ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ইরান কি সত্যিই পরমাণু বোমা বানানোর দ্বারপ্রাপ্তে ছিল?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:৪৯:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
  • / 281
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০১৯ সালের নভেম্বরে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা যে ছবি প্রকাশ করেছিল, তাতে নাতানজ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে সেন্ট্রিফিউজ মেশিন দেখা যায়।

ইরান পরমাণু বোমা বানানো থেকে আর কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহ দূরে- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর এমন অভিযোগ নতুন নয়। সেই ১৯৯৫ সাল থেকেই এই ভয় দেখিয়ে আসছেন তিনি। এবার সরাসরি আক্রমণ করে বসলেন দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলা করল পারস্যের তিনটি পরমাণু স্থাপনায়; নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কায় গোটা বিশ্ব।

কিন্তু সত্যিই কি ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টায় আছে? দেশটি কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য স্বীকার করেনি, তাদের পরমাণু কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্তও রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনার জন্য অপেক্ষাতেও ছিল। কিন্তু এখন সেসব বক্তব্য অর্থহীন।

গত ৩১ মে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার (আইএইএ) একটি গোপন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবি করা হয়, পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায় এমন স্তরের কাছাকাছি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়িয়েছে ইরান।

ত্রৈমাসিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৭ মে পর্যন্ত ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ প্রায় ৪০৮ দশমিক ছয় কিলোগ্রাম। আরও সমৃদ্ধ করা হলে কমপক্ষে ১০টি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে ইরান।

প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই বিষয়টি অস্বীকার করে ইরান। দেশটি অভিযোগ তোলে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এমন ভিত্তিহীন প্রতিবেদন দিয়েছে আইএইএ।

এমন পরিস্থিতি এখন প্রশ্ন উঠেছে, মার্কিন হামলার পরে ইরান তার কথিত পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে কি না?

বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাকর্মকর্তা ফক্স নিউজের নিবন্ধে লিখেছেন, “হ্যাঁ, ইরান অস্ত্র তৈরির উপযুক্ত মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে-কিন্তু শুধু এটুকু করলেই বোমা তৈরি হয় না। তেহরানকে এখনও ওয়ারহেড ডিজাইন, ডিটোনেটর সিঙ্ক্রোনাইজেশন, পুনঃপ্রবেশে সুরক্ষা এবং ডেলিভারি সিস্টেমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর কোনোটিই তারা করেছে বলে প্রমাণিত কোনো তথ্য নেই।”

ইরান কি এখন সত্যিই এই পথে হাঁটবে?

পারস্যের দেশটি হামলার জবাব দিতে যে কোনো পদক্ষেপের কথা বললেও পরমাণু বোমা বানাবেই এমন কোনো হুমকি দেয়নি।

তবে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি আনাতোলিয়েভিচ মেদভেদেভ মনে করেন ইরান এই পথেই হাঁটতে যাচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “পারমাণবিক উপাদান সমৃদ্ধকরণ — এবং এখন তা স্পষ্টভাবে বলা যায়, ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন — অব্যাহত থাকবে।”

২০২০ সাল থেকে মেদভেদেভ রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন। তার আগের আট বছর ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগের চার বছর অর্থাৎ ২০০৮ সাল থেকে ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মেদভেদেভের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। পুতিন যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন মেদভেদেভ প্রধানমন্ত্রী আর পুতিন যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মেদভেদেভ ছিলেন প্রেসিডেন্ট।

রুশ নেতা এমনও লিখেছেন, বেশ কয়েকটি দেশ ইরানকে সরাসরি নিজেদের পারমাণবিক ওয়ারহেড সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

অবশ্য কোন কোন দেশ পরমাণু অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত সে বিষয়ে তিনি নেতা কিছু বলেননি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত। তারা পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেছে।

এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান ও ইসরায়েলে নিশ্চিতভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে। উত্তর কোরিয়ারও আছে বলে ধারণা করা হয়। এই দেশগুলো পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেনি।

পশ্চিমা সহায়তাতেই ইরানে পরমাণু প্রকল্প

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সূচনা হয় শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি-র আমলে। বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত এই শাসকের এই উদ্যোগে সহযোগিতাই করেছিল পশ্চিমারা। সে সময় ২০ বছরে ২০টি পারমাণবিক স্থাপনা গড়ে তোলার ঘোষণা ছিল।

তবে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর পশ্চিমা দেশগুলো সহায়তা বন্ধ করে দেয়। তারা আশির দশক এবং ২০০০ সালের পর থেকে পারমাণবিক স্থাপনার সামরিক ব্যবহারের অভিযোগ আনতে থাকে।

