ঢাকা ০৫:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

যুদ্ধের শঙ্কা : শস্য মজুদ করছে সুইডেন

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:২১:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / 134

যুদ্ধের শঙ্কায় খাদ্য মজুদ করবে সুইডেন

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের শঙ্কা বা বড় ধরনের সংকট দেখা দিলে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা মাথায় রেখে প্রথমবারের মতো জরুরি শস্য মজুদ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সুইডেন।

সুইডেনের কৃষি বোর্ডের হিসাবে, দেশটির ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ তিন মাস পর্যন্ত কেবল শস্যভিত্তিক খাদ্যে বেঁচে থাকতে পারবেন, এতে কোনো পুষ্টিহীনতা দেখা দেবে না।

সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দেশটির সরকার জানায়— ২০২৬ সালের বাজেটে এ উদ্যোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ক্রোনা (প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার)।

সরকারের মতে, উত্তর সুইডেন এমন এক অঞ্চল যা সংঘাতের সময় সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। তাই ওই এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জরুরি খাদ্য মজুদের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বুধবার দেশটির উত্তরাঞ্চলের নরবত্তেন, ভেস্তেরবত্তেন, ভেস্তেরনোরল্যান্ড ও ইয়েমতল্যান্ড কাউন্টিতে এ বিষয়ে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

বর্তমানে ওই চারটি কাউন্টি পুরোপুরি নির্ভরশীল দক্ষিণ সুইডেন থেকে আনা শস্যের ওপর। দেশটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে প্রায় এক হাজার মাইল জুড়ে বিস্তৃত— যে কারণে সংকট বা যুদ্ধকালীন সময়ে পরিবহন বিচ্ছিন্ন হলে ওই অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

‘খাবার টেবিলে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে’

সুইডেনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী কার্ল-অস্কার বোহলিন এক বিবৃতিতে বলেন, “উত্তর সুইডেন সামরিকভাবে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তাই এখানেই প্রথম জরুরি শস্য মজুদের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে— যার মূল লক্ষ্য হলো সংকটকালেও নাগরিকদের টেবিলে খাবার পৌঁছে দেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, এ উদ্যোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক ও বেসরকারি খাত— সমাজের সব অংশকে একত্রে জাতীয় প্রতিরক্ষায় সম্পৃক্ত করা হবে, যেন যুদ্ধকালীন সময়েও মৌলিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতা অটুট থাকে।

কৃষি বোর্ডের হিসাবে, দেশটির ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ তিন মাস পর্যন্ত কেবল শস্যভিত্তিক খাদ্যে টিকে থাকতে পারবেন, তাতে কোনো পুষ্টিহীনতা হবে না।

রাশিয়া ইস্যুর পর প্রতিরক্ষা জোরদার

রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করার পর থেকেই সুইডেন তার ‘টোটাল ডিফেন্স’ বা সর্বাত্মক প্রতিরক্ষা কৌশল পুনরায় চালু করে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর সেই কৌশলে আরও নতুন ব্যবস্থা যোগ করা হয়।

দীর্ঘ দুই শতাব্দীর সামরিক নিরপেক্ষতা শেষে গত বছর ন্যাটোতে যোগ দেয় সুইডেন।

প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন চলতি বছরের জানুয়ারিতে বলেন, “সুইডেন সরাসরি যুদ্ধে নেই, কিন্তু শান্তিতেও নেই।”

তিনি আরও জানান, বাল্টিক সাগর অঞ্চল— যেখানে সুইডেন ও রাশিয়া উভয়ই অবস্থিত— বর্তমানে তথাকথিত ‘হাইব্রিড আক্রমণের’ মুখে রয়েছে।

এতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার পাশাপাশি সমুদ্রতলের যোগাযোগ তার ও কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

রুশ সাবমেরিনে নজরদারি

সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পর ন্যাটো ‘বাল্টিক সেনট্রি’ নামে একটি অভিযান শুরু করেছে, যার মাধ্যমে রাশিয়ার তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর গতিবিধি নজরদারি এবং সমুদ্রতলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষার কাজ চলছে।

বুধবার সুইডেনের সশস্ত্র বাহিনী জানায়, তারা বাল্টিক সাগরে প্রবেশ করা একটি রুশ সাবমেরিনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে পরিচালিত একটি রুটিন অভিযান,” এবং তারা “নিজেদের আশপাশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নজরে রেখেছে।”

সুইডেনের এই নতুন উদ্যোগ দেশটির প্রতিরক্ষা নীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে— যেখানে সম্ভাব্য যুদ্ধ বা অবরোধ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তাকে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সমান গুরুত্বে বিবেচনা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুদ্ধের শঙ্কা : শস্য মজুদ করছে সুইডেন

