ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

এবারও নোবেল জোটেনি ট্রাম্পের কপালে, পেলেন ভেনিজুয়েলার মারিয়া করিনা মাচাদো

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • / 134

শান্তিতে নোবেল জয়ী মারিয়া কারিনা মাচাদো

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার—বিতর্ক থাকলেও এটি বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রনেতা—বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করা বহু ব্যক্তি এই পুরস্কার পেয়েছেন। যদিও শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেকে মনে পোষণ করেন, তা প্রকাশ্যে বলেন খুব কম জনই। তবে ব্যতিক্রম ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদেই তিনি প্রকাশ্যে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদেও লুকোচাপা করেননি; বরং দাবি করেছেন, “সাতটি যুদ্ধ থামানোর কারণে আমি সাতটি নোবেলের দাবিদার।”

তবে আগের মতোই এবারও ট্রাম্পের ভাগ্যে নোবেল জোটেনি। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেলজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে ভেনিজুয়েলার মানবাধিকারকর্মী মারিয়া করিনা মাচাদো-র নাম।

ঘোষণার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে—নোবেল না পেয়ে ট্রাম্প এবার কী প্রতিক্রিয়া জানাবেন? নীরব থাকবেন, নাকি আগের মতোই ক্ষুব্ধ মন্তব্য করবেন?

এই প্রশ্ন অমূলক নয়। কারণ, ট্রাম্প নিজেই একাধিকবার বলেছেন তিনি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য। বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে তিনি ছিলেন সবচেয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের একজন।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট চাইবেন, আর তা পাবেন না—এমন নজির কমই আছে। নিজের দেশে তিনি প্রায় সবকিছুই নিজের মতো করে করেছেন। কিন্তু নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এবারও তাকে মনোনীত করেনি।

এদিকে, নোবেল না পেলে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নরওয়ে। দেশটির সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টির বৈদেশিক নীতির মুখপাত্র বলেছেন, “নোবেল কমিটি একটি স্বাধীন সংস্থা। বিজয়ী নির্ধারণে নরওয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ট্রাম্প এটি জানেন কি না, তা বলা কঠিন। তার কাছ থেকে যেকোনো প্রতিক্রিয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারকাল থেকেই বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে না পারলেও দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারত–পাকিস্তান, থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়াসহ সাতটি যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা রাখার দাবি করেছেন তিনি।

তার ভাষায়, “আমি সাতটি যুদ্ধ থামিয়েছি, আমার সাতটি নোবেল পাওয়া উচিত।”

সবশেষে, ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রেও তিনি নিজেকে মূল মধ্যস্থতাকারী দাবি করেন। পাকিস্তান, ইসরায়েল, আলজেরিয়াসহ কয়েকটি দেশও নোবেল মনোনয়নে তার নাম প্রস্তাব করেছিল। এসব কারণেই এবারের নোবেল নিয়ে তিনি ছিলেন আশাবাদী।

তবে নোবেল কমিটি আগেই জানিয়েছিল, বিজয়ী নির্ধারণের প্রক্রিয়া হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির অনেক আগেই শেষ হয়েছে। ফলে এই কারণ দেখিয়ে ট্রাম্পের জেতার সুযোগ ছিল না।

নোবেল বিশ্লেষকরাও পূর্বাভাস দিয়েছিলেন—ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শেষ পর্যন্ত তাদের ধারণাই সত্য প্রমাণিত হলো।

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ১০ অক্টোবর ২০২৫ সালে, নরওয়ের রাজধানী অসলোতে অবস্থিত নোবেল ইনস্টিটিউটে।

এ বছর শান্তিতে নোবেলের জন্য মোট ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়ে—যার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংস্থা ছিল।

শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া করিনা মাচাদো

ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে কমিটি জানায়— “ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা জোগানো এবং একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রচেষ্টার জন্য মাচাদোকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।”

নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট জানায়, গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিল জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। তাদের “পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের প্রচেষ্টা”র জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

১৯০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ১১১ জন ব্যক্তি৩১টি সংস্থা—এর মধ্যে ৯২ জন পুরুষ১৯ জন নারী

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসছে। সুইডিশ বিজ্ঞানী ও ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল-এর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর তার রেখে যাওয়া অর্থে এই পুরস্কার চালু হয়। পরে ১৯৬৯ সালে এতে যুক্ত হয় অর্থনীতিতে নোবেল।

