ঢাকা ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সিলেটি ফল ‘ডেফল’

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / 4357
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ডেফল (সিলেটের স্থানীয় নাম, পোশাকী নাম জানা নেই।) খুব জনপ্রিয় ফল হিসেবে সিলেটের সর্বত্র সমাদৃত। বাজারে ভরামৌসুমে ৩০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। ডেফল একপ্রকার সপুষ্পক বৃক্ষ। এটি ডাম্বেল, ডেমগোলা (চাকমা ভাষায়) এবং আরুয়াক (গারো ভাষায়) নামে পরিচিত। গাছটির আদি নিবাস মালয়েশিয়া। ডেফলের ইংরেজি নাম Yellow mangosteen/False mangosteen, বৈজ্ঞানিক নাম: Garcinia tinctoria/Garcinia xanthochymus, ফ্যামিলি: Clusiaceae।

ডেফল গাছ সাড়ে চার থেকে সাড়ে সাত মিটার লম্বা হয়ে থাকে।  ডেফলের পাতা পুরু, মসৃণ, উজ্জ্বল সবুজ, লম্বাটে বল্লমাকার ও আগা সূঁচালো আর খুব সুন্দর। ২০-২৪ সেমি লম্বা।

বৃষ্টিভেজা পাতায় রোদ পড়লে চিকচিক করে, দেখতে খুব ভালো লাগে। এর ফুল সাদা, ১৯ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। ফুল ফোটে মার্চ থেকে মে মাসে। ফল মাঝারি আকারের আপেলের সমান; ৮-১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফলটি মসৃণ, অগ্রভাগ সূঁচালো, এবং কিছুটা বাঁকানো; কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে গাঢ় হলুদ রঙের হয়। শীতকালে ফল পাকতে শুরু করে। এই ফলের শাঁস সুগন্ধযুক্ত ও রসালো। ভেতরে এক বা একাধিক বীজ থাকে। ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি। ডেফল গাছ অনেকটা গাব গাছের মতো, ঘন ডালপালা আর নিবিড়সন্নিবিষ্ট পাতায় অন্ধকার করে রাখে তার আশপাশ।

গ্রামের অনেক মানুষ মনে করে যে, ডেফল গাছে ভূত থাকে! সব মিলিয়ে ডেফল বৃক্ষ হিসেবে রূপসী তরুশ্রেণির দলে অনায়াসে নাম লেখাতে পারে। সিলেট ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলে ডেফল গাছ দেখা যায়। তবে বর্তমানে এর ব্যাপকতা লোপ পেয়েছে। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সহজেই এই গাছ জন্মানো সম্ভব।

 ভিটামিন সি-তে ভরপুর এ ফল স্বাদে টক। সাধারণত ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়। ছোট চিংড়ির সাথে ডেফল খুবই মুখরোচক খাবার হিসেবে পরিচিত। ফল টুকরো টুকরো করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায় (সিলেটিরা বলে ‘ফুটি’), আমসত্ত্বের মতো সত্ত্ব করেও রাখা যায় এবং তা বেশ মজাদার, ‘ডেফলসত্ত্ব’ দিয়েও তরকারি রান্না হয়, চায়ের মতো পানিতে সেদ্ধ দিয়ে সত্ত্বের নির্যাস পান করা হয় এবং তা সর্দি-কাশি উপসমে ভালো অবদান রাখে।

 ডেফল গাছে পার্পল-ম্যাঙ্গোস্টিনের (Garcinia mangostana) কলম দেয়া যায়। এভাবে একই গাছে ডেফল ও ম্যাঙ্গোস্টিন উভয় ফল উৎপাদন করা যায়। শুকনো ডেফল ফলের নির্যাসকে gamboge বলা হয় যা থেকে জলরং বানানো হয়। ডেফলের ভেষজ গুণও রয়েছে। ডেফল থেকে xanthone নামক রাসায়নিক পদার্থ সংগ্রহ করা হয় যার মধ্যে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টি-ম্যালেরিয়াল গুণ আছে বলে ধারনা করা হয়।ভেষজ চিকিৎসায় এর বিবিধ ব্যবহার রয়েছে।

 ডেফলের বীজ থেকে বংশবিস্তার হয়। এ বৃক্ষের প্রধান মূল মাটির অনেক গভীরে যায় বলে তা পানি জমে এমন নিম্নভূমিতে হয় না, টিলামাটিতে ভালো জন্মে। পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা যাবে কিন্তু ঐ চারা বড় হলে ঝড়-তুফানের হাত থেকে বাঁচানো খুবই মুশকিলের ব্যাপার। আর তাই, সরাসরি মাটিতে বীজ রোপনই উত্তম।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

খালেদ রাজ্জাক

খালেদ রাজ্জাক : কবি, শিক্ষক ও নিসর্গপ্রেমী
ট্যাগস :