দেশটি বরাবর তার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহারের কথা বললেও পশ্চিমারা অভিযোগ করতে থাকে যে তারা অস্ত্র তৈরি করছে।

নেতানিয়াহুর ‘ঢোল’ বেজে চলেছে ৩০ বছর ধরে

ইরানে হামলার আগের দিন অর্থাৎ গত ১২ জুন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, “ইরানকে যদি থামানো না যায়, তাহলে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে। এটা কয়েক বছরের মধ্যে হতে পারে, অথবা কয়েক মাসের মধ্যেও হতে পারে।”

তবে এই ধরনের বক্তব্য কিন্তু তিনি নতুন দেননি। সেই ১৯৯৫ সাল যখন তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, তখন থেকেই বলে আসছেন।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের বিষয়ে বলেন, “তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছে, তাতে তারা খুব দ্রুতই বোমা তৈরি করতে পারবে।”

তারও তিন বছর আগে ২০১৫ সালে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান খুবই বিপজ্জনক। তারা পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে কেবল কয়েক সপ্তাহ দূরত্বে আছে।”

তারও তিন বছর আগে ২০১২ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইরান ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধকরণের খুব কাছাকাছি সম্ভবত ছয় মাস দূরত্বে অবস্থান করছে, যা দিয়ে পরমাণু বোমা তৈরি করা যাবে।”

তারও ছয় বছর আগে ২০০৬ সালে নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান এক বছরে ২৫টি পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে আর এক দশকে ২৫০টি বোমা তৈরি করার চেষ্টায় আছে।”

১৯৯৬ সালে তিনি বলেন, “সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।”

তার আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে ইসরায়েলের সে সময়কার বিরোধীদলের নেতা বলেন, “ইরান কোনো কিছু আমদানি না করে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলতে পারবে।”

গত ৩১ মে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভূরাজনৈতিক সুবিধাটুকু নিতে দেরি করেননি নেতানিয়াহু। তিনি দাবি করেন, “পরমাণু অস্ত্র বানানোর উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো দেশ এত পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে না। ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যও পাল্টাল ক্ষণে ক্ষণে

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড গত মার্চ মাসে কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে বলেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং সর্বোচ্চ নেতা খামেনি ২০০৩ সালে যে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন, তা পুনরায় অনুমোদন করেননি।”

তবে গত ২০ জুন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার অবস্থানগত অমিল দেখা দেয়। সেদিন নিউ জার্সির বেডমিনস্টারে সাংবাদিকদেরকে প্রেসিডেন্ট বলেন, “তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল বলেছে।”

এরপর গ্যাবার্ড তার বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, “আমেরিকার কাছে এমন তথ্য রয়েছে যে, ইরান যদি চায়, তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।”

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এটি হতে দেওয়া যাবে না, এবং আমি একমত”, এমনও বলেন তিনি।

মার্চের দেওয়া সেই বক্তব্য সঠিকভাবে আসেনি, এমন দাবিও করেন তুলসি। বলেন, কংগ্রেসের সাক্ষ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং মিডিয়া সেই বক্তব্যকে ‘ভুলভাবে’ তুলে ধরেছে।

ইরানের ক্ষতি কতটুকু?

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে, দেশটির অন্তত ১০ জন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। তবে দেশটির বেশ কিছু পারমাণবিক স্থাপনা মাটির গভীর অবস্থিত হওয়ায় খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি।

৯ দিনের মাথায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন বিমান হামলে পড়ে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিন পরমাণু স্থাপনা নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানে।

হামলার পরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে- ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। অন্যদিকে ইরান জানিয়েছে, মার্কিন হামলায় তাদের পরমাণু কর্মসূচির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হামলার আগেই সরিয়ে কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল সমস্ত পারমাণবিক উপকরণ।

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদো মাটির ৬০ মিটারেরও বেশি গভীরে অবস্থিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লাঙ্কার ব্লাস্টার জিবিইউ-৫৭ বোমা সর্বোচ্চ ৬০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। কিন্তু ফোরদো তার চেয়েও গভীরে।

যুক্তরাজ্যের রুশি থিংক ট্যাংক মার্চে জানায়, “একবারে এক বোমা ফেলে ফোরদো ভেদ করা সম্ভব নয়। একই স্থানে একাধিকবার আঘাত করতে হবে।”

সাবেক মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্নেল এবং সিএনএন বিশ্লেষক সেডরিক লেইটন বলেন, “ফোরদো লক্ষ্য করে একাধিক হামলার পরিকল্পনা রাখতে হবে।”

ওয়াশিংটনভিত্তিক পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সংস্থা আইএসআইএস এর প্রধান ডেভিড অলব্রাইট বলেন, “ইসরায়েল চাইলে সুড়ঙ্গ প্রবেশপথ ও বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারে। বিদ্যুৎ সংযোগও কেটে দিলে এটি চালু করতে মাসখানেক সময় লেগে যাবে।”

তবে ফোরদো ধ্বংস মানেই সব শেষ নয় বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন থাকে—ইরান আরও কোথায় সেন্ট্রিফিউজ লুকিয়ে রেখেছে?”