আপডেট সময় : ১১:২১:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের শঙ্কা বা বড় ধরনের সংকট দেখা দিলে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা মাথায় রেখে প্রথমবারের মতো জরুরি শস্য মজুদ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সুইডেন।

সুইডেনের কৃষি বোর্ডের হিসাবে, দেশটির ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ তিন মাস পর্যন্ত কেবল শস্যভিত্তিক খাদ্যে বেঁচে থাকতে পারবেন, এতে কোনো পুষ্টিহীনতা দেখা দেবে না।

সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দেশটির সরকার জানায়— ২০২৬ সালের বাজেটে এ উদ্যোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ক্রোনা (প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার)।

সরকারের মতে, উত্তর সুইডেন এমন এক অঞ্চল যা সংঘাতের সময় সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। তাই ওই এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জরুরি খাদ্য মজুদের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বুধবার দেশটির উত্তরাঞ্চলের নরবত্তেন, ভেস্তেরবত্তেন, ভেস্তেরনোরল্যান্ড ও ইয়েমতল্যান্ড কাউন্টিতে এ বিষয়ে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

বর্তমানে ওই চারটি কাউন্টি পুরোপুরি নির্ভরশীল দক্ষিণ সুইডেন থেকে আনা শস্যের ওপর। দেশটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে প্রায় এক হাজার মাইল জুড়ে বিস্তৃত— যে কারণে সংকট বা যুদ্ধকালীন সময়ে পরিবহন বিচ্ছিন্ন হলে ওই অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

‘খাবার টেবিলে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে’

সুইডেনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী কার্ল-অস্কার বোহলিন এক বিবৃতিতে বলেন, “উত্তর সুইডেন সামরিকভাবে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তাই এখানেই প্রথম জরুরি শস্য মজুদের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে— যার মূল লক্ষ্য হলো সংকটকালেও নাগরিকদের টেবিলে খাবার পৌঁছে দেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, এ উদ্যোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক ও বেসরকারি খাত— সমাজের সব অংশকে একত্রে জাতীয় প্রতিরক্ষায় সম্পৃক্ত করা হবে, যেন যুদ্ধকালীন সময়েও মৌলিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতা অটুট থাকে।

কৃষি বোর্ডের হিসাবে, দেশটির ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ তিন মাস পর্যন্ত কেবল শস্যভিত্তিক খাদ্যে টিকে থাকতে পারবেন, তাতে কোনো পুষ্টিহীনতা হবে না।

রাশিয়া ইস্যুর পর প্রতিরক্ষা জোরদার

রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করার পর থেকেই সুইডেন তার ‘টোটাল ডিফেন্স’ বা সর্বাত্মক প্রতিরক্ষা কৌশল পুনরায় চালু করে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর সেই কৌশলে আরও নতুন ব্যবস্থা যোগ করা হয়।

দীর্ঘ দুই শতাব্দীর সামরিক নিরপেক্ষতা শেষে গত বছর ন্যাটোতে যোগ দেয় সুইডেন।

প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন চলতি বছরের জানুয়ারিতে বলেন, “সুইডেন সরাসরি যুদ্ধে নেই, কিন্তু শান্তিতেও নেই।”

তিনি আরও জানান, বাল্টিক সাগর অঞ্চল— যেখানে সুইডেন ও রাশিয়া উভয়ই অবস্থিত— বর্তমানে তথাকথিত ‘হাইব্রিড আক্রমণের’ মুখে রয়েছে।

এতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার পাশাপাশি সমুদ্রতলের যোগাযোগ তার ও কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

রুশ সাবমেরিনে নজরদারি

সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পর ন্যাটো ‘বাল্টিক সেনট্রি’ নামে একটি অভিযান শুরু করেছে, যার মাধ্যমে রাশিয়ার তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর গতিবিধি নজরদারি এবং সমুদ্রতলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষার কাজ চলছে।

বুধবার সুইডেনের সশস্ত্র বাহিনী জানায়, তারা বাল্টিক সাগরে প্রবেশ করা একটি রুশ সাবমেরিনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে পরিচালিত একটি রুটিন অভিযান,” এবং তারা “নিজেদের আশপাশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নজরে রেখেছে।”

সুইডেনের এই নতুন উদ্যোগ দেশটির প্রতিরক্ষা নীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে— যেখানে সম্ভাব্য যুদ্ধ বা অবরোধ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তাকে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সমান গুরুত্বে বিবেচনা করা হচ্ছে।