এখন লড়াই নতুন বাংলাদেশের, বক্তৃতার সময় লুটিয়ে পড়লেন আমির
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম জামায়াতের শোডাউন
- আপডেট সময় : ০৭:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
- / 206

দলের সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, জেল-জুলুমের পরোয়া করিনি। আমাদের লড়াই চালিয়ে গিয়েছি। এখন লড়াই নতুন বাংলাদেশের।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির সমাবেশে জামায়াত আমির এই কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে আমরা পিলখানা হত্যাকাণ্ড দেখেছি, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড দেখেছি; ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড দেখেছি। এ সব গণহত্যার বিচার বাংলার মাটিতে হবে ইনশাল্লাহ। গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না।”
জামায়াত আমির বলেন, “আমি বলতে চাই আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে? আমি বলব, আরেকটি লড়াই হবে ইনশাআল্লাহ। একটি লড়াই হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটি লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”
তিনি বলেন, “দুর্নীতির মূল উৎপাটনের জন্য যা করা দরকার, আমরা তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে একত্র করে সেই লড়াইয়েও ইনশাআল্লাহ বিজয় লাভ করব। মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর ইচ্ছায় দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে ইনশাআল্লাহ।”
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
শনিবার বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে প্রথম দফায় পড়ে যান তিনি। পরে পাশে থাকা নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ফেলেন।
এর মিনিট খানেক বাদে জামায়াত আমির উঠে দাঁড়ান এবং আবার বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু আবারও পড়ে যান তিনি।
পরে নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “গরমের জন্য আমিরে জামায়াত সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার আর বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না।”
তবে কিছুক্ষণ পর না দাঁড়িয়ে মঞ্চে ডায়াসের পাশে পা মেলে বসে বক্তব্য দেন তিনি। এসময় তার পাশে চিকিৎসকদেরও দেখা গেছে।
বসে বসেই প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই শেষ হয় দলটির ‘জাতীয় সমাবেশ’।
তিনি বলেন, “আল্লাহ আমার হায়াত যতক্ষণ রেখেছেন তার এক মিনিটও বেশি থাকতে পারব না আমি। সুতরাং আপনারা কেউ বিচলিত হবেন না।”
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার এই সমাবেশ করে জামাতে ইসলামী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল, যেখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই ঐতিহাসিক স্থানে এই প্রথম সমাবেশ করল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী। একটি বড় জমায়েতের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে দলটি। এতে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের দলীয় উদ্যোগে জড়ো করা হয়।
বেলা দুইটার দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হয়।
বেলা দুইটার দিকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও নাতে রাসুলের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের মূল পর্ব। নাতে রাসুল পরিবেশন করেন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা।
এরপর বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। দলের আমির শফিকুর রহমান সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
বিএনপি, এবি পার্টিকে আমন্ত্রণ জানায়নি জামায়াত
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাতীয় সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছ জামায়াতে ইসলামী। তবে আমন্ত্রণ করেনি ২৪ বছরের জোটসঙ্গী বিএনপিকে। পিআরের পক্ষে থাকার পরও দলত্যাগী জামায়াতের সাবেক নেতাদের দল এবি পার্টিকেও আমন্ত্রণ করেনি তারা।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সমকালকে জানান, পিআরের পক্ষে থাকা দলগুলোকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে বিএনপিকে আমন্ত্রণ না করার কারণ সম্পর্কে জামায়াতের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেছেন, সমাবেশ করা হচ্ছে আনুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের দাবিতে। বিএনপি পিআরের ঘোরবিরোধী। তাই আমন্ত্রণ করা হয়নি। আমন্ত্রণ করলে দুই দলকে বিব্রত হতে হতো।
একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত- এ অবস্থানের কারণে জামায়াত থেকে ২০১৯ সালে বহিষ্কার করা হয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে। পরের বছর তিনি এবি পার্টি গঠন করেন। জামায়াত, শিবিরের অনেকেই যোগ দিয়েছেন এ দলে।
এবি পার্টিও পিআর চায়। তারপরও সমাবেশে আমন্ত্রণ না করার কারণ সম্পর্কে জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেছেন, মজিবুর রহমান মঞ্জুর প্রতি নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ, কারণ তিনি নিয়মিত জামায়াতের সমালোচনা করেন। তিনি সমাবেশে বক্তৃতা করলে কর্মীরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। এ ঝুঁকির কারণে আমন্ত্রণ করা হয়নি এবি পার্টিকে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সাল থেকে পরের দুই যুগ একজোট ছিল বিএনপি ও জামায়াত। একসঙ্গে সরকার পরিচালনা করে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতার ভিত্তিতে জোট ভাঙে দুই দল। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন থেকেও সরে যায় জামায়াত। জুলাই অভ্যুত্থানে দল দুটি অংশ নিলেও ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রধান নির্বাচনী প্রতিযোগী হওয়ার চেষ্টা করছে জামায়াত। তবে দুই দলের নেতারা একে অপরের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।


















