ঢাকা ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • / 171
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শেখ হাসিনা প্রশাসনের পতনের পর গঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার রক্ষায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

২০২৫ সালের ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের নির্যাতন ও ভয় অনেকটাই হ্রাস পেলেও, বর্তমান সরকার বিরোধী দল দমন করছে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেনি।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে যারা এক বছর আগে জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের অধিকারভিত্তিক গণতন্ত্রের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি।”

“ইউনুসের সরকার যেন এক ধরনের অচলাবস্থায় পড়ে আছে। সংস্কারবিহীন নিরাপত্তা বাহিনী, সহিংস ধর্মীয় চরমপন্থী এবং প্রতিশোধপরায়ণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাতেই যেন সরকার ব্যস্ত।”

২০২৪ সালে ক্ষমতায় এসে সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও, জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি সংগঠনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার এখনো কঠিন সংকটে রয়েছে— গণপিটুনি, রাজনৈতিক সহিংসতা, সাংবাদিক নিপীড়ন, নারীদের ওপর চরমপন্থীদের হামলা, এলজিবিটি জনগোষ্ঠীর প্রতি হুমকির মতো সমস্যা বিদ্যমান।

এইচআরডব্লিউ জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ১,৪০০ জন। এরপর তিনি ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন এবং ৮ আগস্ট ইউনুসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি।

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির সভায় সংঘর্ষে নিহত হন ৫ জন। পুলিশ পরে ৮,৪০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে, যাদের অধিকাংশের নাম উল্লেখই করা হয়নি।

৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ৯২,৪৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। গ্রেপ্তার হন প্রায় ৪০০ সাবেক এমপি ও মন্ত্রীসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে ৬৮টি হত্যা মামলা। অনেক মামলায় তিনি ঘটনার সময় বিদেশে থাকলেও চার্জশিট দেওয়া হয়নি।

রাজনৈতিক নেতাদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে জামিন ও চিকিৎসার অধিকার আটকে রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ৩ আগস্ট থেকে তার বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তবে বহু মামলায় এখনো কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

সরকার পুরনো “স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট” ব্যবহার করে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। ফেব্রুয়ারির “অপারেশন ডেভিল হান্ট”-এ আটক হয় ৮,৬০০ জন।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি খুবই সীমিত। মাত্র ৬০ জন পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন, যদিও বহু ইউনিট অভিযানে অংশ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে র‍্যাব।

২৭ আগস্ট সরকার গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে এবং আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সনদে সই করে। কমিশন জানিয়েছে, তারা ১,৮০০ অভিযোগ পেয়েছে, তবে নিরাপত্তা বাহিনী প্রমাণ গোপন করছে এবং তদন্তে সহায়তা করছে না।

পুলিশ, বিচারব্যবস্থা ও নারী অধিকার নিয়ে সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও ১১টি সংস্কার কমিশনের কোনো সুপারিশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, র‍্যাব বিলুপ্তি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা বাহিনীর জবাবদিহি, নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করে এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

শেখ হাসিনা প্রশাসনের পতনের পর গঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার রক্ষায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

২০২৫ সালের ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের নির্যাতন ও ভয় অনেকটাই হ্রাস পেলেও, বর্তমান সরকার বিরোধী দল দমন করছে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেনি।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে যারা এক বছর আগে জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের অধিকারভিত্তিক গণতন্ত্রের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি।”

“ইউনুসের সরকার যেন এক ধরনের অচলাবস্থায় পড়ে আছে। সংস্কারবিহীন নিরাপত্তা বাহিনী, সহিংস ধর্মীয় চরমপন্থী এবং প্রতিশোধপরায়ণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাতেই যেন সরকার ব্যস্ত।”

২০২৪ সালে ক্ষমতায় এসে সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও, জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি সংগঠনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার এখনো কঠিন সংকটে রয়েছে— গণপিটুনি, রাজনৈতিক সহিংসতা, সাংবাদিক নিপীড়ন, নারীদের ওপর চরমপন্থীদের হামলা, এলজিবিটি জনগোষ্ঠীর প্রতি হুমকির মতো সমস্যা বিদ্যমান।

এইচআরডব্লিউ জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ১,৪০০ জন। এরপর তিনি ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন এবং ৮ আগস্ট ইউনুসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি।

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির সভায় সংঘর্ষে নিহত হন ৫ জন। পুলিশ পরে ৮,৪০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে, যাদের অধিকাংশের নাম উল্লেখই করা হয়নি।

৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ৯২,৪৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। গ্রেপ্তার হন প্রায় ৪০০ সাবেক এমপি ও মন্ত্রীসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে ৬৮টি হত্যা মামলা। অনেক মামলায় তিনি ঘটনার সময় বিদেশে থাকলেও চার্জশিট দেওয়া হয়নি।

রাজনৈতিক নেতাদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে জামিন ও চিকিৎসার অধিকার আটকে রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ৩ আগস্ট থেকে তার বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তবে বহু মামলায় এখনো কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

সরকার পুরনো “স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট” ব্যবহার করে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। ফেব্রুয়ারির “অপারেশন ডেভিল হান্ট”-এ আটক হয় ৮,৬০০ জন।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি খুবই সীমিত। মাত্র ৬০ জন পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন, যদিও বহু ইউনিট অভিযানে অংশ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে র‍্যাব।

২৭ আগস্ট সরকার গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে এবং আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সনদে সই করে। কমিশন জানিয়েছে, তারা ১,৮০০ অভিযোগ পেয়েছে, তবে নিরাপত্তা বাহিনী প্রমাণ গোপন করছে এবং তদন্তে সহায়তা করছে না।

পুলিশ, বিচারব্যবস্থা ও নারী অধিকার নিয়ে সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও ১১টি সংস্কার কমিশনের কোনো সুপারিশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, র‍্যাব বিলুপ্তি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা বাহিনীর জবাবদিহি, নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করে এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে।