ঢাকা ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা, অস্থিরতা কি কাটবে? ভারতীয় আধিপত্যবাদই সংকটের কারণ, জানালেন ইউনূস

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
  • / 242
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিরতা নিরসনে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আলোচনায় বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়টি। যদিও সবাই ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন, তবে নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন মত। কেউ ডিসেম্বর, কেউ ফেব্রুয়ারি আবার কেউ এপ্রিলে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “কোনোভাবেই নির্বাচন ৩০ জুনের পরে হবে না।”

রবিবার (২৫ মে ২০২৫) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই দফায় মোট ২০ জন রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস। আলোচনায় নির্বাচনের রূপরেখা ও সংস্কার নিয়ে মতবিনিময় হয়। রাজনৈতিক ঐক্যের প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ছিল ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের চাপে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার তিন দিন পর, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ইউনূস।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ও এনসিপি কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে রাজনৈতিক চাপ বাড়ায়। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ পায়। এরপরই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে রাজনীতি অস্থির হয়ে ওঠে।

এই পটভূমিতে শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস, যেখানেও ঘুরেফিরে আসে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্ন।

ভারতীয় আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ

বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের কারণে দেশ গভীর সংকটে রয়েছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করলে সেই সংকট আরও বাড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “উনি বলেছেন, ভারত আমাদের এই পরিবর্তন মেনে নিতে চায় না এবং আমাদের ধ্বংস করতে চায়। এজন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

মান্না জানান, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, কম সংস্কার হলে ডিসেম্বর, বেশি হলে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনে পদত্যাগপত্রে লিখে দিতে চান, নির্বাচন ৩০ জুনের পরে কোনোভাবেই যাবে না।

তিনি আরও জানান, ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এবং পদত্যাগচেষ্টার কথা ব্যাখ্যা করেছেন। অন্য উপদেষ্টারা তাঁকে নিবৃত্ত করেছেন বলেও জানান।

বৈঠকে দলগুলোর প্রস্তাব

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “প্রশাসনিক কাঠামো এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়, তাই নির্বাচন ঘোষণা এখনই সম্ভব নয়। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হলে তা সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হবে।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, “চলমান বিচার দ্রুত দৃশ্যমান করতে হবে। যেসব সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলো এখনই করা হোক। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে।”

জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন। তবে আমরা বলেছি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত।”

ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, “আমরা বলেছি, আপনার কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। এজন্য প্রশাসনকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করাতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, “সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকায় রাজনৈতিক দল ও বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তিনি (ইউনূস) বারবার বলেছেন, ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, একদিনও বাইরে যাবে না।

ইসলামি দলগুলোর অবস্থান

জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, “আমরা তাকে বলেছি, জাতি আপনাকে অনেক আশা নিয়ে এনেছে। আপনি ধৈর্য হারাবেন না, আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।”

ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রভাব ফেলবে। আমরা বলেছি, স্থানীয় নির্বাচনেও যেন কালো টাকার প্রভাব না থাকে।”

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি ৩০ জুন ২০২৬ এর পরে এক ঘণ্টাও ক্ষমতায় থাকবেন না।

রাখাইন করিডোর ইস্যু

গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর বলেন, “আমরা করিডোর ইস্যুতে সরকারের বর্তমান সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।”

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা সবকিছু পারব এমন ধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।”

মামুনুল হক আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন, দেশবিরোধী কোনো কার্যক্রম তাঁর দ্বারা সংঘটিত হবে না। করিডোর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

সরকার ও ইউনূসের অবস্থান

বিভিন্ন পক্ষ থেকে ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, মার্চ এমনকি জুনের প্রস্তাব আসলেও সরকার জানিয়েছে, ৩০ জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জোর দাবি জানায়। এনসিপি দাবি তুলেছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচন বাতিলের।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “সব দলই স্যারকে সমর্থন জানিয়েছে। সবাই সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কার্যক্রমে সরকারের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “স্যার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এটি নিয়ে কেউ সন্দেহ করবেন না। তিনি এক কথার মানুষ। যখন সময় হবে, রোডম্যাপ ও সময়সূচি ঘোষণা করবেন।”

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আমরা বড় ধরনের একটি রাজনৈতিক যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তারা দেশ অস্থিতিশীল করার নানা চেষ্টা করছে। এর থেকে মুক্তির জন্য ঐক্যমতের প্রয়োজন।”

বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যান্য নেতা

প্রথম দফার বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমেদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, বাসদের সাবেক আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া ও জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

দ্বিতীয় দফায় অংশ নেন ইসলামি বক্তা সাদিকুর রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, হেফাজতে ইসলামের আজিজুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা, অস্থিরতা কি কাটবে? ভারতীয় আধিপত্যবাদই সংকটের কারণ, জানালেন ইউনূস

