ইরানে নজিরবিহীন হামলা: এত বড় সিদ্ধান্ত এখন কেন নিল ইসরায়েল?
- আপডেট সময় : ১০:১৩:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / 285

ইরানে গতবছর ইসরায়েলের চালানো দুটো হামলার তুলনায় এবারের হামলার পরিসর আরও ব্যাপক এবং তীব্রও। কেবল তাই নয়, গতবছর নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলায় ইসরায়েল যে কৌশল নিয়েছিল, এবার ইরানে হামলাতেও এর কিছুটা তারা দৃশ্যত কাজে লাগিয়েছে।
আর তা হচ্ছে- কেবল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত হানাই নয়, এবারের হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের নেতৃত্ব পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সরিয়ে দেওয়া।
গতবছর লেবাননে হিজবুল্লাহর ঊর্ধ্বতন সব ব্যক্তিত্বকে কতলের কৌশল নিয়ে ইসরায়েল এই গোষ্ঠীটিকে বিপর্যয়কর পরিণতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলা চালানোর সক্ষমতাও বিপর্যস্ত হয়েছিল।
ইরানের এবার অনেকটা একই চিত্র দেখা গেল। শুক্রবার ভোররাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েকটি ভবনে আঘাতের চিহ্ন। যেগুলো বিশেষ ভবন বলেই মনে হয়েছে ছবিতে।
ফুটেজের এই দৃশ্যের সঙ্গে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে ইসরায়েলের গতবছরের হামলার দৃশ্যের মিল আছে। সেই হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছিলেন।
ইরানে শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলের চালানো হামলায় অবশ্য এত উঁচু পর্যায়ের কেউ নিহত হননি। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হামলার নিশানা হননি। তবে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন।
ইরানের মিলিটারি চিফ অব স্টাফ হোসেইন সালামি-সহ প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ডার, কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতার মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যু ইরানের অভিজাত মহলে নজিরবিহীন ক্ষতি বলা চলে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলা কয়েকদিন ধরে চলতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে তীব্র জবাব দেওয়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। গতবছর ইসরায়েলে ইরানের দুটো হামলার চেয়েও যা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
তবে এমন একটি শক্ত জবাব দেওয়া ইরানের জন্য কঠিনও হতে পারে। সম্ভবত এই হিসাবনিকাশ করেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানে এমন জোর হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এখন কেন ইরানে হামলার এই সিদ্ধান্ত নিলেন নেতানিয়াহু? হতে পারে তিনি যে সমস্ত কারণ এরই মধ্যে উল্লেখ করেছেন সেগুলোর জন্যই তার এমন সিদ্ধান্ত।
ইরানে অভিযান শুরুর পরপরই প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। নেতানিয়াহু বহু বছর ধরেই বলে আসছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে তা হবে ইসরায়েলের জন্য ‘অস্তিত্বের হুমকি’।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা থামিয়ে দেওয়া যে কত জরুরি সেটি নতুন করে তুলে ধরতে এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা দাবি করেছেন- তার কাছে তথ্য রয়েছে যে, তেহরানে এমন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে যা দিয়ে মাত্র কয়েক দিনেই ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।
তবে এছাড়াও বেশ ভিন্ন ধরনের একটি বিষয়ও ইরানে ইসরায়েলে হামলার সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করে থাকতে পারে। রোববার ওমানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনার ষষ্ঠ দফা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এই আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে পরষ্পরবিরোধী আভাসই মিলছে।
ইসরায়েল এই আলোচনা পক্রিয়ার বিরোধী। ফলে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি মেনে নেওয়া সম্ভব না মনে করেই হয়ত নেতানিয়াহু এই সময়টিতেই ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে এর মধ্য দিয়ে আলোচনা বানচাল করে দেওয়া যায়।
তাছড়া, রাজনৈতিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে বর্তমানে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে নেতানিয়াহু বেশ ঝামেলায় আছেন। গাজায় দীর্ঘদিনের অভিযান এবং সেখানে আটক সব জিম্মিকে এখনও উদ্ধার করতে না পারায় ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর জনসমর্থন কমছে।
কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে আগাম নির্বাচনের জন্য জমা পড়া বিলের ওপর ভোটাভুটিও হয়। তাতে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে নেতানিয়াহু বেঁচে গেছেন।
এ পরিস্থিতিতে নিজের গদি বাঁচানো এবং ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে দেশটিতে হামলার জন্য এই সময়ই উপযুক্ত বলে হয়ত মনে করেছেন নেতানিয়াহু।
আবার সামরিক দিক দিয়ে নেতানিয়াহু ও তার উপদেষ্টাদের হয়ত মনে হয়েছে, ইরান এবং ওই অঞ্চলে দেশটির ছায়া গোষ্ঠীগুলো বিশেষ করে, হিজবুল্লাহর শক্তি এখন এতটাই কমেছে যে, তারা আগে যতটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল এখন আর ততটা নেই। ফলে ইরানের বিরুদ্ধে বড় আঘাত হানার জন্য এটিই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
তবে সামনের সময় ও দিনগুলোই বলে দেবে যে, ইসরায়েলের ইরানে হামলা করার এই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হবে, নাকি তা হবে এক বিপজ্জনক ভুল হিসাব-নিকাশ।






















