ঢাকা ০৮:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে বহু বাংলাদেশি নিখোঁজ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৪১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • / 107

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেওয়া কয়েকজন বাংলাদেশি

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ময়মনসিংহের হাসান (ছদ্মনাম) গত বছরের ১০ আগস্ট একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় কাজের লক্ষ্যে গিয়েছিলেন। এজেন্সি তাকে ওয়েল্ডিংয়ের কাজের কথা বলেছিল। কিন্তু রাশিয়া পৌঁছানোর পর পরিবার জানতে পারে—সে সেখানে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। হাসান নিজে রাশিয়া থেকে অ্যাপের মাধ্যমে গোপনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার খবর জানায়। তার পরিবার এখন ভয়ে দিন পার করছে। প্রাণহানির আশঙ্কার কারণে তার বড় ভাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ হিসেবে চিঠি দিয়েছেন।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সাদ্দিফ অভি

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, হাসানের মতো সমস্যা নিয়ে অনেক পরিবারের কাছ থেকেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ১০ জনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছে। তবে অনেকেরই পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই—তাই নিখোঁজদের প্রকৃত সংখ্যা শতাধিকও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুদ্ধে জড়ানো বা নিখোঁজ বাংলাদেশিদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।

বৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে গিয়ে যুদ্ধে জড়াচ্ছে অনেকে
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যায় লাখো শ্রমিক। রাশিয়া ও এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও কাজের প্রলোভন মিলছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইউক্রেনে কাজের অনুমতি দেয়া হয়নি। ইউক্রেনের দায়িত্বে থাকা পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসও এ ধরনের নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিছু বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি যদিও বিএমইটি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, দুর্তাবাস তাদের নিরুৎসাহিত করেছে। তবু পরিসংখ্যান বলছে—বিএমইটি প্রতিমাসেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য ক্লিয়ারেন্স দেয়; রাশিয়ার ক্ষেত্রে মাসে শতাধিক ক্লিয়ারেন্স এবং ইউক্রেনের ক্ষেত্রে ২–৩টি মেলে।

হাসানের মতো আরেকজন, কবির (ছদ্মনাম), ট্রাভেল এজেন্সি ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড কোঅপারেটিভ রিক্রুটমেন্টের মাধ্যমে বৈধভাবে রাশিয়ায় গেছেন। তাকে বলেছিল ওয়েল্ডিংয়ের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু কবিরও রাশিয়ায় গিয়ে এখন যুদ্ধে জড়িয়েছেন। তার পরিবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরে আনার অনুরোধ জানিয়েছে। এ পর্যন্ত উভয়েই রাশিয়ায় রয়েছেন।

পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে—তারা এত মাস অপেক্ষার পর আশা হারিয়ে ফেলেছেন। হাসানের বড় ভাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘সে কল দেয়, আমাদের খোঁজ খবর নেয়। আমরা অনেক জায়গায় তাকে ফেরত আনার জন্য ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি তাকে ফেরত পাওয়ার। আমাদের ধারণা, সে আর ফিরে আসতে পারবে না। প্রতিদিন এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে আমরা দিন পার করছি।’’

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকরির প্রলোভনে প্রেরিতদের জোরপূর্বক যুদ্ধে ঢোকানো হচ্ছে—এটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। প্রথমদিকে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মতো হলেও এখন তা একটি সংগঠিত প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে। এসব ভুক্তভোগীরা—যাদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুবরণ করতে পারে—তেল, নির্মাণ ও লজিস্টিকস ইত্যাদি খাতে কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বৈধ ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। পাচারকারী নেটওয়ার্ক স্থানীয় দালাল ও কাগজপত্র ব্যবহার করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধান চলছে; তবে এই ঘটনার তীব্র মনোযোগ চাইছে সরকারি কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবিক অংশীদারদের দিক থেকে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘গত বছরের শেষের দিক থেকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম একই ধরনের পাচারের বর্ণনাসহ পরিবারগুলোর কাছ থেকে বেশ কিছু আবেদন পেয়েছে। বৈধ ভিসা, বৈধ ভ্রমণ এবং বেআইনি জবরদস্তি—এগুলো তাদের ভাষ্যে সবার ক্ষেত্রে একই। অন্তত ১০টি পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিখোঁজ আত্মীয়দের কথা জানিয়েছে, যারা রাশিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই নিখোঁজ হয়েছিলেন।’’

