শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে জীবন দেওয়া দুই শিক্ষিকা অবশেষে পাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান
- আপডেট সময় : ০২:০৮:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / 207

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে আত্মত্যাগকারী দুই শিক্ষককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পাশাপাশি আহতদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের শুরুতে দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহেরিন চৌধুরী ও মাসুকা বেগমকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই সম্মাননার বিস্তারিত দিকগুলো পরে নির্ধারণ করা হবে।
শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে আত্মদান
গত সোমবার যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর সৃষ্ট আগুনে যখন শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন, তখন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসেন মাহেরিন চৌধুরী ও মাসুকা বেগম।
শিক্ষক মাহেরিন চৌধুরী প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারলেও নিজে আগুনে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। তার শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সোমবার রাতেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার নীলফামারীর জলঢাকায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
অপর শিক্ষক মাসুকা বেগমও ক্লাস চলাকালীন বিমান বিধ্বস্তের পর অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকেও বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় এবং সেখানেই তিনি মারা যান। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তাদের প্রতি বিশেষ সম্মানের কোনো ব্যবস্থা না করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোনা হয়।
সরকারের সহায়তা ও বিশেষ প্রার্থনার সিদ্ধান্ত
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসাসেবায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।
নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে শুক্রবার দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের কাজ করবে।
গত সোমবার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। সরকারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শতাধিক আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


