“অনেকে মনে করেন এর ছাদ ভেঙে ফেলতে হবে, যা সম্ভবত একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারে। তবে সেটিই একমাত্র উপায় নয়”, বলেন অলব্রাইট।

ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত একাধিক দেশ: রাশিয়া

রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দিমিত্রি মেদভেদেভ দাবি করেছেন, কয়েকটি দেশ সরাসরি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত রয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর এমন দাবি করলেন তিনি। শনিবার (২১ জুন) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে বোমা হামলা চালায় মার্কিন যুদ্ধবিমান। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল এ খবর জানিয়েছে।

টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান উপ-সভাপতি মেদভেদেভ বলেন, একাধিক দেশ ইরানকে সরাসরি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

মেদভেদেভ বলেন, যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে- সেগুলোতে আঘাত তুলনামূলকভাবে সামান্য হয়েছে বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি হয়নি। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম সম্ভবত অব্যাহত থাকবে ভরেও জানান তিনি।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। এবার ‘স্থল অভিযান’ শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন যে ইরানি নেতৃত্ব এই হামলার পর রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্পের সমালোচনা করে মেদভেদেভ বলেন, যিনি নিজেকে ‘শান্তির দূত’ বলে প্রচার করেছিলেন। তিনি আবারও একটি যুদ্ধ শুরু করলেন।

তিনি আরও দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্পষ্টতই বিশ্বে বেশিরভাগ দেশ অবস্থান নিয়েছে।’

১৩ জুন থেকে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধির পর যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালায়। এর জবাবে তেহরান ইসরায়েলি শহর ও সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৩০ জন নিহত এবং ৩,৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইরানি হামলায় ২৫ জন নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইরান কি সত্যিই পরমাণু বোমা বানানোর দ্বারপ্রাপ্তে ছিল?

আপডেট সময় : ১০:৪৯:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

২০১৯ সালের নভেম্বরে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা যে ছবি প্রকাশ করেছিল, তাতে নাতানজ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে সেন্ট্রিফিউজ মেশিন দেখা যায়।

ইরান পরমাণু বোমা বানানো থেকে আর কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহ দূরে- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর এমন অভিযোগ নতুন নয়। সেই ১৯৯৫ সাল থেকেই এই ভয় দেখিয়ে আসছেন তিনি। এবার সরাসরি আক্রমণ করে বসলেন দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলা করল পারস্যের তিনটি পরমাণু স্থাপনায়; নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কায় গোটা বিশ্ব।

কিন্তু সত্যিই কি ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টায় আছে? দেশটি কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য স্বীকার করেনি, তাদের পরমাণু কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্তও রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনার জন্য অপেক্ষাতেও ছিল। কিন্তু এখন সেসব বক্তব্য অর্থহীন।

গত ৩১ মে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার (আইএইএ) একটি গোপন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবি করা হয়, পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায় এমন স্তরের কাছাকাছি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়িয়েছে ইরান।

ত্রৈমাসিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৭ মে পর্যন্ত ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ প্রায় ৪০৮ দশমিক ছয় কিলোগ্রাম। আরও সমৃদ্ধ করা হলে কমপক্ষে ১০টি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে ইরান।

প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই বিষয়টি অস্বীকার করে ইরান। দেশটি অভিযোগ তোলে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এমন ভিত্তিহীন প্রতিবেদন দিয়েছে আইএইএ।

এমন পরিস্থিতি এখন প্রশ্ন উঠেছে, মার্কিন হামলার পরে ইরান তার কথিত পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে কি না?

বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাকর্মকর্তা ফক্স নিউজের নিবন্ধে লিখেছেন, “হ্যাঁ, ইরান অস্ত্র তৈরির উপযুক্ত মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে-কিন্তু শুধু এটুকু করলেই বোমা তৈরি হয় না। তেহরানকে এখনও ওয়ারহেড ডিজাইন, ডিটোনেটর সিঙ্ক্রোনাইজেশন, পুনঃপ্রবেশে সুরক্ষা এবং ডেলিভারি সিস্টেমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর কোনোটিই তারা করেছে বলে প্রমাণিত কোনো তথ্য নেই।”

ইরান কি এখন সত্যিই এই পথে হাঁটবে?

