লতিফ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক কার্জনসহ ১৪ জন কারাগারে, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা
- আপডেট সময় : ১২:৪৩:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
- / 247
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে হেফাজতে নিয়ে গ্রেপ্তার রাজনীতিবিদ লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম পান্না
মব সৃষ্টি করে ‘মঞ্চ ৭১’ সংগঠন আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেওয়ার পর সেখান থেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম পান্নাসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সারা দিন ডিবি কার্যালয়ে আটক রাখার পর রাতে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করার কথা জানানো হয়েছে।
এই ১৪ জনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে শাহবাগ থানায় মামলা করার তথ্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। রাতে অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করছি। এদের মধ্যে নয়জন শাহবাগ থানায় রয়েছেন। তাদের মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট ২০২৫) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘মঞ্চ ৭১’ নামের প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের। আর সভাপতিত্ব করার কথা ছিল অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার। সভার শুরুতে তারা উপস্থিত ছিলেন না। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।’
শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরেই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ে যোদ্ধারা এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। তারা অনুষ্ঠানে আসা শ্রোতাদের বের করে দেয়। অতিথিদেরও বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের গায়েও ধাক্কা দেয়। একজনকে ফেলে রক্তাক্ত করা হয়। অতিথিদের মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে আক্রমনের মুখে অতিথিরা চলে গেলেও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী মঞ্চে বসেই থাকেন।
এক পর্যায়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বহিরাগতরা।
মব সৃষ্টিকারীরা নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন কর্মীকে মারমুখি অবস্থায় দেখা গেছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন স্থানীয় যুবদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরাও যোগ দেন।
এ সময় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি জানতাম না এখানে সমস্যা হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েই এসেছিলাম।’
একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া বারোটার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল আসলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্তত ১৫ জনকে তুলে দেন।
ডিআরইউ প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করেনি কিংবা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম হোসাইন বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী একাত্তর ও চব্বিশকে মুখোমুখি করে চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, একাত্তর আমাদের ভিত্তি এবং চব্বিশ আমাদের মুক্তি। এখানে যাঁরা জড়ো হয়েছেন, তারা সবাই চব্বিশের খুনের সঙ্গে জড়িত। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। আমরা আইন হাতে তুলে না নিয়ে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করেছি।’
আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক একুশে পদকপ্রাপ্ত সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, মঞ্চ ৭১-এর সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।
ডিআরইউ’ নিন্দা ও প্রতিবাদ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) একটি গোলটেবিল বৈঠকে বৃহস্পতিবার কতিপয় বহিরাগতদের হামলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃস্টি হয়। একদল ব্যক্তি নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় তাদেরকে নিবৃত্ত করতে গেলে ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মান্নান মারুফ, সদস্য আসিফ শওকত কল্লোল, সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদসহ কয়েকজনকে নাজেহাল করা হয়।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে অনুষ্ঠান করার বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
এই অনুষ্ঠানটি ঘিরে কতিপয় লোক গতকালই (বুধবার) ফেসবুকে হুমকী দিয়ে প্রচারণা চালায়। এর প্রেক্ষিতে শাহবাগ থানাকে অবহিত করার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডিআরইউ প্রাঙ্গনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত হওয়ায় হঠাৎ করেই একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করে মব সৃস্টির চেস্টা করে। ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এরপর পুলিশকে অবহিত করার পর তারা এসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ডিআরইউতে অনুষ্ঠান চলাকালে এ ধরনের ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয়। আইনশৃঙ্খলাবাহীনিকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের সময়েও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সকলের কথা বলার সুযোগ ছিল। গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের বাধার মুখেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া নাহিদ, সারজিস ও হাসনাতরা এখানে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডিআরইউতে দল-মত-পথ নির্বিশেষে সবার কথা বলার সুযোগ ছিল। কখনও ডিআরইউতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কারো হস্তক্ষেপ ছিল না। তাই আগামী দিনে কেউ এর ব্যতয় ঘটালে ডিআরইউ তা প্রতিহত করবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

















