এনসিপি’র ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’র ইশতেহারে ২৪ দফা, যা আছে
- আপডেট সময় : ০৮:৩৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
- / 249

এক বছর আগে যে স্থান থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি তুলেছিলেন, অভ্যুত্থানের বছর পূর্তির আগে ঠিক সেই স্থানে দাঁড়িয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করলেন নাহিদ ইসলাম। রবিবার (৩ আগস্ট) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হিসাবে দলের পক্ষ থেকে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন নাহিদ।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এই দল পরিচালনার ভার নেন নাহিদ। অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে সারাদেশে ‘জুলাই পদযাত্রা’ করে আসার পর রবিবার ঢাকার শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ শিরোনামে সমাবেশ করে এনসিপি।
নতুন দল গঠন করে রাজনীতির মাঠে নামার কারণ ব্যাখ্যা করে নাহিদ বলেন, “কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাত করে আরেক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইনি। তাই গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা এনসিপি গঠন করেছি। আমরা মনে করছি, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উৎপাটন ছাড়া জনগণের মুক্তি নেই।”
এরপর তিনি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় ২৪ দফা ইশতেহার সমাবেশে পড়ে শোনান।
১. নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে তার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা।
২. জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার করা।
৩. গুম ও বিচারবহির্ভূ হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ডের বিচার করা।
৪. ন্যায়ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও আইন সংস্কার। ঔপনিবেশিক আইনের সংস্কার। মৌলিক মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করে এমন কোনও আইন প্রণয়ন না করা।
৫. সেবামুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দমন। প্রশাসনে দলীয়করণ বন্ধ।
৬. জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠন। পুলিশ আইন যুগোপযোগী করা। র্যাব বিলুপ্ত করা।
৭. গ্রাম পার্লামেন্ট গঠন করে স্থানীয় প্রশাসন কাঠামো তৈরি। গ্রাম পার্লামেন্টের হাতে স্থানীয় সরকারের উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হবে। স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন হবে।
৮. স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ গঠন। প্রেস কাউন্সিল যুগোপযোগী করা হবে।
৯. সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে অর্থের অভাবে কারও চিকিৎসা পাওয়া আটকাবে না।
১০. জাতি গঠনে শিক্ষানীতি প্রণয়ন। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দক্ষতা ও জ্ঞানভিত্তিক একটি সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করা। বিভিন্ন ধারার শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন।
১১. গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব।
১২. ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতি সত্তার মর্যাদা নিশ্চিত। সব ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে বহুত্ববাদী বাংলাদেশ গঠন।
১৩. নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন। নিম্ন কক্ষে ১০০টি আসনে নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখার ঘোষণা।
১৪. মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমূলক অর্থনীতি। ব্যাংকিং ও আর্থিক কাঠামো শক্তিশালী করা, পুঁজিবাজার সংস্কার করা।
১৫. তারুণ্য ও কর্মসংস্থান। ৩০ লাখ বেকারের জন্য মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে দক্ষতা উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ।
১৬. বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ।
১৭. টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব।
১৮. কৃষক-শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত।
১৯. জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা।
২০. নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা।
২১. জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা।
২২. প্রবাসী বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা।
২৩. বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন। দলীয় স্বার্থ ও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে পারস্পরিক সম্মান ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
২৪. জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল। গণপ্রতিরক্ষা দর্শনের ভিত্তিতে তরুণদের প্রশিক্ষিত করা হবে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন।
ইশতেহার ঘোষণা করে নাহিদ বলেন, “এক বছর আগে এই শহীদ মিনারে আমরা শপথ নিয়েছিলাম, দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে আমরা মুক্ত করব। আপনারা সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় আমরা সবাই মিলে ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করেছি।
“আজ আবারও এই শহীদ মিনার থেকে আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন আমরা সবাই মিলে এই ঐতিহাসিক ২৪ দফা বাস্তবায়ন করে আমাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।”
সারাদেশের এনসিপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
‘ইনকিলাব-জিন্দাবাদ’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে সমাবেশে ইতি টানা নাহিদ বলেন, এই ২৪ দফা ইশতেহার বাস্তবায়নে এনসিপি লড়াই চালিয়ে যাবে।


