এখন পর্যন্ত কিছু মৃত্যুর খবরও মিলেছে
সামাজিক মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিয়ে নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে; অনেকেই সেখানে যাওয়ার পদ্ধতিও শিখিয়ে দিচ্ছেন। তেমনি অনেকেই এতে জড়িয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুও ঘটেছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা থেকে যুবক ইয়াসিন মিয়া শেখ (২২) রুশ সেনাবাহিনীর চুক্তিভিত্তিক সদস্য হিসেবে ইউক্রেনে যুদ্ধে গিয়ে মিসাইল আঘাতে মারা গেছেন; তার মৃত্যুর খবর পরিবার গত এপ্রিলে পেয়েছে।

রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম (৪৭)। সাত মাস নিখোঁজ থাকার পর ৮ অক্টোবর তার মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫)ও রাশিয়ায় চাকরির নাম করে সেনাবাহিনীতে পাঠিয়ে যুদ্ধে অংশ করানোর পরে প্রাণ হারিয়েছেন; তার মৃতুবার্তা এ বছরের ১৯ এপ্রিল পৌঁছায়। পরিবারের সদস্যরা বলেন—সবাই উন্নত জীবনের আশায় চাকরির প্রলোভনে এই পথে গেছেন, সেখানে পৌঁছে জোর করে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় অনেকেরই
বাগেরহাটের অয়ন মন্ডল বৈধ ভিসা নিয়ে রাশিয়ায় গেছেন; তার পরিবার জানায়, তিনি শেষ বার জানিয়েছেন—ইউক্রেনীয় সীমান্তের দিকে সরানো হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন, কিন্তু তার লাশ ধরা পড়েনি। কুমিল্লার অমিত বড়ুয়া রাশিয়ায় সিনোপেক নামের এক কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০২৪ সালের অক্টোবর। চাকরিতে যোগের দেড় মাস পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভিডিও কলে তিনি বলতেন—রাশিয়ানরা তাকে ভাষা শেখাচ্ছে, কাজ চলছিল। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল অমিত ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়; পাঁচ দিন পর ৪ মে এক বাংলাদেশি সহকর্মী ফোন করে অমিতের বড় ভাই সুমিত বড়ুয়াকে জানায়—রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অমিত নিহত হয়েছেন। এরপর থেকে পরিবারের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াদের আটটি পরিবার আরও ব্র্যাকের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে রাশিয়ায় গেছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যাওয়ার পর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং হুমকি দেখিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাগজে স্বাক্ষর করানো হয়।

পরিবারে জানিয়েছেন—হাজার হাজার টাকা দিয়ে, সাধারণত ৭–৮ লাখ টাকা খরচ করে কাউকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। পরে জোর করে একটি কাগজে সই করানো হয়; সেই কাগজ রুশ ভাষায় হওয়ায় কেউ বুঝতে পারেননি কিসের জন্য সই করছেন। যারা সই করতে অস্বীকার করেছেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করা হয়েছে বলে পরিবারগুলো দাবি করেছে।

সামাজিক মাধ্যমেও যুদ্ধে যাওয়ার প্রচারণা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অনেকে ফেসবুকে ভিডিও দিচ্ছেন; এসব ভিডিও বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি, কিভাবে কবে কোথায় যাওয়া যায়, ড্রোন-ট্যাংকের তথ্য দেখা যায়। কিছু ভিডিওতে রাশিয়ান সৈন্যদের সঙ্গে দেখা যায়; কেউ স্নাইপার রাইফেলের সঙ্গে উপস্থিত থেকে বলছেন—আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, এখন রাশিয়ার আর্মিতে যোগ দিয়েছি—এবং রাশিয়ার বিপ্লবের স্লোগানও শোনা যায়। তাদের মধ্যে কারো কারো ভিডিওতে তাদের কমান্ডারের সঙ্গেও পরিচয় করানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে, এসবের কিছু অংশ মধ্যস্বত্বভোগী এবং প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রয়েছে।

ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করতেও অনেকে যাচ্ছেন
শুধু রাশিয়ার জন্য নয়—কিছু বাংলাদেশি ইউক্রেনের পক্ষেও যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে। ওই দিকের কিছু ভিডিও বার্তায় দেখা গেছে, যারা ইউক্রেনের পক্ষ নেবেন তাদের জন্য সতর্কবার্তা আছে—তারা বলছেন, এখানে এসে মরার জন্য এসো না; দেশবাসীকে অনুরোধ করছেন, কেউ যেন ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে না যায়। তারা বলছেন, এখানে গেলে মৃত্যুই নিশ্চিত। আমাদের দেশের অনেক ভাই রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে; আমরা চাই না তাঁদের দেশে ফিরে সন্ত্রস্ত অবস্থা দেখা দেয়।