পারস্যের দেশটি হামলার জবাব দিতে যে কোনো পদক্ষেপের কথা বললেও পরমাণু বোমা বানাবেই এমন কোনো হুমকি দেয়নি।

তবে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি আনাতোলিয়েভিচ মেদভেদেভ মনে করেন ইরান এই পথেই হাঁটতে যাচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “পারমাণবিক উপাদান সমৃদ্ধকরণ — এবং এখন তা স্পষ্টভাবে বলা যায়, ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন — অব্যাহত থাকবে।”

২০২০ সাল থেকে মেদভেদেভ রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন। তার আগের আট বছর ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগের চার বছর অর্থাৎ ২০০৮ সাল থেকে ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মেদভেদেভের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। পুতিন যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন মেদভেদেভ প্রধানমন্ত্রী আর পুতিন যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মেদভেদেভ ছিলেন প্রেসিডেন্ট।

রুশ নেতা এমনও লিখেছেন, বেশ কয়েকটি দেশ ইরানকে সরাসরি নিজেদের পারমাণবিক ওয়ারহেড সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

অবশ্য কোন কোন দেশ পরমাণু অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত সে বিষয়ে তিনি নেতা কিছু বলেননি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত। তারা পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেছে।

এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান ও ইসরায়েলে নিশ্চিতভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে। উত্তর কোরিয়ারও আছে বলে ধারণা করা হয়। এই দেশগুলো পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেনি।

পশ্চিমা সহায়তাতেই ইরানে পরমাণু প্রকল্প

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সূচনা হয় শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি-র আমলে। বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত এই শাসকের এই উদ্যোগে সহযোগিতাই করেছিল পশ্চিমারা। সে সময় ২০ বছরে ২০টি পারমাণবিক স্থাপনা গড়ে তোলার ঘোষণা ছিল।

তবে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর পশ্চিমা দেশগুলো সহায়তা বন্ধ করে দেয়। তারা আশির দশক এবং ২০০০ সালের পর থেকে পারমাণবিক স্থাপনার সামরিক ব্যবহারের অভিযোগ আনতে থাকে।

দেশটি বরাবর তার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহারের কথা বললেও পশ্চিমারা অভিযোগ করতে থাকে যে তারা অস্ত্র তৈরি করছে।

নেতানিয়াহুর ‘ঢোল’ বেজে চলেছে ৩০ বছর ধরে

ইরানে হামলার আগের দিন অর্থাৎ গত ১২ জুন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, “ইরানকে যদি থামানো না যায়, তাহলে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে। এটা কয়েক বছরের মধ্যে হতে পারে, অথবা কয়েক মাসের মধ্যেও হতে পারে।”

তবে এই ধরনের বক্তব্য কিন্তু তিনি নতুন দেননি। সেই ১৯৯৫ সাল যখন তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, তখন থেকেই বলে আসছেন।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের বিষয়ে বলেন, “তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছে, তাতে তারা খুব দ্রুতই বোমা তৈরি করতে পারবে।”

তারও তিন বছর আগে ২০১৫ সালে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান খুবই বিপজ্জনক। তারা পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে কেবল কয়েক সপ্তাহ দূরত্বে আছে।”

তারও তিন বছর আগে ২০১২ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইরান ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধকরণের খুব কাছাকাছি সম্ভবত ছয় মাস দূরত্বে অবস্থান করছে, যা দিয়ে পরমাণু বোমা তৈরি করা যাবে।”

তারও ছয় বছর আগে ২০০৬ সালে নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান এক বছরে ২৫টি পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে আর এক দশকে ২৫০টি বোমা তৈরি করার চেষ্টায় আছে।”

১৯৯৬ সালে তিনি বলেন, “সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।”

তার আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে ইসরায়েলের সে সময়কার বিরোধীদলের নেতা বলেন, “ইরান কোনো কিছু আমদানি না করে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলতে পারবে।”

গত ৩১ মে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভূরাজনৈতিক সুবিধাটুকু নিতে দেরি করেননি নেতানিয়াহু। তিনি দাবি করেন, “পরমাণু অস্ত্র বানানোর উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো দেশ এত পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে না। ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যও পাল্টাল ক্ষণে ক্ষণে

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড গত মার্চ মাসে কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে বলেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং সর্বোচ্চ নেতা খামেনি ২০০৩ সালে যে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন, তা পুনরায় অনুমোদন করেননি।”

