ঢাকা ০৮:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

৬ বছর আগের গবেষণা— ২০২৫ এ যুদ্ধে জড়াবে ভারত-পাকিস্তান, মারা পড়বে ১২ কোটি মানুষ!

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • / 309
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শেখুপুড়া জেলার মুরিদকে শহরের একটি সরকারি স্থাপনা। ছবি: এএফপি

কাশ্মিরে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। অন্যদিকে ভারত জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মিরের পুঞ্চ-রাজৌরি অঞ্চলে পাকিস্তান কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করেছে।

এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই আবার আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক পুরোনো গবেষণা। ছয় বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৯ সালে রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছিল— ২০২৫ সালেই কাশ্মিরকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধতে পারে।

ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের এ সংঘাতে প্রাণ হারাতে পারে প্রায় ১২ কোটি মানুষ। শুধু তাই নয়, যুদ্ধ-পরবর্তী পরিবেশগত বিপর্যয়ে আরও এক কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

গবেষণায় সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, যদি ভারতীয় সংসদে এক আত্মঘাতী হামলায় সংসদ সদস্যরা নিহত হন, তাহলে ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এরপর দুই দেশ পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে। আরেকটি অনুমানে বলা হয়, কাশ্মিরে সংঘর্ষ থেকেই পারমাণবিক সংঘাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিবেশবিজ্ঞানী ও গবেষণায় অংশ নেওয়া অধ্যাপক ড. অ্যালান রোবোক বলেন, যদি দুই দেশের নেতৃত্বে যুক্তিবাদী ও সংযত মনোভাবসম্পন্ন সরকার থাকে, তাহলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। তবে নানা প্রেক্ষাপটে সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারে, যার নিয়ন্ত্রণ দুই দেশের হাত থেকেও ছুটে যেতে পারে।

গবেষণার সময় ড. রোবোক বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান ক্রমাগত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে— শুধু সংখ্যায় নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণ ক্ষমতাও বেড়েছে। এ কারণেই দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা আগের তুলনায় বেশি।

তিনি আরও বলেন, “এই যুদ্ধ আগামীকালও শুরু হতে পারে— ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই আমরা বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি এবং একটি বছর বেছে নিয়ে তা দেখিয়েছি।”

ড. রোবোক আরও সতর্ক করেন, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ কেবল এই দুটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না— বরং তা হয়ে উঠতে পারে বৈশ্বিক হুমকি। পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে বিশ্বজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়বে, উৎপন্ন হবে বিপুল পরিমাণ ধোঁয়া, যা সূর্যের আলোকে বাধা দেবে। এতে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে, কমবে তাপমাত্রা, এবং দীর্ঘস্থায়ী খরার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, বাড়বে অনাহার ও মৃত্যুর হার।

পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাইও সে সময় বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো যুদ্ধের মূল কারণ হবে কাশ্মির। কাশ্মিরের সমস্যার সমাধান ছাড়া পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি কমবে না।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জিও যুদ্ধের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে কাশ্মির ছাড়াও সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।

ছয় বছর আগের সেই গবেষণার প্রেক্ষিতে এখন প্রশ্ন উঠছে— সত্যিই কি ভারত ও পাকিস্তান আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে? পরমাণু অস্ত্রের ঝুঁকিতে কি গোটা পৃথিবী নতুন এক সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে? যত শঙ্কাই থাকুক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ-ই নিশ্চয় চায় না, এই দুই দেশ এমন এক ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক— যার ফল বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৬ বছর আগের গবেষণা— ২০২৫ এ যুদ্ধে জড়াবে ভারত-পাকিস্তান, মারা পড়বে ১২ কোটি মানুষ!

আপডেট সময় : ০৩:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শেখুপুড়া জেলার মুরিদকে শহরের একটি সরকারি স্থাপনা। ছবি: এএফপি

কাশ্মিরে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। অন্যদিকে ভারত জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মিরের পুঞ্চ-রাজৌরি অঞ্চলে পাকিস্তান কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করেছে।

এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই আবার আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক পুরোনো গবেষণা। ছয় বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৯ সালে রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছিল— ২০২৫ সালেই কাশ্মিরকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধতে পারে।

ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের এ সংঘাতে প্রাণ হারাতে পারে প্রায় ১২ কোটি মানুষ। শুধু তাই নয়, যুদ্ধ-পরবর্তী পরিবেশগত বিপর্যয়ে আরও এক কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

গবেষণায় সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, যদি ভারতীয় সংসদে এক আত্মঘাতী হামলায় সংসদ সদস্যরা নিহত হন, তাহলে ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এরপর দুই দেশ পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে। আরেকটি অনুমানে বলা হয়, কাশ্মিরে সংঘর্ষ থেকেই পারমাণবিক সংঘাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিবেশবিজ্ঞানী ও গবেষণায় অংশ নেওয়া অধ্যাপক ড. অ্যালান রোবোক বলেন, যদি দুই দেশের নেতৃত্বে যুক্তিবাদী ও সংযত মনোভাবসম্পন্ন সরকার থাকে, তাহলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। তবে নানা প্রেক্ষাপটে সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারে, যার নিয়ন্ত্রণ দুই দেশের হাত থেকেও ছুটে যেতে পারে।

গবেষণার সময় ড. রোবোক বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান ক্রমাগত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে— শুধু সংখ্যায় নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণ ক্ষমতাও বেড়েছে। এ কারণেই দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা আগের তুলনায় বেশি।

তিনি আরও বলেন, “এই যুদ্ধ আগামীকালও শুরু হতে পারে— ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই আমরা বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি এবং একটি বছর বেছে নিয়ে তা দেখিয়েছি।”

ড. রোবোক আরও সতর্ক করেন, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ কেবল এই দুটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না— বরং তা হয়ে উঠতে পারে বৈশ্বিক হুমকি। পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে বিশ্বজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়বে, উৎপন্ন হবে বিপুল পরিমাণ ধোঁয়া, যা সূর্যের আলোকে বাধা দেবে। এতে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে, কমবে তাপমাত্রা, এবং দীর্ঘস্থায়ী খরার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, বাড়বে অনাহার ও মৃত্যুর হার।

পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাইও সে সময় বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো যুদ্ধের মূল কারণ হবে কাশ্মির। কাশ্মিরের সমস্যার সমাধান ছাড়া পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি কমবে না।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জিও যুদ্ধের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে কাশ্মির ছাড়াও সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।

ছয় বছর আগের সেই গবেষণার প্রেক্ষিতে এখন প্রশ্ন উঠছে— সত্যিই কি ভারত ও পাকিস্তান আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে? পরমাণু অস্ত্রের ঝুঁকিতে কি গোটা পৃথিবী নতুন এক সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে? যত শঙ্কাই থাকুক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ-ই নিশ্চয় চায় না, এই দুই দেশ এমন এক ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক— যার ফল বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।