ব্র্যাক কর্মকর্তা শরিফুল হাসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় মানবপাচার হয় কয়েক ধাপে। প্রথমে স্থানীয় দালাল বা অন্য কোনও মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোক বাছাই করে। চাকরির ক্ষেত্র হিসেবে কখনও বড় নির্মাণ কোম্পানির নাম বলা হয়। পরে ভিসা ও ট্রানজিট সম্পর্কিত কাগজপত্র তৈরি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর রাশিয়া পৌঁছানোর পর দু-এক মাসের মধ্যেই যুদ্ধে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে চক্রটি।’’

তিনি যোগ করেন, ‘‘এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। প্রশাসনকে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করতে হবে। বিগত ঘটনার পর যারা আটক রয়েছেন বা তাদের পরিবারের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে কর্মীদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।’’

সিআইডি তদন্ত করছে
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রাশিয়া-ইউক্রেন মানবপাচার নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। গত জুনে রাশিয়ায় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের তদন্তে গ্রেফতারকৃত মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে মানবপাচার ‘চক্রের হোতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিআইডি বলছে, তিনি প্রায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে; এর মধ্যে অন্তত ১১ জনকে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

তদন্তে আরও জানা গেছে—অনেকে বৈধ সরকারি ক্লিয়ারেন্স (বিএমইটি কার্ড) নিয়ে পাঠানো হয়েছে, আবার কিছু পাঠানো হয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসায়; ট্যুরিস্ট ভিসায় যাদের পাঠানো হয়েছে, তাদেরই আটকে রেখে যুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে।

সিআইডির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘চক্রটির সদস্যরা মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার কিংবা বাবুর্চির কাজের কথা বলে প্রথমে ১০ জনকে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে ওমরাহ করার পর রাশিয়ায় ‘সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন’। সুলতান তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সৈন্যদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয় যুদ্ধে। আর যুদ্ধে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।’’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলছে
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশে যায়। কেউ যদি কোনও দেশে যায়, আর সে যদি লোভে পড়ে বা অন্য কোনও কারণে কোনও দেশে গিয়ে যুদ্ধে জড়ায়, তা ঠেকানো আমাদের পক্ষে কঠিন। আমরা শুধু দেখবো, জোর করে কাউকে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে কিনা। তবে আমরা সেরকম কিছু পাইনি এখনও। কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তার লাভের জন্য যুদ্ধে চলে যায়, আমরা অবশ্যই সেটা নিরুৎসাহিত করবো।’’

নিউজটি শেয়ার করুন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে বহু বাংলাদেশি নিখোঁজ

আপডেট সময় : ১২:৪১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহের হাসান (ছদ্মনাম) গত বছরের ১০ আগস্ট একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় কাজের লক্ষ্যে গিয়েছিলেন। এজেন্সি তাকে ওয়েল্ডিংয়ের কাজের কথা বলেছিল। কিন্তু রাশিয়া পৌঁছানোর পর পরিবার জানতে পারে—সে সেখানে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। হাসান নিজে রাশিয়া থেকে অ্যাপের মাধ্যমে গোপনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার খবর জানায়। তার পরিবার এখন ভয়ে দিন পার করছে। প্রাণহানির আশঙ্কার কারণে তার বড় ভাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ হিসেবে চিঠি দিয়েছেন।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সাদ্দিফ অভি

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, হাসানের মতো সমস্যা নিয়ে অনেক পরিবারের কাছ থেকেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ১০ জনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছে। তবে অনেকেরই পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই—তাই নিখোঁজদের প্রকৃত সংখ্যা শতাধিকও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুদ্ধে জড়ানো বা নিখোঁজ বাংলাদেশিদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।

বৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে গিয়ে যুদ্ধে জড়াচ্ছে অনেকে
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যায় লাখো শ্রমিক। রাশিয়া ও এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও কাজের প্রলোভন মিলছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইউক্রেনে কাজের অনুমতি দেয়া হয়নি। ইউক্রেনের দায়িত্বে থাকা পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসও এ ধরনের নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিছু বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি যদিও বিএমইটি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, দুর্তাবাস তাদের নিরুৎসাহিত করেছে। তবু পরিসংখ্যান বলছে—বিএমইটি প্রতিমাসেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য ক্লিয়ারেন্স দেয়; রাশিয়ার ক্ষেত্রে মাসে শতাধিক ক্লিয়ারেন্স এবং ইউক্রেনের ক্ষেত্রে ২–৩টি মেলে।

