কক্সবাজারে সাংবাদিকের ঝুলন্ত লাশ, ‘সাংবাদিক হিসেবে নিউজ করা—কি আমার অপরাধ?’
- আপডেট সময় : ১২:৫৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 116
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ঝাউগাছ থেকে উদ্ধার হলো তরুণ সাংবাদিক আমিন উল্লাহর (২৩) ঝুলন্ত লাশ। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। তবে সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, আত্মহত্যার জন্য উখিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)–কে দায়ী করেছেন তিনি।
আমিন উল্লাহ উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ–এর উখিয়া প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রায় সাত মিনিট দীর্ঘ ভিডিওতে আমিন উল্লাহ অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন এবং তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, গত ২৫ জুলাই গভীর রাতে পুলিশ তাঁর বাড়িতে যায়। কয়েক দিন আগে এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে তাঁর ছোট ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসাইনকে দায়ী করেন। তবে ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভিডিওতে আমিন উল্লাহকে বলতে শোনা যায়, “পুলিশ আমাকে কেন খুঁজছে জানি না। ওসি আরিফ স্যারের উদ্দেশে বলছি, কোন অপরাধে আমার ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করেছেন? মামলা করার আগে তদন্ত করা উচিত ছিল। কয়েক দিন ধরে আমি বাসায় থাকতে পারছি না। সাংবাদিক হিসেবে নিউজ করা—এটাই কি আমার অপরাধ?”
একপর্যায়ে তিনি বলেন, “অত্যাচার বন্ধ না হলে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেব। আমি যদি আত্মহত্যা করি, এর দায় থাকবে উখিয়া থানা–পুলিশের ওপর।” ভিডিওতে প্রধান উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী ও র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আমিন।
সম্প্রতি উখিয়া থানার ওসি মো. আরিফ হোসাইন রামু থানায় বদলি হয়েছেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভিডিওটি আমি ফেসবুকে দেখেছি। সাংবাদিক আমিনকে আমি চিনি না, তাঁর সঙ্গে কখনো কথা হয়নি। ভিডিওটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি হতে পারে।” তাঁর দাবি, ২৫ জুলাই বালুখালীতে ছাত্রলীগের মিছিল এবং কয়েক দিন আগে ইয়াবা লুটের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালালেও আমিন উল্লাহকে ধরতে পুলিশ তাঁর বাড়িতে যায়নি।
নিহত আমিনের মা আয়েশা খাতুন বলেন, তাঁর ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ছেলের হত্যার বিচার দাবি করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর এখন আমিনের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে একতলা বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি।
স্থানীয় কয়েকজন বন্ধু জানান, দেড় বছর আগে একটি এনজিওতে কাজ করার পর আমিন সাংবাদিকতায় যোগ দেন। তাঁদের মতে, আত্মহত্যা বা হত্যার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে—প্রেমঘটিত সম্পর্ক অথবা ইয়াবা চালান লুটের ঘটনার জের।
এ বিষয়ে উখিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমিন উল্লাহর মৃত্যুকে ঘিরে এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে, তবে আসল কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান জানান, সৈকতের ঝাউগাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁর কাছে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী একটি বাসের টিকিট পাওয়া গেছে, যাতে সময় লেখা বুধবার রাত ৯টা ২০ মিনিট। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তবে প্রেমঘটিত কোনো বিষয় বা হত্যার অভিযোগ আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

