আপডেট সময় : ০২:৩৬:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিরতা নিরসনে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আলোচনায় বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়টি। যদিও সবাই ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন, তবে নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন মত। কেউ ডিসেম্বর, কেউ ফেব্রুয়ারি আবার কেউ এপ্রিলে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “কোনোভাবেই নির্বাচন ৩০ জুনের পরে হবে না।”

রবিবার (২৫ মে ২০২৫) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই দফায় মোট ২০ জন রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস। আলোচনায় নির্বাচনের রূপরেখা ও সংস্কার নিয়ে মতবিনিময় হয়। রাজনৈতিক ঐক্যের প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ছিল ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের চাপে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার তিন দিন পর, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ইউনূস।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ও এনসিপি কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে রাজনৈতিক চাপ বাড়ায়। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ পায়। এরপরই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে রাজনীতি অস্থির হয়ে ওঠে।

এই পটভূমিতে শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস, যেখানেও ঘুরেফিরে আসে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্ন।

ভারতীয় আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ

বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের কারণে দেশ গভীর সংকটে রয়েছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করলে সেই সংকট আরও বাড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “উনি বলেছেন, ভারত আমাদের এই পরিবর্তন মেনে নিতে চায় না এবং আমাদের ধ্বংস করতে চায়। এজন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

মান্না জানান, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, কম সংস্কার হলে ডিসেম্বর, বেশি হলে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনে পদত্যাগপত্রে লিখে দিতে চান, নির্বাচন ৩০ জুনের পরে কোনোভাবেই যাবে না।

তিনি আরও জানান, ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এবং পদত্যাগচেষ্টার কথা ব্যাখ্যা করেছেন। অন্য উপদেষ্টারা তাঁকে নিবৃত্ত করেছেন বলেও জানান।

বৈঠকে দলগুলোর প্রস্তাব

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “প্রশাসনিক কাঠামো এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়, তাই নির্বাচন ঘোষণা এখনই সম্ভব নয়। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হলে তা সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হবে।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, “চলমান বিচার দ্রুত দৃশ্যমান করতে হবে। যেসব সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলো এখনই করা হোক। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে।”

জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন। তবে আমরা বলেছি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত।”

ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, “আমরা বলেছি, আপনার কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। এজন্য প্রশাসনকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করাতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, “সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকায় রাজনৈতিক দল ও বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তিনি (ইউনূস) বারবার বলেছেন, ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, একদিনও বাইরে যাবে না।

ইসলামি দলগুলোর অবস্থান

জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, “আমরা তাকে বলেছি, জাতি আপনাকে অনেক আশা নিয়ে এনেছে। আপনি ধৈর্য হারাবেন না, আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।”

ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রভাব ফেলবে। আমরা বলেছি, স্থানীয় নির্বাচনেও যেন কালো টাকার প্রভাব না থাকে।”

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি ৩০ জুন ২০২৬ এর পরে এক ঘণ্টাও ক্ষমতায় থাকবেন না।

রাখাইন করিডোর ইস্যু

গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর বলেন, “আমরা করিডোর ইস্যুতে সরকারের বর্তমান সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।”

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা সবকিছু পারব এমন ধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।”

মামুনুল হক আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন, দেশবিরোধী কোনো কার্যক্রম তাঁর দ্বারা সংঘটিত হবে না। করিডোর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

সরকার ও ইউনূসের অবস্থান

বিভিন্ন পক্ষ থেকে ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, মার্চ এমনকি জুনের প্রস্তাব আসলেও সরকার জানিয়েছে, ৩০ জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জোর দাবি জানায়। এনসিপি দাবি তুলেছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচন বাতিলের।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “সব দলই স্যারকে সমর্থন জানিয়েছে। সবাই সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কার্যক্রমে সরকারের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “স্যার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এটি নিয়ে কেউ সন্দেহ করবেন না। তিনি এক কথার মানুষ। যখন সময় হবে, রোডম্যাপ ও সময়সূচি ঘোষণা করবেন।”

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আমরা বড় ধরনের একটি রাজনৈতিক যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তারা দেশ অস্থিতিশীল করার নানা চেষ্টা করছে। এর থেকে মুক্তির জন্য ঐক্যমতের প্রয়োজন।”

বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যান্য নেতা

প্রথম দফার বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমেদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, বাসদের সাবেক আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া ও জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

দ্বিতীয় দফায় অংশ নেন ইসলামি বক্তা সাদিকুর রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, হেফাজতে ইসলামের আজিজুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।