হাসানের মতো আরেকজন, কবির (ছদ্মনাম), ট্রাভেল এজেন্সি ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড কোঅপারেটিভ রিক্রুটমেন্টের মাধ্যমে বৈধভাবে রাশিয়ায় গেছেন। তাকে বলেছিল ওয়েল্ডিংয়ের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু কবিরও রাশিয়ায় গিয়ে এখন যুদ্ধে জড়িয়েছেন। তার পরিবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরে আনার অনুরোধ জানিয়েছে। এ পর্যন্ত উভয়েই রাশিয়ায় রয়েছেন।

পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে—তারা এত মাস অপেক্ষার পর আশা হারিয়ে ফেলেছেন। হাসানের বড় ভাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘সে কল দেয়, আমাদের খোঁজ খবর নেয়। আমরা অনেক জায়গায় তাকে ফেরত আনার জন্য ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি তাকে ফেরত পাওয়ার। আমাদের ধারণা, সে আর ফিরে আসতে পারবে না। প্রতিদিন এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে আমরা দিন পার করছি।’’

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকরির প্রলোভনে প্রেরিতদের জোরপূর্বক যুদ্ধে ঢোকানো হচ্ছে—এটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। প্রথমদিকে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মতো হলেও এখন তা একটি সংগঠিত প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে। এসব ভুক্তভোগীরা—যাদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুবরণ করতে পারে—তেল, নির্মাণ ও লজিস্টিকস ইত্যাদি খাতে কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বৈধ ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। পাচারকারী নেটওয়ার্ক স্থানীয় দালাল ও কাগজপত্র ব্যবহার করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধান চলছে; তবে এই ঘটনার তীব্র মনোযোগ চাইছে সরকারি কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবিক অংশীদারদের দিক থেকে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘গত বছরের শেষের দিক থেকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম একই ধরনের পাচারের বর্ণনাসহ পরিবারগুলোর কাছ থেকে বেশ কিছু আবেদন পেয়েছে। বৈধ ভিসা, বৈধ ভ্রমণ এবং বেআইনি জবরদস্তি—এগুলো তাদের ভাষ্যে সবার ক্ষেত্রে একই। অন্তত ১০টি পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিখোঁজ আত্মীয়দের কথা জানিয়েছে, যারা রাশিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই নিখোঁজ হয়েছিলেন।’’

এখন পর্যন্ত কিছু মৃত্যুর খবরও মিলেছে
সামাজিক মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিয়ে নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে; অনেকেই সেখানে যাওয়ার পদ্ধতিও শিখিয়ে দিচ্ছেন। তেমনি অনেকেই এতে জড়িয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুও ঘটেছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা থেকে যুবক ইয়াসিন মিয়া শেখ (২২) রুশ সেনাবাহিনীর চুক্তিভিত্তিক সদস্য হিসেবে ইউক্রেনে যুদ্ধে গিয়ে মিসাইল আঘাতে মারা গেছেন; তার মৃত্যুর খবর পরিবার গত এপ্রিলে পেয়েছে।

রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম (৪৭)। সাত মাস নিখোঁজ থাকার পর ৮ অক্টোবর তার মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫)ও রাশিয়ায় চাকরির নাম করে সেনাবাহিনীতে পাঠিয়ে যুদ্ধে অংশ করানোর পরে প্রাণ হারিয়েছেন; তার মৃতুবার্তা এ বছরের ১৯ এপ্রিল পৌঁছায়। পরিবারের সদস্যরা বলেন—সবাই উন্নত জীবনের আশায় চাকরির প্রলোভনে এই পথে গেছেন, সেখানে পৌঁছে জোর করে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় অনেকেরই
বাগেরহাটের অয়ন মন্ডল বৈধ ভিসা নিয়ে রাশিয়ায় গেছেন; তার পরিবার জানায়, তিনি শেষ বার জানিয়েছেন—ইউক্রেনীয় সীমান্তের দিকে সরানো হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন, কিন্তু তার লাশ ধরা পড়েনি। কুমিল্লার অমিত বড়ুয়া রাশিয়ায় সিনোপেক নামের এক কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০২৪ সালের অক্টোবর। চাকরিতে যোগের দেড় মাস পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভিডিও কলে তিনি বলতেন—রাশিয়ানরা তাকে ভাষা শেখাচ্ছে, কাজ চলছিল। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল অমিত ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়; পাঁচ দিন পর ৪ মে এক বাংলাদেশি সহকর্মী ফোন করে অমিতের বড় ভাই সুমিত বড়ুয়াকে জানায়—রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অমিত নিহত হয়েছেন। এরপর থেকে পরিবারের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াদের আটটি পরিবার আরও ব্র্যাকের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে রাশিয়ায় গেছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যাওয়ার পর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং হুমকি দেখিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাগজে স্বাক্ষর করানো হয়।

