ড গ্লোবাল পয়েট এন্ড পোয়েট্রি সম্পাদক কবি ফারুক আহমেদ রনি বলেন, মানুষ পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় যায় না কেন, সে তার নিজস্বতাকে নিয়ে যায়। ৮০ দশকের অন্যতম এই কবি এখন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। এই সময়ে আছেন লন্ডনে। কিন্তু তার কবি মানসে আছে মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাঁর কবিতায় আছে অন্যরকম স্পৃহা। রয়েছে সমাজ ও সভ্যতার কথা। তিনি একজন সাহিত্য সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। একজন সব্যসাচি লেখক হিসাবে তিনি সকল শাখায় সাফল্যের ছাপ রাখছেন। সাহিত্যের মৌলিক কাজগুলো তাঁকে অমর রাখবে সন্দেহ নেই।

তিনি বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের সৃজনশীল এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই রকম আয়োজন বহু ভাষা ও সংস্কৃতির লন্ডনের কমিউনিটিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তমিজ উদ্দীন লোদীকে বর্তমান সময়ের একজন শক্তিমান ও মানবিক বোধের কবি আখ্যা দিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ বলেন, দেশে দেশে ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অমানবিকতা, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তমিজ উদ্দীন লোদীর কবিতা শুধু প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ নয়, অসংখ্য পাঠককেও এইসব অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তুলে।

সংহতি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি, ছড়াকার আবু তাহের বলেন, সাহিত্যের একজন গুণী মানুষকে নিয়ে সামাজিক সংগঠনের এরকম অনুষ্ঠান আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর কবিতায় মানুষ এবং মানবিকতার জয়গান বারবার উচ্চারিত হয়। সময়কে ধারণ করে নিরবিচ্ছিন্ন কাব্য সাধনা করছেন সেই ৮০র দশক থেকে। তমিজ উদ্দীন লোদীর এটাই সবচেয়ে বড় গুণ এবং তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শক্তিমান কবি।

গবেষক ফারুক আহমদ বলেন, একজন কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হিসাবে তাঁর উজ্জ্বল পরিচিতি রয়েছে। তমিজ উদ্দীন লোদীর একজন একনিষ্ঠ পাঠক হলেও অনুষ্ঠানে এসে তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। তিনি তাঁর গুণের কারণেই জনপ্রিয় ও সমাদৃত। এখানে অনেকে বলেছেন তিনি সিলেটের কবি ও কথাসাহিত্যিক। প্রকৃত সত্য হল-তিনি বাংলাদেশের অন্যতম কবি ও লেখক এবং তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমেই শিল্পোত্তীর্ণ হয়েছেন বলে মনে করি।

গ্রন্থি সম্পাদক কবি শামীম শাহান বলেন, তিনি অগ্রজ কবি। সিলেট শহরে কবি তমিজ উদ্দীন লোদীর লেখা আমার মতো অনেক সমসাময়িক কবিদের কবিতা লেখায় উদ্ধৃত করেছে। গুণী এই কবির সাহিত্য রচনার পাশাপাশি সাহিত্য সম্পাদনার কঠিন কাজটি করছেন বহুদিন থেকে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিভৃতচারী হলেও তার সৃষ্টিকর্ম দেশে-দেশে পাঠকসমাদৃত। আমি তাঁর মুগ্ধ পাঠক সেই তারুণ্য সময়ের মতো।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান ও সফিক উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ, কাউন্সিলর আহমেদুল কবির, কবি মজিবুল হক মনি, কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল ও ছড়াকার সৈয়দ হিলাল সাইফ।

সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুবিন ‘স্বজন কাব্যসন্ধ্যা’য় সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমিতির সকলের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে অনুষ্ঠান সফল হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।