মানুষ বলছেন ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন : সাক্ষাৎকারে ইউনূস
- আপডেট সময় : ০২:১৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 174
নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘ সময় লাগা নিয়ে ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসানের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এমন মানুষও রয়েছেন, যারা বলছেন আপনি ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন। সুতরাং, মানুষ নানা ধরনের কথাই বলে। তারা বলে নির্বাচনের দরকার কী? কার নির্বাচন দরকার?’
মেহেদি হাসান একজন সম্প্রচার সাংবাদিক, লেখক ও মিডিয়া কোম্পানি জেটিওর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আলজাজিরা টেলিভিশনের টক শো ‘হেড টু হেড’-এর উপস্থাপক। তাঁর শোতে বিশ্বের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের তীক্ষ্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। ড. ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার ফাঁকে মেহেদি হাসানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। জেটিওতে মূল সাক্ষাৎকারের তিন মিনিটের একটি ক্লিপ গতকাল সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রচার করা হয়।
মেহেদি হাসান: আপনার অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর ধরে ক্ষমতায়। আপনি বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে। এটা আরও পরে হওয়ার কথা ছিল। আপনি ফেব্রুয়ারিতে এগিয়ে এনেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা: ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, তাও রমজানের কারণে।
মেহেদি হাসান: আপনি সাক্ষাৎকারের শুরুতে বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখন কাজ দেখতে চায়। সমালোচকরা বলছেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। নির্বাচনের জন্য আরও ছয় মাস অপেক্ষা করা খুব দীর্ঘ। মানুষ ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। কেন আমরা এর আগে নির্বাচন করতে পারছি না? নেপালের অন্তর্বর্তী নেতা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেন বাংলাদেশে ১৮ মাস লাগছে?
প্রধান উপদেষ্টা: নিশ্চিয়ই! আপনি জানিয়েছেন, মানুষ বলছে কেন এত সময় লাগছে। আবার এমন মানুষও আছে যারা বলেন, ‘পাঁচ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন। সুতরাং, মানুষ সব ধরনের কথাই বলছে।’ তারা বলছে, ‘আপনি থাকুন। নির্বাচনের দরকার কী? নির্বাচন কার দরকার?’
মেহেদি হাসান: এমন কথা যারা বলছেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা বলেন, কেন আমরা তাড়াতাড়ি নির্বাচন করতে পারছি না? এই বিলম্ব কীসের জন্য?
প্রধান উপদেষ্টা: যখন তারা এই কথা বলে, তখন তা গণতন্ত্র নিয়ে নয়, সুশাসন নিয়ে কথা বলে। আমরা দুর্নীতিমুক্ত শাসন দেখতে চাই। সে জন্যই তারা বলে, আপনি থাকুন! কারণ নির্বাচনের পর আমরা বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে চাই না। আপনি এক ধরনের মতামত তুলে ধরেছেন, আমিও আরেক ধরনের মতামত তুলে ধরলাম। কোনটি বেশি শক্তিশালী?
মেহেদি হাসান: কিন্তু আপনি কি আজ বলবেন, নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে এত সময় লাগার কারণ কী?
প্রধান উপদেষ্টা: আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা কতদিন থাকব তা কেউ নির্ধারণ করে দেয়নি। আমরা কতদিন থাকব সে সিদ্ধান্ত আমাদের। তবে আমাদের তিনটি কাজ করতে হবে। একটি হলো সংস্কার, একটি বিচার এবং শেষটি নির্বাচন। আমরা সংস্কারের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি। এটি একটি বিরাট এজেন্ডা। আপনি যদি শুধু নির্বাচন করেন, তবে সেই পুরোনো বিষয় আবার ঘটবে। কারণ আইন, নিয়ম, পদ্ধতি একই রয়ে গেছে। তাই ছাত্রদের নেতৃত্বে জনগণের একটি দাবি হলো সংস্কার করা। সুতরাং, আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, ফ্যাসিবাদের সব শিকড় উপড়ে ফেলা হয়েছে, যাতে ভিন্ন ধরনের কাঠামো তৈরি হয়; যাতে আগের মতো সরকার আবার ফিরে আসতে না পারে। সেটাই আমাদের এজেন্ডা।
মেহেদি হাসান: কিন্তু আপনি কি এই যুক্তিটি বোঝেন, যেহেতু আপনারা অন্তর্বর্তী সরকার, তাই আপনাদের ন্যূনতম মৌলিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত এবং বড় সিদ্ধান্তগুলো একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে নেওয়া উচিত?
প্রধান উপদেষ্টা: এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। আমরা শুধু বলেছি, তিনটি কাজ আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটা করব।
এখন ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভুয়া খবর
এই সাক্ষাৎকারের একটি অংশ বাংলাদেশে প্রচার করেছে সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস।
বাসসের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনের সময় হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ নাকচ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুবিদ্বেষী সহিংসতা নেই।
হিন্দুদের ওপর নির্যাতন–নিপীড়নের অভিযোগ নাকচ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এখন ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভুয়া খবর।
২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তাকে বেছে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত মানুষ নিয়েছিল, সে সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি বিস্মিত হয়েছিলাম।’ ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও তা মেনে নিয়েছিলেন’ তিনি। সে সময় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা যদি এত কিছু ত্যাগ করতে পারেন, তবে আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাব।’
সাক্ষাৎকারে আরও কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস। এর মধ্যে ছিল জাতীয় নির্বাচন দেরি হওয়ার যৌক্তিকতা, রোহিঙ্গা সংকট ও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়।


