পরিবারে জানিয়েছেন—হাজার হাজার টাকা দিয়ে, সাধারণত ৭–৮ লাখ টাকা খরচ করে কাউকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। পরে জোর করে একটি কাগজে সই করানো হয়; সেই কাগজ রুশ ভাষায় হওয়ায় কেউ বুঝতে পারেননি কিসের জন্য সই করছেন। যারা সই করতে অস্বীকার করেছেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করা হয়েছে বলে পরিবারগুলো দাবি করেছে।

সামাজিক মাধ্যমেও যুদ্ধে যাওয়ার প্রচারণা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অনেকে ফেসবুকে ভিডিও দিচ্ছেন; এসব ভিডিও বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি, কিভাবে কবে কোথায় যাওয়া যায়, ড্রোন-ট্যাংকের তথ্য দেখা যায়। কিছু ভিডিওতে রাশিয়ান সৈন্যদের সঙ্গে দেখা যায়; কেউ স্নাইপার রাইফেলের সঙ্গে উপস্থিত থেকে বলছেন—আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, এখন রাশিয়ার আর্মিতে যোগ দিয়েছি—এবং রাশিয়ার বিপ্লবের স্লোগানও শোনা যায়। তাদের মধ্যে কারো কারো ভিডিওতে তাদের কমান্ডারের সঙ্গেও পরিচয় করানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে, এসবের কিছু অংশ মধ্যস্বত্বভোগী এবং প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রয়েছে।

ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করতেও অনেকে যাচ্ছেন
শুধু রাশিয়ার জন্য নয়—কিছু বাংলাদেশি ইউক্রেনের পক্ষেও যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে। ওই দিকের কিছু ভিডিও বার্তায় দেখা গেছে, যারা ইউক্রেনের পক্ষ নেবেন তাদের জন্য সতর্কবার্তা আছে—তারা বলছেন, এখানে এসে মরার জন্য এসো না; দেশবাসীকে অনুরোধ করছেন, কেউ যেন ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে না যায়। তারা বলছেন, এখানে গেলে মৃত্যুই নিশ্চিত। আমাদের দেশের অনেক ভাই রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে; আমরা চাই না তাঁদের দেশে ফিরে সন্ত্রস্ত অবস্থা দেখা দেয়।

ব্র্যাক কর্মকর্তা শরিফুল হাসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় মানবপাচার হয় কয়েক ধাপে। প্রথমে স্থানীয় দালাল বা অন্য কোনও মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোক বাছাই করে। চাকরির ক্ষেত্র হিসেবে কখনও বড় নির্মাণ কোম্পানির নাম বলা হয়। পরে ভিসা ও ট্রানজিট সম্পর্কিত কাগজপত্র তৈরি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর রাশিয়া পৌঁছানোর পর দু-এক মাসের মধ্যেই যুদ্ধে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে চক্রটি।’’

তিনি যোগ করেন, ‘‘এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। প্রশাসনকে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করতে হবে। বিগত ঘটনার পর যারা আটক রয়েছেন বা তাদের পরিবারের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে কর্মীদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।’’

সিআইডি তদন্ত করছে
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রাশিয়া-ইউক্রেন মানবপাচার নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। গত জুনে রাশিয়ায় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের তদন্তে গ্রেফতারকৃত মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে মানবপাচার ‘চক্রের হোতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিআইডি বলছে, তিনি প্রায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে; এর মধ্যে অন্তত ১১ জনকে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

তদন্তে আরও জানা গেছে—অনেকে বৈধ সরকারি ক্লিয়ারেন্স (বিএমইটি কার্ড) নিয়ে পাঠানো হয়েছে, আবার কিছু পাঠানো হয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসায়; ট্যুরিস্ট ভিসায় যাদের পাঠানো হয়েছে, তাদেরই আটকে রেখে যুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে।

সিআইডির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘চক্রটির সদস্যরা মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার কিংবা বাবুর্চির কাজের কথা বলে প্রথমে ১০ জনকে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে ওমরাহ করার পর রাশিয়ায় ‘সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন’। সুলতান তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সৈন্যদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয় যুদ্ধে। আর যুদ্ধে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।’’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলছে
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশে যায়। কেউ যদি কোনও দেশে যায়, আর সে যদি লোভে পড়ে বা অন্য কোনও কারণে কোনও দেশে গিয়ে যুদ্ধে জড়ায়, তা ঠেকানো আমাদের পক্ষে কঠিন। আমরা শুধু দেখবো, জোর করে কাউকে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে কিনা। তবে আমরা সেরকম কিছু পাইনি এখনও। কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তার লাভের জন্য যুদ্ধে চলে যায়, আমরা অবশ্যই সেটা নিরুৎসাহিত করবো।’’