নিউজটি শেয়ার করুন

এবারও নোবেল জোটেনি ট্রাম্পের কপালে, পেলেন ভেনিজুয়েলার মারিয়া করিনা মাচাদো

আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার—বিতর্ক থাকলেও এটি বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রনেতা—বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করা বহু ব্যক্তি এই পুরস্কার পেয়েছেন। যদিও শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেকে মনে পোষণ করেন, তা প্রকাশ্যে বলেন খুব কম জনই। তবে ব্যতিক্রম ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদেই তিনি প্রকাশ্যে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদেও লুকোচাপা করেননি; বরং দাবি করেছেন, “সাতটি যুদ্ধ থামানোর কারণে আমি সাতটি নোবেলের দাবিদার।”

তবে আগের মতোই এবারও ট্রাম্পের ভাগ্যে নোবেল জোটেনি। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেলজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে ভেনিজুয়েলার মানবাধিকারকর্মী মারিয়া করিনা মাচাদো-র নাম।

ঘোষণার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে—নোবেল না পেয়ে ট্রাম্প এবার কী প্রতিক্রিয়া জানাবেন? নীরব থাকবেন, নাকি আগের মতোই ক্ষুব্ধ মন্তব্য করবেন?

এই প্রশ্ন অমূলক নয়। কারণ, ট্রাম্প নিজেই একাধিকবার বলেছেন তিনি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য। বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে তিনি ছিলেন সবচেয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের একজন।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট চাইবেন, আর তা পাবেন না—এমন নজির কমই আছে। নিজের দেশে তিনি প্রায় সবকিছুই নিজের মতো করে করেছেন। কিন্তু নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এবারও তাকে মনোনীত করেনি।

এদিকে, নোবেল না পেলে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নরওয়ে। দেশটির সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টির বৈদেশিক নীতির মুখপাত্র বলেছেন, “নোবেল কমিটি একটি স্বাধীন সংস্থা। বিজয়ী নির্ধারণে নরওয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ট্রাম্প এটি জানেন কি না, তা বলা কঠিন। তার কাছ থেকে যেকোনো প্রতিক্রিয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারকাল থেকেই বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে না পারলেও দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারত–পাকিস্তান, থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়াসহ সাতটি যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা রাখার দাবি করেছেন তিনি।

তার ভাষায়, “আমি সাতটি যুদ্ধ থামিয়েছি, আমার সাতটি নোবেল পাওয়া উচিত।”

সবশেষে, ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রেও তিনি নিজেকে মূল মধ্যস্থতাকারী দাবি করেন। পাকিস্তান, ইসরায়েল, আলজেরিয়াসহ কয়েকটি দেশও নোবেল মনোনয়নে তার নাম প্রস্তাব করেছিল। এসব কারণেই এবারের নোবেল নিয়ে তিনি ছিলেন আশাবাদী।

তবে নোবেল কমিটি আগেই জানিয়েছিল, বিজয়ী নির্ধারণের প্রক্রিয়া হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির অনেক আগেই শেষ হয়েছে। ফলে এই কারণ দেখিয়ে ট্রাম্পের জেতার সুযোগ ছিল না।

নোবেল বিশ্লেষকরাও পূর্বাভাস দিয়েছিলেন—ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শেষ পর্যন্ত তাদের ধারণাই সত্য প্রমাণিত হলো।

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ১০ অক্টোবর ২০২৫ সালে, নরওয়ের রাজধানী অসলোতে অবস্থিত নোবেল ইনস্টিটিউটে।

এ বছর শান্তিতে নোবেলের জন্য মোট ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়ে—যার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংস্থা ছিল।

শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া করিনা মাচাদো

ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে কমিটি জানায়— “ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা জোগানো এবং একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রচেষ্টার জন্য মাচাদোকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।”

নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট জানায়, গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিল জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। তাদের “পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের প্রচেষ্টা”র জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

১৯০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ১১১ জন ব্যক্তি৩১টি সংস্থা—এর মধ্যে ৯২ জন পুরুষ১৯ জন নারী

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসছে। সুইডিশ বিজ্ঞানী ও ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল-এর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর তার রেখে যাওয়া অর্থে এই পুরস্কার চালু হয়। পরে ১৯৬৯ সালে এতে যুক্ত হয় অর্থনীতিতে নোবেল।