যুক্তরাষ্ট্রে বসে পারমাণবিক হুমকি পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের— ‘অর্ধেক দুনিয়া সঙ্গে নিয়ে যাবো’
- আপডেট সময় : ০৩:১২:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / 92
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে প্রকাশ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির।
শনিবার রাতে ফ্লোরিডার টাম্পায় এক নৈশভোজে, সদ্য পাওয়া ফিল্ড মার্শাল উপাধির পর মুনির বলেন — ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে যদি পাকিস্তান অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, তাহলে তারা “অর্ধেক দুনিয়া সঙ্গে নিয়ে” যাবে। “আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আমরা যদি মনে করি আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি, তবে অর্ধেক দুনিয়াকেও সঙ্গে নিয়ে যাবো।”
এনডিটিভি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসে তৃতীয় কোনো দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
এই মন্তব্যটি মুনিরের সৌজন্যে আয়োজিত ডিনারে করা হয়, যার আয়োজক ছিলেন টাম্পার অনারারি কনসাল ও ব্যবসায়ী আদনান আসাদ।
পানি ও ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি
সিন্ধু নদে ভারতের নির্মিত যেকোনো বাঁধ বা অবকাঠামো পাকিস্তানের পানি সরবরাহে বাধা দিলে সেটি ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকিও দেন মুনির। বলেন, পাকিস্তানের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় পাকিস্তানের ২৫ কোটি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “ভারত বাঁধ বানানো পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। বানানো হলে সেখানে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র মেরে সেটি ধ্বংস করবো। সিন্ধু নদ ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতি নেই।”
যুক্তরাষ্ট্র সফর ও অন্যান্য বক্তব্য
গত দুই মাসে এটি মুনিরের দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র সফর। এর আগে জুনে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে লাঞ্চ করেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ফ্লোরিডার অনুষ্ঠানেও একই প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।
শনিবারের ওই নৈশভোজে প্রায় ১২০ জন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মোবাইল বা কোনো ডিজিটাল ডিভাইস নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীরও একজন প্রতিনিধি ছিলেন।
মুনির বক্তৃতায় মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘর্ষ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং ভারতের ক্ষয়ক্ষতি প্রকাশ না করার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “ভারতের উচিত ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করা। খেলোয়াড়ি মনোভাব একটি গুণ। তারা স্বীকার করলে আমরাও নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানাবো।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারত আবার হামলা চালালে পাকিস্তান অতীতের চেয়ে কঠোর জবাব দেবে — “আমরা ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করবো, যেখানে তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, এরপর পশ্চিমে অগ্রসর হবো।”
তুলনা ও রাজনৈতিক ইঙ্গিত
গোঁড়া রক্ষণশীল মুনির পাকিস্তানের প্রথম সেনাপ্রধান, যিনি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বোঝাতে গিয়ে তিনি উদাহরণ দেন — “ভারত মার্সিডিজের মতো চকচকে, হাইওয়েতে আসছে ফেরারির মতো গতিতে; আর আমরা পাথর বোঝাই ভারী ট্রাক। যদি ট্রাক ওই গাড়িকে ধাক্কা মারে, কার ক্ষতি হবে?”
মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের পর ফিল্ড মার্শাল খেতাব পাওয়া মুনিরকে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনা হচ্ছে। শনিবারের অনুষ্ঠানে তিনি রাজনীতিতেও সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ থাকা উচিত বলে ইঙ্গিত দেন — “অনেকে বলে, যুদ্ধ এত গুরুত্বপূর্ণ যে শুধু জেনারেলদের হাতে রাখা ঠিক নয়। তাহলে রাজনীতিওতো গুরুত্বপূর্ণ — সেটিও কেবল রাজনীতিকদের হাতে থাকা উচিত নয়।”


