তবে গত ২০ জুন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার অবস্থানগত অমিল দেখা দেয়। সেদিন নিউ জার্সির বেডমিনস্টারে সাংবাদিকদেরকে প্রেসিডেন্ট বলেন, “তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল বলেছে।”

এরপর গ্যাবার্ড তার বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, “আমেরিকার কাছে এমন তথ্য রয়েছে যে, ইরান যদি চায়, তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।”

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এটি হতে দেওয়া যাবে না, এবং আমি একমত”, এমনও বলেন তিনি।

মার্চের দেওয়া সেই বক্তব্য সঠিকভাবে আসেনি, এমন দাবিও করেন তুলসি। বলেন, কংগ্রেসের সাক্ষ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং মিডিয়া সেই বক্তব্যকে ‘ভুলভাবে’ তুলে ধরেছে।

ইরানের ক্ষতি কতটুকু?

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে, দেশটির অন্তত ১০ জন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। তবে দেশটির বেশ কিছু পারমাণবিক স্থাপনা মাটির গভীর অবস্থিত হওয়ায় খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি।

৯ দিনের মাথায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন বিমান হামলে পড়ে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিন পরমাণু স্থাপনা নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানে।

হামলার পরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে- ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। অন্যদিকে ইরান জানিয়েছে, মার্কিন হামলায় তাদের পরমাণু কর্মসূচির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হামলার আগেই সরিয়ে কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল সমস্ত পারমাণবিক উপকরণ।

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদো মাটির ৬০ মিটারেরও বেশি গভীরে অবস্থিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লাঙ্কার ব্লাস্টার জিবিইউ-৫৭ বোমা সর্বোচ্চ ৬০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। কিন্তু ফোরদো তার চেয়েও গভীরে।

যুক্তরাজ্যের রুশি থিংক ট্যাংক মার্চে জানায়, “একবারে এক বোমা ফেলে ফোরদো ভেদ করা সম্ভব নয়। একই স্থানে একাধিকবার আঘাত করতে হবে।”

সাবেক মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্নেল এবং সিএনএন বিশ্লেষক সেডরিক লেইটন বলেন, “ফোরদো লক্ষ্য করে একাধিক হামলার পরিকল্পনা রাখতে হবে।”

ওয়াশিংটনভিত্তিক পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সংস্থা আইএসআইএস এর প্রধান ডেভিড অলব্রাইট বলেন, “ইসরায়েল চাইলে সুড়ঙ্গ প্রবেশপথ ও বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারে। বিদ্যুৎ সংযোগও কেটে দিলে এটি চালু করতে মাসখানেক সময় লেগে যাবে।”

তবে ফোরদো ধ্বংস মানেই সব শেষ নয় বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন থাকে—ইরান আরও কোথায় সেন্ট্রিফিউজ লুকিয়ে রেখেছে?”

“অনেকে মনে করেন এর ছাদ ভেঙে ফেলতে হবে, যা সম্ভবত একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারে। তবে সেটিই একমাত্র উপায় নয়”, বলেন অলব্রাইট।

ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত একাধিক দেশ: রাশিয়া

রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দিমিত্রি মেদভেদেভ দাবি করেছেন, কয়েকটি দেশ সরাসরি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত রয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর এমন দাবি করলেন তিনি। শনিবার (২১ জুন) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে বোমা হামলা চালায় মার্কিন যুদ্ধবিমান। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল এ খবর জানিয়েছে।

টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান উপ-সভাপতি মেদভেদেভ বলেন, একাধিক দেশ ইরানকে সরাসরি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

মেদভেদেভ বলেন, যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে- সেগুলোতে আঘাত তুলনামূলকভাবে সামান্য হয়েছে বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি হয়নি। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম সম্ভবত অব্যাহত থাকবে ভরেও জানান তিনি।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। এবার ‘স্থল অভিযান’ শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন যে ইরানি নেতৃত্ব এই হামলার পর রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্পের সমালোচনা করে মেদভেদেভ বলেন, যিনি নিজেকে ‘শান্তির দূত’ বলে প্রচার করেছিলেন। তিনি আবারও একটি যুদ্ধ শুরু করলেন।

তিনি আরও দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্পষ্টতই বিশ্বে বেশিরভাগ দেশ অবস্থান নিয়েছে।’

১৩ জুন থেকে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধির পর যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালায়। এর জবাবে তেহরান ইসরায়েলি শহর ও সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৩০ জন নিহত এবং ৩,৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইরানি হামলায় ২৫ জন নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হয়েছে।