সিলেটি ফল ‘ডেফল’

আপডেট সময় : ০৩:৫৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

ডেফল (সিলেটের স্থানীয় নাম, পোশাকী নাম জানা নেই।) খুব জনপ্রিয় ফল হিসেবে সিলেটের সর্বত্র সমাদৃত। বাজারে ভরামৌসুমে ৩০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। ডেফল একপ্রকার সপুষ্পক বৃক্ষ। এটি ডাম্বেল, ডেমগোলা (চাকমা ভাষায়) এবং আরুয়াক (গারো ভাষায়) নামে পরিচিত। গাছটির আদি নিবাস মালয়েশিয়া। ডেফলের ইংরেজি নাম Yellow mangosteen/False mangosteen, বৈজ্ঞানিক নাম: Garcinia tinctoria/Garcinia xanthochymus, ফ্যামিলি: Clusiaceae।

ডেফল গাছ সাড়ে চার থেকে সাড়ে সাত মিটার লম্বা হয়ে থাকে।  ডেফলের পাতা পুরু, মসৃণ, উজ্জ্বল সবুজ, লম্বাটে বল্লমাকার ও আগা সূঁচালো আর খুব সুন্দর। ২০-২৪ সেমি লম্বা।

বৃষ্টিভেজা পাতায় রোদ পড়লে চিকচিক করে, দেখতে খুব ভালো লাগে। এর ফুল সাদা, ১৯ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। ফুল ফোটে মার্চ থেকে মে মাসে। ফল মাঝারি আকারের আপেলের সমান; ৮-১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফলটি মসৃণ, অগ্রভাগ সূঁচালো, এবং কিছুটা বাঁকানো; কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে গাঢ় হলুদ রঙের হয়। শীতকালে ফল পাকতে শুরু করে। এই ফলের শাঁস সুগন্ধযুক্ত ও রসালো। ভেতরে এক বা একাধিক বীজ থাকে। ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি। ডেফল গাছ অনেকটা গাব গাছের মতো, ঘন ডালপালা আর নিবিড়সন্নিবিষ্ট পাতায় অন্ধকার করে রাখে তার আশপাশ।

গ্রামের অনেক মানুষ মনে করে যে, ডেফল গাছে ভূত থাকে! সব মিলিয়ে ডেফল বৃক্ষ হিসেবে রূপসী তরুশ্রেণির দলে অনায়াসে নাম লেখাতে পারে। সিলেট ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলে ডেফল গাছ দেখা যায়। তবে বর্তমানে এর ব্যাপকতা লোপ পেয়েছে। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সহজেই এই গাছ জন্মানো সম্ভব।

 ভিটামিন সি-তে ভরপুর এ ফল স্বাদে টক। সাধারণত ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়। ছোট চিংড়ির সাথে ডেফল খুবই মুখরোচক খাবার হিসেবে পরিচিত। ফল টুকরো টুকরো করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায় (সিলেটিরা বলে ‘ফুটি’), আমসত্ত্বের মতো সত্ত্ব করেও রাখা যায় এবং তা বেশ মজাদার, ‘ডেফলসত্ত্ব’ দিয়েও তরকারি রান্না হয়, চায়ের মতো পানিতে সেদ্ধ দিয়ে সত্ত্বের নির্যাস পান করা হয় এবং তা সর্দি-কাশি উপসমে ভালো অবদান রাখে।

 ডেফল গাছে পার্পল-ম্যাঙ্গোস্টিনের (Garcinia mangostana) কলম দেয়া যায়। এভাবে একই গাছে ডেফল ও ম্যাঙ্গোস্টিন উভয় ফল উৎপাদন করা যায়। শুকনো ডেফল ফলের নির্যাসকে gamboge বলা হয় যা থেকে জলরং বানানো হয়। ডেফলের ভেষজ গুণও রয়েছে। ডেফল থেকে xanthone নামক রাসায়নিক পদার্থ সংগ্রহ করা হয় যার মধ্যে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টি-ম্যালেরিয়াল গুণ আছে বলে ধারনা করা হয়।ভেষজ চিকিৎসায় এর বিবিধ ব্যবহার রয়েছে।

 ডেফলের বীজ থেকে বংশবিস্তার হয়। এ বৃক্ষের প্রধান মূল মাটির অনেক গভীরে যায় বলে তা পানি জমে এমন নিম্নভূমিতে হয় না, টিলামাটিতে ভালো জন্মে। পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা যাবে কিন্তু ঐ চারা বড় হলে ঝড়-তুফানের হাত থেকে বাঁচানো খুবই মুশকিলের ব্যাপার। আর তাই, সরাসরি মাটিতে বীজ রোপনই উত্তম।